নাটক নিয়ে মানুষের উন্মাদনা দেখে তিনি আপ্লুত। বললেন, “সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের নাট্য পিপাসা দেখে আমি মুগ্ধ। এঁরা নাটকের একটা বাতায়ণ তৈরি করতে পেরেছেন। মানুষকে আরও একত্রিত করতে বছরের অন্যান্য দিনগুলির জন্য কিছু নাটক নিয়ে লাইব্রেরি, আলোচনা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাও করতে হবে।” বুধবার সন্ধ্যেয় বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালির ন্যাজাটে সুন্দরবন নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করতে এসে এই কথা বলে গেলেন নাট্য ব্যক্তিত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
অষ্টম বর্ষে পড়া সুন্দরবন নাট্য উৎসব কমিটির পরিচালনায় চার দিনব্যাপী নাট্য উৎসবের শুরুতেই সুন্দরবন নাট্য সংস্থা প্রযোজিত ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’ নাটকটি কলাকুশলীদের অভিনয়গুণে দর্শকদের মুগ্ধ করে। কেবল নাটকটি মঞ্চস্থ করাই নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতার দিকে লক্ষ্য রেখে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে এলাকার ৭টি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ইউনিফর্ম। প্রায় ৬০০ দুঃস্থ মহিলা এবং শিশুদের দেওয়া হয়েছে নতুন পোশাক। |
এক দিন এলাকারই কয়েকজন উৎসাহী কিশোর-কিশোরী ঠিক করেছিল, ‘কিছু নেই, কিছু হবে না, পিছিয়ে পড়া সুন্দরবনের গণ্ডগ্রাম’ এসব বলে খালি চায়ের দোকানের আসর মাতালে চলবে না, সংস্কৃতি চেতনায় এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে সন্দেশখালির মানুষকে। পরিকল্পনা করা হয়, নাটক-সহ নানা সাংস্কৃতিক কাজের চেষ্টা হবে, সাধ্যমতো এলাকার গরিব মানুষদের পাশে দাঁড়ানো হবে। সেই শুরু। দর্শকদের বিচারে চমৎকার অভিনয় করেছেন মাছের কাঁটার কাজ করা শ্যামল হালদার, মাছ ব্যবসায়ী কবি শঙ্কর মৃধা, শঙ্কর দাস। অন্য সময়ে ব্যবসার কাজে নিজেকে যুক্ত রাখেন দেবব্রত পাল। কিন্তু নাটকের কথা বললেই সে সব শিকেয় তুলে মহড়া দিতে লেগে পড়েন। এক দিকে ব্যবসার ঝক্কি সামলানো অন্য দিকে নাটকের মহড়া, কাজটা একটু কঠিন হলেও পিছুপা নন দেবব্রতবাবু। নাটকে মৃত সাংবাদিকের ভূমিকায় তিনি এবং স্থানীয় একটি সোনার দোকানের কর্মী কৃষ্ণপদ সাউ এর অভিনয় বেশ সাবলীল। তাদের নাটক দেখে প্রশংসা করেন কলকাতা থেকে আসা নাট্যপ্রেমী মানুষ।
ন্যাজাটের একটি স্কুল-সংলগ্ন মাঠে বিশাল ম্যারাপ বেঁধে শুরু হয়েছে এ বারের নাট্য উৎসব। প্রয়াত নাট্যকার ও অভিনেতা বাদল সরকারের জীবনের বিভিন্ন সময়ের উপর তোলা ছবি এ বারের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, রামকৃষ্ণ ঠাকুর, গিরিশ ঘোষ, নটী বিনোদিনী, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, জর্জ বার্নাড শ, উৎপল দত্ত, অজিতেশ বন্দোপাধ্যায়, রমাপ্রসাদ বণিক, শম্ভু মিত্র এবং তৃপ্তি মিত্র সহ বহু ব্যক্তিত্বের ছবি আছে প্রদর্শনীতে। মুখোমুখি প্রযোজিত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং দ্বিজেন বন্দোপাধ্যায় অভিনীত ‘কুরবানি’ নাটকটি এক কথায় অনবদ্য। নাটক মঞ্চস্থের আগে সংস্থার পক্ষে শক্তি মুখোপাধ্যায় মানপত্র, মধু এবং স্মারক দিয়ে সম্বর্ধনা দেন সৌমিত্রকে। গ্রামবাংলায় নাটক দেখার জন্য দর্শকাসন ভরে যাওয়া দেখে সত্যিই খুশি কলকাতা থেকে আসা নাট্য ব্যক্তিত্বেরা। উৎসবের বাকি নাটকগুলি হল নেহেরু চিলড্রেনস মিউজিয়াম প্রযোজিত ‘লুক্সেমবার্গের লক্ষ্মী’, নান্দীকার প্রযোজিত ‘মাধবী’ এবং আখর প্রযোজিত ‘জান-এ-কলকাত্তা’। কমিটির পক্ষে সম্পাদক তপন দেব বলেন, ‘‘সুন্দরবনের এই প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েরা শহরের নানা সুযোগ থেকে প্রায় বঞ্চিত। ঠিক করা হয়, কিছু একটা করতে হবে যা দেখে এখানকার মানুষ বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীরা ঊৎসাহিত হয়। সংস্কৃতিমূলক কাজে এগিয়ে আসে। একটা সুষ্ঠ পরিবেশ তৈরি হয়। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই গড়ে তোলা হয় এই নাট্য সংস্থা। |