নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুলিশকেও রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করতে কলকাতা এবং রাজ্য পুলিশের সমস্ত অ্যাসোসিয়েশন ও সমিতির স্বীকৃতি বাতিল করতে চলেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। আজ, শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভায় এই মর্মে প্রস্তাব পেশ করা হবে অনুমোদনের জন্য।
প্রস্তাবটিতে রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের পরিবর্তে সাধারণ পুলিশকর্মীদের সুবিধে-অসুবিধে দেখার জন্য ‘পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ জন্য রাজ্য পুলিশ, জেলা পুলিশ, কলকাতা পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের সমস্ত বিভাগে আলাদা আলাদা পর্ষদ চালু হবে। প্রতি পর্ষদের মাথায় থাকবেন শীর্ষস্তরের পুলিশ-কর্তারা। পর্ষদে অধস্তন পুলিশকর্মীদের সমস্ত স্তরের নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রতিনিধি রাখার প্রস্তাবও রয়েছে।
অভিযোগ, বাম আমলে ‘সরকারপন্থী’ পুলিশ সংগঠনের প্রতিপত্তি ছিল সর্বত্র। বদলি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অভাব-অভিযোগ নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার দায়িত্বও তারা। এ-ও অভিযোগ, কংগ্রেস প্রভাবিত একটি সংগঠন থাকলেও মূলত বাম প্রভাবিত ইউনিয়নগুলোই ছড়ি ঘোরাতো। তাদের সদস্য না হলে আটকে যেত পোস্টিং, পদোন্নতি।
এবং এরই প্রক্ষিতে নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় পেশ হতে চলা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশকর্মীদের পক্ষে কল্যাণকর বিষয়গুলো এত দিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে পদ্ধতি ছিল, তা লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তাই চিকিৎসার সুযোগ, অবসরকালীন সুবিধা, আবাসনের সমস্যা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং পুলিশকর্মীদের পোষ্যদের যথাযথ তালিম দিয়ে যোগ্য করে তোলার কাজগুলো ঠিকমতো সম্পন্ন করতে পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাম আমলের ‘সরকারপন্থী’ বিভিন্ন সংগঠনের কর্তারা অবশ্য এখনও সংশয়ে। রাজ্য পুলিশের সিপিএম-প্রভাবিত নন-গেজেটেড পুলিশ কর্মচারী সমিতির সভাপতি সমীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “পুলিশকর্মী সংগঠনগুলো পুলিশের স্বার্থ দেখার পাশাপাশি প্রশাসনকে সাহায্য করত। সরকারি নির্দেশ মোতাবেক একটি যুগ্ম কমিটির মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী, শীর্ষ আমলারা ও সংগঠনের নেতারা এক সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করতেন। নতুন ব্যবস্থায় কী ভাবে কাজ হবে, তা স্পষ্ট নয়।” বাম-প্রভাবিত কলকাতা পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অরিনিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, “নতুন ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ছুঁৎমার্গ নেই। তবে সাধারণ পুলিশকর্মীদের একটানা ডিউটি করতে হয়। রোজকার দায়িত্ব পালনের ফাঁকে নিজেদের সমস্যা নিয়ে সরব হওয়ার সমস্যা আছে। আশা করি, সরকার তার সুরাহা করবে।” কংগ্রেস প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন আশা করে, মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের সংগঠন করার অধিকার কেড়ে নেবেন না। অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিজিতাশ্ব রাউতের মন্তব্য, “ইউনিয়ন আর অ্যাসোসিয়েশন আলাদা। এটা বুঝতে হবে।”
স্বরাষ্ট্র দফতরের প্রস্তাব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা পুলিশ দু’ক্ষেত্রেই কল্যাণ পর্ষদ হবে দ্বিস্তর। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশে রাজ্যস্তরে থাকবে একটি কল্যাণ পর্ষদ। প্রতি জেলায় থাকবে একটা করে জেলা পুলিশ কল্যাণ পর্ষদ। একই ভাবে কলকাতা পুলিশে পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে থাকবে একটি কেন্দ্রীয় পর্ষদ। সশস্ত্র পুলিশ, কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন ডিভিশন, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চ, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ, গোয়েন্দা শাখা, স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স, সিকিউরিটি কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন, পুলিশ প্রশিক্ষণ স্কুল এবং সদর দফতর বাহিনী প্রতিটিতে থাকবে ইউনিট স্তরের কল্যাণ পর্ষদ।
সরকারি প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের মূল কল্যাণ পর্ষদ দু’টি তিন মাসে এক বার বৈঠকে বসবে। জেলাস্তর ও কলকাতার বিভিন্ন ইউনিটের পর্ষদগুলোর বৈঠক হবে মাসে এক বার। |