সালগাওকর-৪ (ফ্রান্সিস, সুয়েকা, জুনিয়র, নির্মল-আত্মঘাতী)
ইস্টবেঙ্গল-০ |
শেষের বাঁশি যখন বাজছে, সাইড লাইনের ধারে তখন থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে ট্রেভর জেমস মর্গ্যান। ইস্টবেঙ্গলে তাঁর ১৭ মাসের জমানায় দেশের মাটিতে সবথেকে বিশ্রী হার। মারগাওতে এমন সময়ে লজ্জার সাগরে ডুবলেন ব্রিটিশ কোচ, যখন ক্রিসমাসের মধ্যেই নতুন বর্ষবরণে মেতে ওঠার অপেক্ষায় তৈরি হচ্ছে গোয়া।
দলের এই হালের মধ্যেও বড় ঘটনা ঘটল ম্যাচের বিরতিতে। নিজেদের মধ্যে ঝামেলায় জড়ালেন লাল-হলুদের দুই ফুটবলার। মর্গ্যানের জামানায় যা নজিরবিহীন। বিরতিতে ড্রেসিংরুমে ফিরে টোলগে ওজবে না কি তেড়ে যান মেহতাবের দিকে। প্রশ্ন করেন, কেন লাল কার্ড দেখে দলকে ডোবালেন তিনি। খেলার শেষে সালগাওকর ক্লাবের ফেসবুকে ‘ইস্টবেঙ্গল ড্রেসিংরুমের ছবি’ দাবি করে কয়েকটি ছবি প্রকাশ করা হয়। তাতে ভাঙা চেয়ারের ছবিও ছিল। খেলার শেষে অবশ্য সরকারি ভাবে মর্গ্যান, মেহতাব বা টোলগে এ ব্যাপারে মুখ খোলেননি।
প্রথমার্ধের ১৭ মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল দশ জন হয়ে যায়। দু’টো বিশ্রী ফাউল করে মেহতাব লালকার্ড দেখে বেরিয়ে যাওয়ায়। ইস্টবেঙ্গলের সেই দুর্দশার বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় একেবারে শেষে নির্মল ছেত্রীর আত্মঘাতী গোলে। মাঝে শুধুই মাঠ জুড়ে সবুজ-সাদা জার্সির দাপাদাপি। চিডি-সুয়েকা-জুনিয়রদের গোল করা এবং করানোর দৃশ্য। নিট ফল, আই লিগ টেবিলে ১২ রাউন্ডের শেষে মর্গ্যানের টিম চার নম্বরে। অথাৎ সুব্রত ভট্টাচার্যের মোহনবাগানের এক ধাপ পিছনে।
মর্গ্যান। দুঃস্বপ্নের ম্যাচ। |
কিন্তু চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইতে থাকা ইস্টবেঙ্গলের কেন এই হাল? তার প্রথম কারণ যদি হয় ওপারার না থাকা এবং মেহতাবের লালকার্ড, তা হলে দ্বিতীয়টি অবশ্যই মর্গ্যানের ভুল স্ট্র্যাটেজি। রক্ষণ পোক্ত না-করে জেতার লক্ষ্যে ঝাঁপাতে গিয়েই ডুবলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।
মেহতাব প্রথম কার্ড দেখেছিলেন ফ্রান্সিস ফার্নান্দেজকে বিশ্রী ট্যাকল করে। তার ঠিক দু’মিনিট পর দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন রিউজি সুয়েকাকে ট্যাকল করে। তামিলনাড়ুর রেফারি শ্রী কৃষ্ণ একটুও সময় নষ্ট করেননি লাল কার্ড বের করতে। যা নিয়ে খুব একটা প্রতিবাদের রাস্তায় হাঁটলেন না মেহতাব নিজেও। তবে এরপরই বেলাইন হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। দিগ্ভ্রান্ত হয়ে যান পেন-ভাসুমরা। সালগাওকর বেশির ভাগ আক্রমণ হচ্ছিল ডান দিক দিয়ে। চারটি গোলের তিনটিই এসেছে ওই উইংয়ের আক্রমণেই। তা-ও করিমের ডান উইংয়ের দৌড় বন্ধ করতে পারেননি মর্গ্যান। ইস্টবেঙ্গল লেফট ব্যাক রবার্ট খাবি খেতে থাকেন নিকোলাও কোলাসো আর ফ্রান্সিস ফার্নান্দেজের যৌথ আক্রমণে।
বিরতিতে স্কোর ছিল ১-০। তখনও বোঝা যায়নি ম্যাচের স্কোরলাইন হতে চলেছে ৪-০। করিম বেঞ্চারিফার ফুটবলাররা বিপক্ষকে দশ জনে পেয়ে আরও তেড়েফুঁড়ে খেলতে থাকেন। ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেলেন রিউজি সুয়েকা। যে পুরস্কার স্বচ্ছন্দে দেওয়া যেত করিমের দলের রাইট ব্যাক নিকোলাও কোলাসোকেও। অথবা ফ্রান্সিস ফার্নান্দেজকে। রাইট হাফ ফ্রান্সিসের সঙ্গে অসাধারণ বোঝাপড়া দেখালেন নিকোলাও। মেহতাব মাঠ ছাড়ার ছ’মিনিট পরেই প্রথম গোল পায় সলাগাওকর। নিকোলাওয়ের ক্রস ছোট্ট হেডে নামিয়ে দেন চিডি। ফ্রান্সিসের শট গুরবিন্দরের পা ছুঁয়ে গোলে ঢোকে।
ইস্টবেঙ্গল দু’নম্বর গোল হজম করে অফসাইড ট্র্যাপ করতে গিয়ে। সুয়েকা ইস্টবেঙ্গল বক্সে ঢুকে যে শট নেন সেটি প্রথমে সন্দীপ বাঁচালেও ফিরতি বল ধরে গোল করে যান জাপানি ফরোয়ার্ড। ৮৫ মিনিটে ৩-০ করেন ইসফাকের পরিবর্ত জুনিয়র। মার্কাস মাসকারেনহাসের বাড়ানো বলে গোল করে যান জুনিয়র। চার নম্বর গোলটিতে সন্দীপের কিছু করার ছিল না। ডান প্রান্ত থেকে ক্রস তুলেছিলেন নিকোলাও। যা ক্লিয়ার করার জন্যই হেড করেছিলেন নির্মল। কিন্তু সরাসরি গোলে ঢুকে যায়। চাপের বহিঃপ্রকাশ আর কি!
ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে লাল কার্ড দেখেন আরও এক বঙ্গসন্তান-- সালগাওকরের বিশ্বজিৎ সাহা।
ইস্টবেঙ্গল: সন্দীপ, সৈকত, গুরবিন্দর, নির্মল, রবার্ট, মেহতাব, হরমনজোৎ (সঞ্জু), পেন, ভাসুম (পাইতে), টোলগে, বলজিৎ (লেন)। |