একের পর এক দুর্ঘটনা এবং তার জেরে মৃত্যুও হয়েছে। অবশেষে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের মাতলা সেতুর রাস্তায় দুর্ঘটনা এড়াতে নিজের জমানো ১০ হাজার টাকায় সাদা রং দিয়ে ‘ডিভাইডার’ এঁকে দিলেন এক সাধারণ মৎস্যজীবী।
ক্যানিংয়ের আমড়াবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আক্রম লস্কর নামে বছর চল্লিশের ওই মৎস্যজীবী মাতলা নদীতে মাছ ধরে ক্যানিং বাজারে বিক্রি করে সংসার চালান। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী-পুত্র। অভাবের সংসার। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে কয়েক বছর ধরে জমিয়ে ছিলেন ১০ হাজার টাকা। মঙ্গলবার রাতে সেই টাকাতেই রং কিনে নেমে পড়েন ‘ডিভাইডার’ আঁকার কাজে। সারারাত রাত ধরে চলে কাজ। ‘ডিভাইডার’ হল দু’দিকের অ্যাপ্রোচ রোডেও।
ক্যানিং ও বাসন্তীর মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা ও ২০ ফুট চওড়া সেতুটি তৈরি করে সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর। চালু হয় এ বছরের গোড়ায়। কিন্তু প্রথম থেকেই ওই সেতুতে দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ সাধারণ মানুষের। সেতুর অধিকাংশ আলোও জ্বলে না। মূলত, রাতেই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছরে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে ওই সেতুতে। গত ১০ মাসে সেতুতেই মৃত্যু হয় চার জনের। আহত হয়েছেন বেশ কয়েক জন। |
মাতলা নদীতে মাছ ধরার সময়ে দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যুই কাছ থেকে দেখেছেন আক্রম। তখনই ঠিক করেন, দুর্ঘটনা রোধে কিছু করতে হবে। বিপরীতমুখী গাড়ি যাতে আলাদা আলাদা ‘লেন’ দিয়ে যাতায়াত করে, তার জন্য তিনি মনে করেন, সেতুর রাস্তায় ‘ডিভাইডার’ আঁকা জরুরি। এমনটাই তিনি দেখেছেন বড় শহরের রাস্তায়। সেই প্রস্তাব নিয়ে তিনি দিন কয়েক আগে দেখা করেন ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক শেখর সেনের সঙ্গে। মহকুমাশাসক তাঁকে সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।
সেই প্রতিশ্রুতি পেয়ে মহানন্দে মঙ্গলবার কাজে নামেন আক্রম। তাঁকে সাহায্য করার জন্য ছিল পুলিশও। মহকুমাশাসক আক্রমের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, “সবাই যদি এ ভাবে এগিয়ে আসে, তা হলে সমাজের প্রভূত উন্নয়ন সম্ভব। ওই সেতুতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২ জানুয়ারি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানেই নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।”আক্রমের কাজের প্রশংসা করেছেন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী শ্যামল মণ্ডলও। তবে, ওই সেতুতে দুর্ঘটনা রোধে এত দিনে কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া সে বিষয়টি খতিয়ে দেখারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এসডিপিও (ক্যানিং) পিনাকীরঞ্জন দাস বলেন, “পরিকাঠমো অনুযায়ী পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সেতুতে নজরদারি চালানো হয়। তবে ডিভাইডার এঁকে ওই ব্যক্তি যা করেছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।” তবে নিজের কাজকে বড় করে দেখতে চান না আক্রম। তাঁর কথায়, “সামর্থ্যের মধ্যে হলে সমাজের উন্নয়নের জন্য আরও কিছু করতে আমি রাজি। আমি চাই সেতুতে দুর্ঘটনা কমুক। সুশৃঙ্খল ভাবে যান চলুক।” |