পিচ উঠে গিয়ে পাথর পেরিয়ে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে রাস্তা। সেই রাস্তার উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়েই চলছে যানবাহন। রানিবাঁধ থেকে হলুদকানালি হয়ে বারিকুল যাওয়ার রাস্তার ছবিটা এমনই। বাঁকুড়ার মাওবাদী উপদ্রুত এলাকার গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার হতশ্রী দশায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা। অবিলম্বে তাঁরা জেলা পরিষদের এই রাস্তাটি মেরামতির দাবি জানিয়েছেন। জেলা পরিষদের সভাধিপতি পার্থপ্রতিম মজুমদার বলেন, “রাস্তাটির বেহাল অংশ সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শীঘ্রই সংস্কারের কাজ শুরু করা হচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রানিবাঁধ থেকে বারিকুল পর্যন্ত প্রায় ১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাস্তা। তার মধ্যে প্রায় আট কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা বেশ খারাপ। কোথাও রাস্তাজুড়ে গর্ত। কোথাও রাস্তা থেকে পিচ উঠে গিয়ে বোল্ডার বেরিয়ে পড়েছে। আবার কোনও কোনও জায়গায় রাস্তার ধারের মোরাম জলের তোড়ে ধুয়ে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে। এ বার বর্ষর পরে ওই রাস্তার অবস্থা আরও শোচনীয় পড়ে পড়েছে। শীত চলে এলেও রাস্তা সংস্কার হয়নি। |
রানিবাঁধ থেকে হলুদকানালি, বারিকুল হয়ে ফুলকুসমার উপর দিয়ে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার সোজা রাস্তা এটাই। রানিবাঁধ ব্লকের হলুদকানালি, কদমাগড়, ধনপুরা, দুবরাজপুর, কতরো, খেজুরখেন্যা-সহ প্রায় ৩৩টি গ্রামের ২৫ হাজার মানুষ এই রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়াত করেন। বেশ কিছু গাড়ি যাতায়াত করে এই রাস্তায়। মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা দিনের পর দিন এমন বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা থেকে গাড়িচালক- সকলেই। বারিকুল গ্রামের বাসিন্দা বুচিরাম সর্দার, বুচিবুড়ি গ্রামের বাসিন্দা নীলরতন মাহাতোদের ক্ষোভ, “রাস্তা খানাখন্দে ভরে গিয়েছে। প্রায় দিনই নানা প্রয়োজনে আমারা রানিবাঁধে যাই। ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা যেন নরক যন্ত্রনা হয়ে উঠেছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তার গর্তে জল জমে থাকে। বর্ষার পরেও রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।”
ওই রুটের এক ট্রেকার চালক গুরুপদ সর্দার বলেন, “হলুদকানালি থেকে কদমাগড় পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা শোচনীয়। রাস্তার গর্তে পড়ে গাড়ি হেলতে-দুলতে যায়। যাত্রী নিয়ে যাওয়ার সময় দুর্ঘটনার ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকি। প্রায় দিনই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে।” এলাকাবাসীর ক্ষোভ সমর্থন করেছেন রানিবাঁধের বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেসের সম্পাদক অলক বিশ্বাস। তাঁর দাবি, “ওই রাস্তাটি সংস্কারের জন্য প্রশাসনের কাছে বহুবার আমরা আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি।” বারিকুল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির শ্যামলী হাঁসদাও একই সুরে বলেন, “ওই রাস্তার খারাপ অবস্থা। রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় বিডিও-কে বলেছি। কিন্তু তারপরেও রাস্তা সংস্কারের কাজ এখনও শুরু হয়নি।”
রাস্তার একাংশের বেহাল দশার কথা স্বীকার করেছেন রানিবাঁধের বিডিও তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাস্তাটির কিছুটা অংশ বেশ খারাপ। ওই রাস্তাটি জেলাপরিষদের অধীন। তাই জেলাপরিষদের কাছে রাস্তা সংস্কারের জন্য লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। জেলা পরিষদ অর্থ বরাদ্দ করলে পর্যায় ক্রমে সংস্কারের কাজ শুরু করা হবে। আপাতত আংশিক মেরামতির পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।” |