নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
হি-হি কাঁপুনির জায়গায় এই মাঝ-পৌষে অকাল-গরমের অস্বস্তি। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই। বিহার, ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, ঝাড়খণ্ডেও। কারণ কী? বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঘূর্ণিঝড় শুধু বাংলার নয়, শীত কেড়ে নিয়েছে কার্যত গোটা পূর্ব ভারতেরই।
এই সে-দিন পর্যন্ত গোটা বিহার শৈত্যপ্রবাহে প্রায় কুঁকড়ে ছিল। পটনায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। সেই শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার ছিল ১১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর এবং ঝাড়খণ্ডের জামশেদপুর থেকেও শীত বেমালুম উধাও। সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। আর ওড়িশার উপকূলবর্তী এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেখানে এখন রীতিমতো গরম। বাংলার পর্যটকদের সাধের পুরীতে মোলায়েম শীতের বদলে এখন অসময়ের ঘেমো অসোয়াস্তি।
উষ্ণতায় পিছিয়ে নেই কলকাতাও। মহানগরীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিনও ১৭ ডিগ্রির মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে। গরম জামা পরে কিছুটা হাঁটলেই ঘাম বেরিয়ে যাচ্ছে। রাতে অস্বস্তিকর আবহাওয়া। উপগ্রহ-চিত্র আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে যে-খবর দিচ্ছে, তাতে চলতি বছরে আর কলকাতায় শীত ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। এমনকী বঙ্গোপসাগরের প্রবল ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে যাওয়ার পরেও। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ, শুক্রবার ভোরে ওই প্রবল ঘূর্ণিঝড় পুদুচেরির কাছাকাছি কোথাও তামিলনাড়ু উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকে পড়বে। কিন্তু তার পরেও পূর্ব ভারতের আকাশ পরিষ্কার হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন না আবহবিদেরা। আর মেঘ না-কাটলে শীতের প্রত্যাবর্তন সম্ভব নয়।
কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের স্থল-প্রবেশের পরেও আকাশ সাফ হবে না কেন?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে পড়ার পরেও তার প্রভাব পরবর্তী কয়েক দিন থেকেই যাবে। ওই ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে কোন দিকে সরবে, আবহাওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি নির্ভর করবে তার উপরেই। এই অবস্থায় আগামী তিন দিন আকাশ পরিষ্কার হওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না বলে জানান গোকুলবাবু।
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, ওই ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল হয়ে গেলেও তার প্রভাব থাকবে অন্তত দু’দিন। তার ফলে আকাশে মেঘ থাকবেই।
আর ঘূর্ণিঝড় স্থলভূমিতে ঢুকে যদি শক্তি না-কমায় এবং দ্রুত স্থান পরিবর্তন না-করে, তা হলে আকাশ পরিষ্কার হওয়ার জন্য আরও বেশ কিছু দিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। আগামী দু’দিনও কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬-১৭ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করবে বলে জানান আবহবিদেরা।
তবে এ বছর না-হোক, নতুন বছরে শীতের সম্ভাবনা আছে বলে আশ্বাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কেটে আকাশ পরিষ্কার হলেই যে শীত ফিরে আসবে, আবহবিদেরা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত। তাঁরা বলছেন, পঞ্জাব, রাজস্থান, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের কাছাকাছি। উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহার হয়ে কনকনে ঠান্ডা উত্তুরে হাওয়া ঢোকে দক্ষিণবঙ্গে। লখনউয়ে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি কম। মেঘ কেটে গেলে উত্তরপ্রদেশের ওই ঠান্ডা হাওয়ার স্বাভাবিক প্রবাহে আর কোনও বাধা থাকবে না। বাংলাতেও শীত ফিরবে সেই হাওয়ার হাত ধরে।
অগত্যা সেই হাওয়া কবে ফের ঢুকবে, তার প্রতীক্ষায় দিন গুনতে শুরু করেছে গোটা পূর্ব ভারতই।
|
পারদের উত্থান |
শহর |
সর্বনিম্ন* |
কলকাতা |
১৭.৩ (+৩) |
ভুবনেশ্বর |
২০.৪ (+৫) |
পটনা |
১১.৩ (+৩) |
জামশেদপুর |
১২.০ (+০) |
রায়পুর |
১৫.৫ (+৪) |
* তাপমাত্রা, ডিগ্রি সেলসিয়াসে |
|