মারগাওতে ইস্টবেঙ্গলের জঘন্য হারে ‘কষ্টই’ পেয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের এ বারের ‘বাতিল’ অধিনায়ক অভ্র মণ্ডল!
অধিনায়ক ঘোষিত হয়েও আই লিগে ট্রেভর মর্গ্যানের দল থেকে বাদ পড়েছিলেন! ক্যাপ্টেন্স আর্ম ব্যান্ড ‘জমা’ দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে চলে গিয়েছিলেন পুণেতেঅন্য দলের জার্সি পরতে। ক্লাবের ইতিহাসে সম্ভবত নজিরবিহীন এই ঘটনা ঘটার পরও বৃহস্পতিবার সালগাওকরের কাছে লাল-হলুদ জার্সির হেনস্তা দেখে অভ্র বলে ফেললেন, “সাত বছর ওখানে খেলছি। কোচেরা যতই আমাকে বাতিল করে দিন, দলের প্রতি টান কমবে কী করে? চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াই থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ল ইস্টবেঙ্গল। খারাপ লাগছে।”
পুণে এফ সি-তে গিয়ে মোট ছয়টি ম্যাচ খেলেছেন অভ্র। এবং এখনও পর্যন্ত অপরাজিত তিনি। এ দিনও যুবভারতী থেকে সেই রেকর্ড অক্ষত রেখে ফিরলেন লেকটাউন গ্রিনপার্কের ছেলেটি। পৈলান অ্যারেজোর সঙ্গে ১-১ ম্যাচ ড্র রেখে। এসেই টিভি খুলে বসেছিলেন বাড়িতে। ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচ দেখবেন বলে। বলছিলেন, “গোয়ার মাঠে গিয়ে জিতে আসা কঠিন। তার উপর ওপারা নেই। মেহতাব লাল কার্ড দেখে ফেলল। কিন্তু চার গোল। ভাবতেই পারছি না।” মনের মধ্যে জমে রয়েছে পুরোনো দলের বিরুদ্ধে এক রাশ অভিমান। কথা বলতে বলতে বলেও ফেলেন, “আমি গোলের নীচে দাঁড়ালে যে খারাপ খেলি না সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছি। দেখা যাক কত দূর সফল হতে পারি।” তাঁর আরও প্রশ্ন, “যদি বাতিলই করা হবে, তা হলে অধিনায়ক করা কেন? ফেড কাপের আগে আমাকে বলা হয়েছিল টিমের চার জনের মধ্যে আমিই সেরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেলানোই হল না। ভিয়েতনামে আমি এত খারাপ খেলিনি যে আই লিগের টিমে জায়গা হবে না। কোচেরা যদি বাতিল করেন, তা হলে কর্তারা কী করবেন?” |
ফেড কাপে দলের এক নম্বর গোলকিপার সুব্রত পাল চোট পেয়েছিলেন। সুব্রত মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পর আই লিগে পুণে এফ সি-র হাল খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মূলত ভাল গোলকিপারের অভাবে। অভ্র যখন যোগ দেন তখন পুণের পয়েন্ট ছিল ছয় ম্যাচে ৫। আর অভ্র যোগ দেওয়ার পর সেটাই বারো ম্যাচের পর দাঁড়িয়েছে ১৯। অভ্র গোলের নীচে দাঁড়ানোর পর ছয়টা ম্যাচে চারটিতে জিতেছে দল, দু’টোতে ড্র। সালগাওকরের বিরুদ্ধে ম্যান অব দ্য ম্যাচ তিনি। “চার্চিলের বিরুদ্ধেও যা খেলেছিলাম তাতে সেরা আমিই হতাম। দিল না পুরস্কারটা।” বলছিলেন শৈশবে মা-কে হারানো জেদি গোলকিপার। বাবা বিয়ে করে অন্যত্র সংসার পাতার পর ঠাকুমার অভিভাবকত্বেই বড় হয়েছেন। সেই ঠাকুমাকে একা বাড়িতে রেখে বাইরে খেলতে যাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় ছিল মনে। কিন্তু পাড়ার বন্ধু-বান্ধবদের কাছ থেকে ভরসা পেয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন চলে যাবেন পুণেতে। “গতবছরই চলে যেতে পারতাম। দেবাশিস স্যার (মুখোপাধ্যায়) বারবার বলেছিলেন। কিন্তু ঠাকুমার কথা ভেবে এবং ক্লাবের প্রতি টানে থেকে যাই। বড় ক্লাবের অধিনায়ক হওয়ার লোভও ছিল। কিন্তু এ বার স্যার পুণেতে খেলার কথা বলায় রাজি হয়ে গেলাম। মিষ্টুও সাহস জোগাচ্ছিল। ছোটবেলার কোচ প্রশান্ত দত্তও অভয় দিলেন। ওদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ আমার চোখ খুলে দেওয়ায়।”
আপনার পরের লক্ষ্য কি? অভ্র বললেন, “যখনই সুযোগ পাব ভাল খেলব। সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। কলকাতার তিনটে দলের বিরুদ্ধে এখনও খেলিনি। ওগুলোতেও অপরাজিত থাকতে চাই।” সেই সুযোগ ৩ জানুয়ারিই পেয়ে যাচ্ছেন অভ্র। ওই দিন মোহনবাগানের মুখোমুখি হচ্ছেন তিনি। পুণেতে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে খেলতে নামলে কি বাড়তি মোটিভেশন থাকবে? জেদি অভ্রর জবাব, “ওই ম্যাচে আমার দলকে জেতাতে চাই। আমার দল মানে পুণে এফ সি।” |