বিরজু মহারাজ। শাস্ত্রীয় নৃত্যের এই দিকপালকে ঘিরে উজ্জ্বল হয়ে উঠছে বহরমপুরের বর্ষশেষ। মঙ্গলবার রাতে শহরে এসেছেন বিরজু মহারাজ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুর ক্লাবে তিনি যখন নৃত্যশিক্ষার ক্লাসে ব্যস্ত, তখন সঙ্গীতগুরু অজয় চক্রবর্তীও আসেন শহরে। এক জন নৃত্যে, অন্য জন সঙ্গীতেএই দুই গুরুর যুগলবন্দি আগে কখনও বহরমপুর দেখেনি। সব মিলিয়ে নাচের বোল-এর সঙ্গে ধ্রুপদী সঙ্গীতের মিশেলে শহরে এখন উষ্ণতার ছোঁয়া। বিশেষ করে সরগরম রবীন্দ্রসঙ্গীত চত্বর!
বিরজু মহারাজ আসায় দেশবিদেশ থেকে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষার্থী শিল্পীদের বহরমপুরে জড়ো হয়েছেন। নৃত্যাঙ্গনের কর্ণধার তথা বিরজু মহারাজের শিক্ষার্থী পারমিতা মৈত্রের কথায়, “এখানকার মানুষের আন্তরিকতা ও ভালবাসার টানে মহারাজজী নৃত্য উৎসব উপলক্ষে বহরমপুরে আসেন। বহরমপুর শহরের প্রতি তাঁর ভাল লাগার কথা মহারাজজী সকলকে বলেন।” |
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিরজু মহারাজ। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
কলকাতা থেকে ভাগীরথী এক্সপ্রেসে তিনি গত মঙ্গলবার রাতে বহরমপুর স্টেশনে এসে নামেন। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় বহরমপুর সার্কিট হাউসে। সেখানেই তিনি রয়েছেন। পারমিতাদেবী বলেন, “মহারাজজী নিরামিষ খাবার খান। ফলে দুপুর ও রাতের খাবার আমার বাড়িতে থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি স্বল্প আহার করেন এবং খুবই সাদামাটা খাবার তিনি পছন্দ করেন।” ঘুম থেকে ওঠার পরেই তিনি চিনি ছাড়া দুধ বা কফি খান। এদিন যেমন সকাল ৯টা নাগাদ তাঁর ঘুম ভেঙেছে। তার পরে দু’বার চা ও কফি খেয়েছেন। এর পরে স্নান সেরে পুজো করতে বসেন। পুজো শেষ সকাল ১০টা নাগাদ দুধ, কর্নফ্লেক্স খাওয়ার পরে কিছু ক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে যান নৃত্য কর্মশালায়। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত দু-দফায় চলে নৃত্য শিক্ষা। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০-৫০ জন।
এর পরে সার্টিক হাউসে ফিরে দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা-৬ টা নাগাদ রবীন্দ্রসদন চলে যান। পারমিতাদেবী বলেন, “এদিন গুরুজীর জন্য অড়হর ডাল, পেঁয়াজ পোস্ত, আলু-ফুলকপির রোস্ট, কুমড়ো ফুলের বড়া তৈরি করা হয়েছে। দুপুরে দুটো রুটি, সঙ্গে সামান্য ভাত খান তিনি। বুধবার তাঁর জন্য অড়হর ডাল ছাড়াও তৈরি করা হয়েছিল নানা সব্জি মিশিয়ে একটি তরকারি, পনিরের তরকারি, কাঁচা কলার কোপ্তা। রাতেও একই খাবার খেয়েছেন তিনি। শেষ পাতে অবশ্য তিনি মিষ্টি ও ক্ষীর খেতে ভালোবাসেন।”
মিষ্টি ও ক্ষীর অবশ্য বহরমপুর গোরাবাজার এলাকার একটি দোকান থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করে পাঠানো হচ্ছে। ওই মিষ্টির দোকানের মালিক গোরা সাহা বলেন, “দুধ দিয়ে বিশেষ ভাবে নালি ক্ষীর, সুগার ফ্রি ল্যাংচা-কালাকাঁদ-প্যাড়া তৈরি করে গুরুজির জন্য পাঠানো হচ্ছে। এত বড় মাপের এক জন মানুষ বহরমপুরে এসেছেন, তার সেবা করতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য বলে মনে করছি। আমাদের দোকানের মিষ্টি খাচ্ছেন জেনেই আমরা তৃপ্ত।” নৃত্যগুরুর কর্মশালায় অংশ নিতে শহরে এসেছেন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ অসম, দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাইয়ের বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী। |