ম্যাচিং গ্রান্ট নিয়ে প্রশ্ন প্রশাসনে
কর বাদ, আয়ের ‘নয়া উৎস’ সন্ধানের প্রস্তাবে বিভ্রান্তি
ক দিকে কোষাগারে টানাটানি। অন্য দিকে কর না-বাড়ানোর মনোভাব। এরই মধ্যে রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদের কিছু সদস্যের একাধিক সুপারিশ ঘিরে সংশয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে প্রশাসনে।
কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা পেতে যাতে অসুবিধে না-হয়, সে জন্য ‘দীর্ঘমেয়াদি’ ও ‘সুনির্দিষ্ট’ প্রকল্প-প্রস্তাব তৈরির সুপারিশ করেছেন পর্ষদের সদস্যদের একাংশ। কিন্তু প্রকল্পগুলোয় রাজ্যের দেয় অংশের (ম্যাচিং গ্রান্ট) সংস্থান না-হলে শুধু এই পথে সমস্যা মিটবে কি না, তা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারাই সংশয়ে। তাঁদের অনেকের বক্তব্য: বাড়তি কর না-এলে রাজস্ব বাড়বে না। আর রাজস্ব না-বাড়লে ম্যাচিং গ্রান্টের টাকা জোগাড় করা কঠিন। তাই কর না-বাড়িয়ে এমন সুপারিশ করাটা কার্যত অর্থহীন বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন তাঁরা।
নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে রাজ্য পরিকল্পনা পর্ষদের খোলনলচে বদলে ফেলেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে নতুন যে পর্ষদ গড়া হয়েছে, গত সাত মাসে তার বৈঠক হয়েছে দু’টো। সেখানেই এই সুপারিশ উঠে এসেছে। যার বক্তব্য: দিল্লি ফি বছর বহু কোটি টাকা রাজ্যের জন্য বরাদ্দ করলেও কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা মেনে রাজ্য সব সময়ে তার সুযোগ নিতে পারছে না। একটা কারণ অবশ্যই ‘ম্যাচিং গ্রান্ট’ দিতে না-পারা। অন্য কারণ, দফতরগুলোর গাফিলতি ও গয়ংগচ্ছ মনোভাব। তাই ওঁরা চাইছেন, এমন ভাবে প্রকল্প-প্রস্তাব তৈরি হোক, যাতে কেন্দ্রীয় অনুদান পেতে সমস্যা না-হয়। প্রকল্পের অভিমুখ হওয়া উচিত দীর্ঘমেয়াদি। আগামী এপ্রিলে নতুন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু হচ্ছে। তাই ‘ভাল করে, সুনির্দিষ্ট ভাবে’ প্রকল্প-প্রস্তাব প্রণয়নে জোর দিয়েছেন পরিকল্পনা পর্ষদের ওই সদস্যেরা।
এ হেন পরামর্শ শুনেই বিস্মিত প্রশাসনিক কর্তাদের অনেকে। যাঁদের বক্তব্য: প্রতিটি দফতর বিস্তারিত প্রকল্প তৈরি করে। সরকারের অগ্রাধিকার অনুযায়ী সেগুলোর খরচের একটা অংশ রাজ্য জোগায়। বাকিটা কেন্দ্রের কাছে চাওয়া হয়। প্রস্তাব খতিয়ে দেখে অর্থ মঞ্জুর করে দিল্লি। স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দু’ধরনের প্রকল্প-প্রস্তাবই পাঠানো হয়। তা হলে প্রস্তাব তৈরির ক্ষেত্রে নতুন ভাবে আর কী করার থাকতে পারে, সে প্রশ্ন তুলেছেন ওই আমলারা। ওঁদের দাবি, ম্যাচিং গ্রান্টের টাকার সংস্থান করাটাই মূল সমস্যা। কর না-বাড়ালে যা প্রায় অসম্ভব।
এবং এই সমস্যার সুরাহায় কর বসানোর বদলে আয়ের ‘নতুন উৎস’ সন্ধানে জোর দিয়েছেন পর্ষদের সংশ্লিষ্ট সদস্যেরা। তাঁদের ব্যাখ্যা: দু’টো কারণে এখন কর আদায় কম হচ্ছে। প্রথমত, বর্তমান কর-কাঠামোতেই কোন ধরনের করের আওতা কারা আছেন (ট্যাক্স নেট), তার ছবি পরিষ্কার নয়। এটা ‘আপ-টু-ডেট’ করতে হবে। দ্বিতীয়ত, করের আওতায় আরও বেশি মানুষকে আনতে হবে। তাঁদের মতে, রাজ্যে বহু মানুষ ও সংস্থা কোনও কর দেন না। অনেকে আদৌ জানেনই না যে, কর দিতে হয়! অথচ এঁরা কোনও না কোনও করের আওতায় পড়ছেন। তাই নতুন কর আরোপ কিংবা করের হারবৃদ্ধির পরিবর্তে বরং এ ধরনের বিভিন্ন ‘ফেলে রাখা উৎস’ (নভেল সোর্স) ব্যবহার করে রাজস্ব বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা।
প্রশাসনের কর্তাদের মত কী?
‘নভেল সোর্স’-এর কথা শুনে তাঁরা আরও বিভ্রান্ত। ওঁদের একাংশ বলছেন, “সন্দেহ নেই, কর আদায়ের পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে পারলে রাজস্ব আদায় কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাতে কতটুকু বাড়তি আয় হবে?” তাঁদের যুক্তি, রাজস্ব আসে দুই পথে কর মারফত (ট্যাক্স রেভেনিউ), এবং কর ব্যতীত অন্যান্য সূত্র মারফত (নন-ট্যাক্স রেভেনিউ)। অথচ সরকারের সিদ্ধান্ত হল, নতুন কর বসানো হবে না, বিদ্যুৎ-মাসুল বাড়বে না, জলকর-সহ কোনও পরিষেবা কর নেওয়া হবে না। আবার টোল কিংবা ভাড়ার অনুষ্ঠানবাড়ি থেকে ‘ফি’ আদায়ের মতো বিভিন্ন উপায়ে ‘নন-ট্যাক্স রেভেনিউ’ বাড়ানোর উদ্যোগেও ঘাটতি রয়েছে যথেষ্ট।
এই পরিস্থিতিতে রাজস্ববৃদ্ধির জন্য ‘নভেল সোর্স’-এর ভরসায় থাকলে আসল প্রয়োজন কতটা মিটবে, সেই প্রশ্নও তুলছে প্রশাসনিক মহলের একাংশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.