রাজ্যের গরিব মানুষকে অন্তত একবেলা ভরপেট খাওয়াতে পুরোপুরি চালু হয়ে গেল ‘মুখ্যমন্ত্রীর ডাল-ভাত যোজনা’। মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে ভাত-ডাল-সব্জি দিয়ে মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করেছে ঝাড়খণ্ড সরকার। রাঁচি-সহ রাজ্যের ২৫৯টি ব্লকেই চালু হয়েছে এই ৫ টাকার মধ্যাহ্নভোজ কেন্দ্র। সরকারি হিসেব অনুযায়ী রাজ্যের ২৪ টি জেলায় দৈনিক গড়ে ৯২ হাজার থেকে এক লক্ষ মানুষ আপাতত ৫ টাকায় মধ্যাহ্নভোজ সারছেন। রান্নাবান্না ও পরিবেশনের দায়িত্ব যৌথ ভাবে সামলাচ্ছে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
চলতি বছরের ১৫ অগস্ট পাঁচ টাকায় মধ্যাহ্নভোজ প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। সরকারি ভাবে এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘মুখ্যমন্ত্রীর ডাল-ভাত যোজনা’। অর্জুন মুন্ডার সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে, সূচনায় পরীক্ষামূলক ভাবে রাজ্য কিছু কেন্দ্র থেকে মাথাপিছু পাঁচ টাকায় ডাল-ভাত-সব্জি বিলি চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকায় রাজ্যের প্রতিটি ব্লকে ওই কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যে ৩৬০ টি কেন্দ্র চলছে। |
অর্জুন মুন্ডার উপদেষ্টা মণ্ডলী থেকে জানানো হয়েছে, ‘ডাল-ভাত যোজনায়’ সরকার স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে এক টাকা কেজি দরে চাল সরবরাহ করছে। ডাল এবং সব্জি কিনছে এই প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি নিজেরাই। দৈনিক খাদ্য তালিকায় ভাতের সঙ্গে থাকছে মুসুর কিংবা অড়হড় ডাল। আর থাকছে পাঁচমেশালি সব্জি। কখনও থাকছে আলু-সয়াবিনের তরকারি। প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে ২০০ গ্রাম চালের ভাত। প্রকল্পের কাজে স্বচ্ছতা রাখতে মধাহ্নভোজন কেন্দ্রগুলিতে রাখা হয়েছে রেজিস্টার খাতা। যাঁরা ওই কেন্দ্রে খেতে আসছেন তাদের নাম লিপিবদ্ধ করে স্বাক্ষর কিংবা টিপসই নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ‘মুখ্যমন্ত্রীর ডাল-ভাত যোজনা’ চালুর উদ্দেশ্য সস্তায় গরিব মানুষের অন্তত এক বেলার খাবার নিশ্চিত করা। তবে এই জন-ক্যান্টিনের সুযোগ নিচ্ছে অনেকেই। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে অনেকেও এখানে ৫ টাকার বিনিময়ে মধ্যাহ্নভোজ সেরে যাচ্ছে। রাজধানী শহর রাঁচির মহাত্মা গাঁধী টাউন হলে যে কেন্দ্রটি চলছে, সেখানে দৈনিক খেতে আসছেন প্রায় চারশো মানুষ। অন্নপূর্ণা মহিলা বিকাশ সমিতি পরিচালিত এই কেন্দ্রের ইনচার্জ দীপক কুমার জানান, এখানে রিকশাচালক থেকে অংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকরা যেমন খেতে আসছেন, তেমনই আসছেন অনেক ছাত্র, এমনকী দৃশ্যত স্বচ্ছল পরিবারের লোকজনও।
আজ দুপুরে রাঁচির টাউন হল চত্বরের ওই কেন্দ্রে উপস্থিত মতিলাল মাহাতো নামে জনৈক ব্যক্তি নিজেকে সিভিল কোর্টের আইনজীবী বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, “আমার বাড়ি চুটিয়া থানা এলাকায়। ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন দুপুরে আমি এখানে লাঞ্চ করি।” তিনি জানান: ‘মুখ্যমন্ত্রীর ডাল-ভাত যোজনায়’ একটি করে ডিম দেওয়ার কথা শুনেছি। কিন্তু এখনও দেওয়া হচ্ছে না। কবে দেওয়া হবে কে জানে?উদাসী মুখে মধ্যাহ্নভোজ সেরে উকিলবাবু ফের আদালতের দিকে পা চালান। |