এক দিকে বাড়ছে লোডশেডিং। আর তার সুযোগ নিয়ে বেড়ে চলেছে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম। সব মিলিয়ে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের জেরে ছোট ছোট কল-কারখানাগুলিতে উৎপাদন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি অন্ধকারে তালা ভেঙে লুঠপাট হচ্ছে ছোট কারখানাগুলিতে। বাদ পড়ছে না গৃহস্থের বাড়িও। ভোরের দিকে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে-সংলগ্ন অপেক্ষাকৃত ফাঁকা অঞ্চলে প্রচণ্ড কুয়াশা হওয়ায় দৃশ্যমানতা একেবারেই কমে যায়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েও দুষ্কৃতীরা লুঠপাট চালাচ্ছে।
সম্প্রতি টিটাগড় থানা এলাকার মাতারাঙ্গিতে একটি জাহাজের সরঞ্জাম তৈরির কারখানায় পিছনে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। কারখানার ভিতরে নিরাপত্তারক্ষীরা থাকলেও অন্ধকার ও কুয়াশার জন্য কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের বেঁধে ট্রাকে করে বিভিন্ন সরঞ্জাম ও কাঁচামাল তুলে নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। এর কিছু দিন আগেই রাতের অন্ধকারে বীজপুরে এক শিক্ষকের বাড়িতে ঢুকে নগদ টাকা ও গয়না নিয়ে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। একই ভাবে জগদ্দল, ঘোলা, নিমতায় লুঠপাটের ঘটনা ঘটছে।
পুলিশ জানায়, শীতকালে সকলে দরজা-জানলা বন্ধ রাখায় এবং একটু বেশি রাতে রাস্তায় লোক কমে যায়। তার সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা। ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুবজ্যোতি দে বলেন, ‘‘ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। তবে অন্ধকারে দুষ্কৃতীদের সুবিধা হয়। আমরাও চেষ্টা করছি যথাসাধ্য নজরদারি বাড়াতে।’’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘নজরদারি’ বাড়ানোর কথা বললেও এই শিল্পাঞ্চলের সব ক’টি থানাতেই মূল সমস্যা, কর্মীর অভাব। নাইট পেট্রোলিংয়ের জন্য গাড়িরও ঘাটতি আছে। কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে নিয়মিত রাত পাহারার কথা বলা হলেও গাড়ির অভাবে সব থানা লাগাতার এই টহল জারি রাখতে পারে না। ফলে, দুষ্কৃতীরা অবাধে পালাতেও পারে। গোটা শিল্পাঞ্চলটিই গঙ্গার ধার বরাবর হওয়ায় দুষ্কৃতীরা গঙ্গা পেরিয়েও সহজে পালিয়ে যেতে পারে। এক সময়ে শিল্পাঞ্চলে ‘রিভার ট্র্যাফিক’ পুলিশের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হলেও তা পরিকল্পনার স্তরেই থেকে গিয়েছে। গঙ্গার ধারের ফেরি ঘাটগুলি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। সন্ধ্যার পর থেকে এই সব জায়গায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম বাড়ে বলে অভিযোগ। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ, গত রবিবারের ঘটনা। ওই রাতে খড়দহ বাবুঘাটে দু’দল সমাজবিরোধীর মধ্যে বোমাবাজির পরে এক দল ঘাট পেরিয়ে পালিয়ে যায়। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব কমাতে ঘাটগুলিতে নজরদারি বাড়ানো আশু প্রয়োজন। যদিও সে ক্ষেত্রেও একই সমস্যা, পুলিশ কর্মী কম। ব্যারাকপুর কমিশনারেট হলে এই সমস্যা কাটবে বলে আশা করছেন পুলিশ কর্মীদের একাংশ। |