কারও ফেরার কথা চেন্নাইয়ে। কারও দিল্লিতে। কারও বা কলকাতায়। কিন্তু ফিরবেন কী করে? বিমান যে উড়ে গিয়েছে আগেই!
ঘূর্ণিঝড়ে ওঁরা আটকে পড়েছিলেন আন্দামানের হ্যাভলক এবং নিল দ্বীপে। দুর্যোগ থেমে গিয়েছে। চার দিন পরে আটক পর্যটকেরা পোর্ট ব্লেয়ারে ফিরছেন। কিন্তু ফিরলে কী হবে? ইতিমধ্যেই পোর্ট ব্লেয়ার ছেড়ে ফেরার বিমান উড়ে গিয়েছে। জানুয়ারির ৯-১০ তারিখ পর্যন্ত পোর্ট ব্লেয়ার-কলকাতা রুটে বিমানের টিকিট নেই বললেই চলে। যে-ক’টা টিকিট পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম কেউ চাইছে ১৬ হাজার টাকা, কেউ সাড়ে ২২ হাজার।
কলকাতা থেকে পোর্ট ব্লেয়ারে দিনে তিনটি উড়ান যাতায়াত করে। এয়ার ইন্ডিয়া ও জেটের উড়ান এখন প্রায় ভর্তি। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, পোর্ট ব্লেয়ার-কলকাতা রুটে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের কোনও আসনই খালি নেই। গো এয়ার ওই রুটে কাল, শনিবারের টিকিট বিক্রি করছে সাড়ে ২২ হাজার টাকায়। ঘরে ফিরতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে পর্যটকদের।
এয়ার ইন্ডিয়া জানাচ্ছে, কলকাতা-পোর্ট ব্লেয়ার রুটে ১২২ আসনের বিমান চালানো হয়। আটকে পড়া যাত্রীদের ফেরাতে বৃহস্পতিবার ১৭২ আসন এবং শুক্রবার ১৪৫ আসনের বিমান চালানো হচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্রের দাবি, যাত্রীদের কাছ থেকে তারা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে না। ২৫-২৬ তারিখে যাঁরা ফিরতে পারেননি, তাঁদের ওই একই টিকিটে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তাপস ভট্টাচার্য সেই সুযোগের জন্য অবশ্য অপেক্ষা করতে পারেননি। হ্যাভলক দ্বীপে বসে তিনি ২৬ তারিখ রাতেই বুঝে যান যে, পরের দিন সকালে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে কলকাতার উড়ান ধরতে পারবেন না। সেই রাতেই কলকাতায় এজেন্টকে ফোন করে ফেরার টিকিট বাতিল করে ৩০ তারিখের জন্য গো এয়ারের টিকিট কাটেন। চার জনের জন্য তাঁকে অতিরিক্ত ১২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মূলত জেট ও গো এয়ারের বিরুদ্ধে। জেটের এক অফিসারের কথায়, “আপনি যদি দিনের দিন উড়ান ধরতে না-পারেন, তা হলে আপনার টিকিট বাতিল হয়ে যাবে। এটাই নিয়ম। অন্য উড়ানে আসতে হলে আপনাকে নতুন টিকিট কাটতে হবে।” যদিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক যাত্রীকে একই টাকায় ফেরার বিমানে জায়গা করে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন জেট-কর্তা। যাঁরা বিমান সংস্থার সঙ্গে কথা না-বলে এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, মূলত তাঁদেরই বেশি টাকা দিতে হচ্ছে বলে কর্তার অভিযোগ।
শরদিন্দু মহান্তি নামে এক পর্যটক বৃহস্পতিবার কলকাতায় ফিরে জানান, পোর্ট ব্লেয়ারে কোনও হোটেলে জায়গা নেই। হ্যাভলক, নিল দ্বীপে যাঁদের যাওয়ার কথা ছিল, দুর্যোগের কারণে পোর্ট ব্লেয়ারে রয়ে গিয়েছেন। আবার ওই দুই দ্বীপ থেকে ফিরে আসা মানুষ পোর্ট ব্লেয়ারে ভিড় করছেন। বিমানবন্দরে গিয়ে হাহাকার করছেন ফেরার টিকিটের জন্য।”
বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত পোর্ট ব্লেয়ারে পর্যটকদের প্রচণ্ড ভিড় থাকে। আগে থেকে না-কাটলে বিমানের টিকিট পাওয়া যান না। একটি-দু’টি আসন খালি থাকলেও তার টিকিটের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। এই অবস্থায় কলকাতা-পোর্ট ব্লেয়ার রুটে মাসে মাত্র দু’টি জাহাজ যাতায়াত করছে। পোর্ট ব্লেয়ারের একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্তা দেবাশিস চন্দ্রের অভিযোগ, “জাহাজের সংখ্যা বেশি থাকলে এই পরিস্থিতিতে উপকৃত হতেন পর্যটকেরাই।” |