প্রশ্নটা ঘুরেফিরেই উঠছে। অতঃকিম? এর পরে কী করবেন অণ্ণা হজারে? অসুস্থ শরীরে আজ তিনি ফিরে গিয়েছেন নিজের গ্রাম, রালেগণ সিদ্ধিতে। গ্রামবাসীদের বলেছেন, আপাতত এক সপ্তাহ বিশ্রাম নেবেন। তার পর ঠিক করবেন পরবর্তী কর্মসূচি। তাঁর শিবিরের সদস্য প্রশান্তভূষণ আবার বলেছেন, এই বিশ্রামপর্বের মধ্যেই তাঁরা রালেগণ সিদ্ধি যাবেন। ২-৩ জানুয়ারি অণ্ণার সঙ্গে বৈঠকের পরে কর্মসূচি ঠিক করা হবে। গত কাল শুধু অনশন প্রত্যাহার করাই নয়, জেল ভরো বা সাংসদদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচিও স্থগিত করে দিয়েছেন অণ্ণা। জানিয়েছেন, আগামী পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার করবেন তাঁরা। তাই ঘুরেফিরেই প্রশ্নটা উঠছে, আগামী মাসেই যখন তিন রাজ্যে নির্বাচন, তা হলে ঠিক কবে প্রচার শুরু করবেন অণ্ণারা? নির্দিষ্ট জবাব আজ মেলেনি। |
বরং অনশন তোলা নিয়ে তাঁর শিবিরের মধ্যে মতপার্থক্যের কথাই আজ বেশি শোনা গিয়েছে। ‘মুম্বই-পর্ব’ ব্যর্থ হওয়ার পরে আজ বৈঠকে বসেছিলেন ‘ইন্ডিয়া এগেনস্ট করাপশন’ (আইএসি)-এর শীর্ষ সদস্যেরা। ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কিরণ বেদী, প্রশান্তভূষণরা। কিরণ বেদী বা প্রশান্তভূষণের মতো যাঁরা গতকাল দিল্লিতে ছিলেন, তাঁরা কেজরিওয়ালদের কাছে জানতে চান, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে অণ্ণা অনশন তুলতে বাধ্য হয়েছিলেন। ময়দানে ভিড়ের চেহারা দেখে পরশু রাতেই অরবিন্দ কেজরিওয়াল-সহ মুম্বইয়ে উপস্থিত অণ্ণা-ঘনিষ্ঠরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, অসুস্থ অণ্ণার মুখরক্ষা করে যদি অনশন তোলানো যায়। সেইমতো ভিড় টানতে নতুন উদ্যমে নেমে পড়েন তাঁরা। এবং তার পরে আসে অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত। যা আইএসি-র সাধারণ সদস্যদের বা নেতাদের একাংশেরও জানা ছিল না। প্রকাশ্যে অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই মতপার্থক্যের কথা অস্বীকার করছেন প্রশান্তভূষণ। তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনেই কাজ হয়েছে।”
অণ্ণার একদিন আগেই অনশন তুলে নেওয়া এবং গ্রামে ফিরে যাওয়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ। তাঁর কথায়, “অণ্ণা অনশন তুলে ভালই করেছেন। এখন রালেগণ সিদ্ধিতে নিজের জায়গায় ফিরে গিয়ে গ্রামোন্নয়নের কাজ করুন।” এক ধাপ চড়িয়ে কট্টর অণ্ণা-বিরোধী লালু প্রসাদ ফের বলেছেন, “অণ্ণার স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য জাতীয় কমিটি গঠন করা হোক।”
আজ সকালে বিকেসি মাঠে গিয়ে দেখা গেল দ্রুত হাতে পোস্টার-ব্যানার খোলার কাজে ব্যস্ত আইএসি সমর্থকেরা। খুলে ফেলা হয়েছে মঞ্চের একাংশও। কার্পেট গুটিয়ে রাখা হয়েছে। মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে আলো-মাইক। পুলিশ নেই বললেই চলে। যাঁরা মুম্বইয়ের বাইরে থেকে এসেছিলেন, তাঁরা আজ সকাল থেকেই যে যার মতো বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরেছেন। হরিয়ানার যে সংস্থাটি মাঠে লঙ্গর খুলেছিল, সব থেকে করুণ অবস্থা তাদের। একে তো প্রত্যাশিত লোক হয়নি। তার উপরে এক দিন আগেই অণ্ণা অনশন তুলে নেওয়ায় মাথায় হাত। লঙ্গরের এক কোণায় ডাঁই করে রাখা হয়েছে, চাল-চিনি, ডাল, সব্জি। মুখ চুন করে সেই পড়ে থাকা খাবার লরিতে তুলতে ব্যস্ত স্বেচ্ছাসেবীরা। অণ্ণার জন্য ভিড় হবে ভেবে অনশন প্রাঙ্গণের সামনের প্রদর্শনী তিন দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আজ তড়িঘড়ি করে তা খোলা হয়েছে।
এ দিন আইএসি-র বৈঠকে আসন্ন পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কী ভাবে প্রচার চালানো হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। অণ্ণা প্রথম থেকেই নির্বাচনে ভোটারদের ‘রাইট টু রিজেক্ট’ বা প্রার্থীকে প্রত্যাখ্যানের অধিকার দেওয়ার দাবি করে আসছিলেন। মুম্বইয়ে অনশন মঞ্চ থেকেও ওই দাবি তোলেন তিনি। আইএসি সূত্রের খবর, লোকসভা নির্বাচনের আগে এখনও দু’বছর সময় রয়েছে। তার মধ্যেই বিষয়টি নিয়ে জনমত গড়ে তুলে ওই অধিকার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ বাড়ানো হবে। |