মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে দেখে সুখে বা দুঃখে কখনওই খুব বেশি অভিভূত বলে মনে হয় না। বৃহস্পতিবার বিকেলের সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে দেখে অবশ্য মনে হল মেলবোর্ন হার বেশ ধসিয়ে দিয়েছে। বিদেশে অধিনায়ক হিসেবে এ নিয়ে টানা পাঁচ নম্বর টেস্ট হারলেন ধোনি।
প্র: এই বিপর্যয়ের ব্যাখ্যা কী? উইকেট?
ধোনি: আমাদের বিপর্যয়ের চেয়েও আমি বেশি করে বলতে চাই অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের কথা। ওরা দারুণ বল করেছে। ওরা যে শর্ট বল খুব বেশি করছে তা নয়। কিন্তু ওরা লাইনটা খুব ভাল রেখেছিল। আর উইকেটে একটা স্পঞ্জের মতো অদ্ভুত বাউন্স ছিল। তাতে স্ট্রোক মেকিংয়ের সমস্যা হয়েছে।
প্র: তবু কাগজ-কলমে তো আপনার ব্যাটিং বিশ্বসেরা। তারা যুঝতে পারল না কেন?
ধোনি: মেনে নিতেই হবে যে দুই ইনিংসে ব্যাটিং সম্পূর্ণ ফ্লপ করেছে। উইকেট পড়ে গিয়েছে ধড়াধড়। সবচেয়ে বড় মোড় ঘুরছিল যখন দু’উইকেটে ২১৪ নিয়ে ম্যাচের ওপর আমরা প্রায় চেপে বসছিলাম। ওই সময়টা হঠাৎ খেলাটা হাত থেকে ছিটকে গেল। আমার এখনও আফসোস হচ্ছে কেন আর কুড়িটা ওভার আমরা খেলে দিতে পারলাম না। নতুন বলে ওই কুড়ি ওভার পার করে দিলে আমরা পুরো নিশ্চিন্ত হয়ে যেতাম। আজকের অবস্থাটা তৈরিই হত না।
প্র: টার্গেটটা কত রান অবধি তাড়া করা সম্ভব ছিল?
ধোনি: কালকে লিড ছিল ২৩০ রানের। আমরা ভেবেছিলাম আর দশ-পনেরো রানের মধ্যে ফেলে দিতে পারব। টেল এন্ডারদের কাছে পৌঁছেও আমরা ওদের উইকেটগুলো ফেলতে পারিনি। এটা চরম অশান্তির জায়গা। তবে ভাল খেললে ২৯২ রানও তাড়া করা যেত।
প্র: তা হলে সিডনিতে উন্নতির জায়গাগুলো কী?
ধোনি: দুটো। ব্যাটিংয়ে আরও কমিটমেন্ট দেখাতে হবে। বোলিংয়ে ওদের টেল এন্ডারদের তাড়াতাড়ি ফেলতে হবে।
প্র: একটাও পজিটিভ আছে মেলবোর্ন থেকে?
ধোনি: আছে। আমাদের বোলাররা কুড়ি উইকেট ফেলতে পেরেছে। |
প্র: গৌতম গম্ভীরের অবস্থা কি বেশ সঙ্গিন নয়?
ধোনি: গম্ভীরকে এক ধাপ খেলা বাড়াতে হবে। নিশ্চয়ই চেষ্টা করবে। অতীতে ও যথেষ্ট রান-টান করেছে। একটা টেস্ট দেখে অধৈর্য হয়ে পড়া ঠিক হবে না।
প্র: কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন বিপর্যয়কে?
ধোনি: দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা অবধি তা-ও ঠিক ছিল। তার পর থেকেই সব তালগোল পাকিয়ে গেল।
প্র: ডিআরএস পদ্ধতি এ বার চালু করে দেওয়া কি উচিত নয়? আপনারাও তো বেশ কিছু আউট এর জন্য হারালেন।
ধোনি: আমি এখনও চালু করার পক্ষে নই। আমার মনে হয় না আম্পায়ারদের ঈশ্বর হওয়ার কোনও প্রয়োজন আছে বলে। ওঁরা যেমন আছেন, তেমনই থাকুন। আমার কথা হচ্ছে বোলার ভুল করলে মানতে রাজি আছি। ব্যাটসম্যান ভুল করলে মানতে রাজি আছি। আম্পায়ার ভুল করলে মানব না কেন?
প্র: তবু গোটা পৃথিবী তো ডিআরএস মানছে!
ধোনি: প্রযুক্তি যতক্ষণ না একশো ভাগ নিখুঁত হচ্ছে, ততক্ষণ আমি আম্পায়ারদের হাত থেকে ক্ষমতা কাড়তে রাজি নই। আমি ইংল্যান্ড সফরে যাওয়ার আগে হট স্পটের খুব বড় ফ্যান ছিলাম। স্নিকোমিটারে বিশ্বাস করতাম। তারপর হাতেনাতে প্রমাণ পেলাম যে, এগুলো নির্ভুল নয়। আমার বিশ্বাস তখন থেকে আরও চটকে গেছে। আমি আরও বেশি করে আম্পায়ারদের ওপর বিশ্বাসী হয়ে পড়েছি।
প্র: ২০১১ বছরটাকে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবেন? এ বছরেই বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন। আবার এ বছরেই বিদেশে টানা পাঁচ টেস্টে হার।
ধোনি: ভাল বছর আমি বলব। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমরা ভাল খেলে এসেছি। বিশ্বকাপটা চ্যাম্পিয়ন হলাম। যা দেখার জন্য গোটা দেশের লোক উন্মুখ হয়ে বসে ছিলেন। আমাদের শুধু কালো দাগটা থেকে গেল ইংল্যান্ড সফরের। নইলে এমন বছর যাকে ফিরে ফিরে দেখতে ইচ্ছে হয়।
|