এখন থেকে সব টাঙা চালকেরাই হাজারদুয়ারি প্রাসাদের উত্তর দিক থেকে যাত্রী তুলতে পারবেন বলে লালবাগ মহকুমা প্রশাসনের ডাকা বৃহস্পতিবারের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে হাজারদুয়ারি চত্বর থেকে যাত্রী তোলার ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা রইল না। তবে টাঙা চালকদের যাত্রী তোলার বিষয়টি দেখভালের জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঠিক করা হয়েছে প্রাথমিক ভাবে টাঙার ভাড়ার তালিকাও।
গত ২৭ ডিসেম্বর তৃণমূল এবং সিপিএম সমর্থিত মুর্শিদাবাদ শহর টাঙা ইউনিয়ন ও মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়নের সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। জখম হন দু’পক্ষের ৮ জন। ওই ঘটনার রাতেই সাত জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পরেই সমাধান সূত্র বের করার জন্য সব পক্ষকে নিয়ে প্রশাসন এদিন বৈঠক ডাকে। লালবাগ মহকুমাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, “যদি দেখা যায় যাত্রী তোলার জন্য টাঙার লম্বা লাইন পড়েছে, তখন সিপিএম পরিচালিত টাঙা ইউনিয়নের ৩টে এবং তৃণমূলের ১টি করে টাঙা ছাড়া হবে। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় টাঙার সংখ্যা কম থাকলে লাইন দিয়ে আগে আসার ভিত্তিতে পর পর টাঙা ছাড়া হবে এবং গোটা বিষয়টি পরিচালনা করবে মুর্শিদাবাদ পুরসভা। এতে সকলেরই মত রয়েছে।”
এদিন যে কমিটি করা হয়েছে, তাতে পুরসভা-প্রশাসন, লালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির পাশাপাশি সমস্ত শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি থাকবেন, যাঁরা টাঙা চালকদের যাত্রী তোলার বিষয়টি দেখভাল করবেন। সেই সঙ্গে দু’পক্ষের টাঙা চালকদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে। সেই মত সিটু অনুমোদিত মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়ন ১৭৪ জনের এবং আইএনটিটিইউসি-র মুর্শিদাবাদ শহর টাঙা ইউনিয়ন ৪৯ জনের নামের তালিকা জমা দিয়েছে। তবে বৈঠকের মধ্যেই ওই নামের তালিকা নিয়েও দু’পক্ষের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়। তখন টাঙা চালকদের পরিচয়পত্র তৈরির প্রস্তাব দেনলালবাগ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য।
সেই মত দু’পক্ষের দু’পক্ষের জমা দেওয়া তালিকা খতিয়ে দেখে মুর্শিদাবাদ পুরসভাকে টাঙা চালকদের একটি নামের তালিকা তৈরি করার কথা বলা হয়। এর পরে পুরসভাকে ভোটার পরিচয়পত্র দেখে টাঙা চালকদের সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ারও দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসডিও বলেন, “সচিত্র পরিচয়পত্র তৈরি করতে সময় লাগবে। তত দিন কমিটির লোকজন যাত্রী তোলার বিষয়টি দেখবে।”
সেই সঙ্গে এদিনের বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে টাঙার ভাড়ার তালিকা ঠিক করা হয়েছে। এসডিও বলেন, “হাজারদুয়ারি থেকে কাঠগোলা বাগান পর্যন্ত ৭টি ঐতিহাসিক জায়গা ঘিরে দেখানোর জন্য টাঙা প্রতি ৮০ টাকা ভাড়া ধার্য হয়েছে। ওই সাতটি জায়গা হলোআজিমুন্নেষার সমাধি, জাফরাগঞ্জ সমাধিক্ষেত্র, নসিপুর রাজবাড়ি, নসিপুর আখড়া, জগৎ শেঠের বাড়ি, নিমক হারাম দেউড়ি ও কাঠগোলা বাগান।”
তবে হাজারদুয়ারি থেকে শুধু মতিঝিল ঘুরে দেখতে হলে ৪০ টাকা দিতে হবে। তবে ওই সাতটি ঐতিহাসিক জায়গার সঙ্গে কেউ যদি মতিঝিলও একসঙ্গে ঘুরতে চান, তাহলে ১২০ টাকার বদলে দিতে হবে ১০০ টাকা। একই ভাবে কাটরা মসজিদ, ফুটি মসজিদ ও তোপখানা দেখতে হলে পর্যটকদের ৪০ টাকা লাগবে। কেউ যদি মতিঝিলের সঙ্গে কাটরা মসজিদ, ফুটি মসজিদ ও তোপখানা বেড়াতে যান, তাহলে ৮০ টাকার বদলে ৬০ টাকা লাগবে। আর কোনও পর্যটক এক সঙ্গে সাতটি ঐতিহাসিক জায়গা, মতিঝিল, কাটরা মসজিদ, ফুটি মসজিদ ও তোপখানা ঘুরতে চান তাহলে ১৬০ টাকার বদলে দিতে হবে ১৩০ টাকা।
এসডিও বলেন, “এদিনের বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে ওই ভাড়া ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এর বাড়তি কোনও ভাড়া টাহা চালক নিতে পারবেন না। তবে সমস্ত টাঙা ইউনিয়ের কাছ থেকে আলাদা করে ভাড়ার তালিকা চাওয়া হয়েছে। সকলের কাছ থেকে ভাড়ার তালিকা নিয়ে পুরসভাকে ভাড়ার তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। তত দিন এই ভাড়া টাঙা চালকরা মেনে চলবেন।” আগে টাঙা প্রতি যেমন খুশি যাত্রী তোলা হত। এদিনের বৈঠকের পরে তাও বন্ধ হয়ে গেল। সিদ্ধান্ত হয়েছে টাঙাপিছু ৬ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। তবে পর্যটকদের সঙ্গে দু-এক জন ছোট বাচ্চা থাকলে সেক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে।
সিটুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা মুর্শিদাবাদ টাঙা চালক ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত দীপঙ্কর চক্রবর্তী এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র মুর্শিদাবাদ ব্লক সভাপতি তপন রায় সকলেই প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। তাঁরা একযোগে বলেন, “পর্যটন মরশুমে সাধারণ টাঙা চালকদের রুজির প্রশ্নে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নিয়েছি।” |