তাই স্থানীয় আড়ৎদারদের আমরা ধান বিক্রি করতে পারি। সরকার থেকে আড়ৎদারদের সহায়ক মূল্যে ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হলে আমাদের হয়রানি কমে যেত। জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি দীপক প্রামাণিক বলেন, “সরকার সহায়ক মূল্যে ধান কেনার ক্ষেত্রে দুই শতাংশ খাদ হিসেবে ছাড় দিতে বলেছে। সেই মতো আমরা এক কুইন্ট্যাল ধানে ২ কেজি খাদ থাকলে ১০০ কেজি ধানের দাম দিচ্ছে। খাদের পরিমান বেশি হলে সেই অতিরিক্ত পরিমাণ বাদ দেওয়া হয়। মর্জি মাফিক বাটা বা খাদ কাটার অভিযোগ ঠিক নয়।” তিনি আরও দাবি করেন, “সরকারি নিয়ম অনুসারে লেভি বাবদ আমাদের ৫০ শতাংশ চাল নেওয়ার কথা সরকারের। কিন্ত বাস্তবে ২০ শতাংশের বেশি নেওয়া হয় না। ফলে বাড়তি চাল নিয়ে আমরা কী করব। খোলা বাজারে ধান কিনে অতিরিক্ত চাল বাজারে বিক্রি করলে ক্ষতি হয় না। কিন্তু সহায়ক মূল্যে কিনে বাজারে বিক্রি করলে ক্ষতি হবে।” চালকল মালিকরা অবশ্য ধান কেনা নিয়ে চাষিদের হয়রানি করা বা আড়ৎদারদের থেকে ধান কেনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, সরকারি নিয়ম মেনেই চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে।
সিপিএমের কৃষক সংগঠন কৃষক সভার জেলা সম্পাদক আনন্দ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “সরকারের ত্রুটিপূর্ণ কৃষিনীতির জন্যই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে। পরিকাঠামো না থাকা অবস্থায় এ ভাবে নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ধান কেনার ব্যবস্থা করেছে সরকার। তার ফল ভুগতে হচ্ছে চাষিদের। তাই বাধ্য হয়ে চাষিরা বিভিন্ন এলাকায় পথ অবরোধ করছেন।” জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “কোনও চালকল চাষিদের কাছ থেকে ধআন কিনছে না বা চাষিদের হয়রানি করছে বলে অভিযোগ পাইনি। এরকম অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, সরকারি নিয়ম মেনে আড়ৎদারদের মাধ্যমে ধান কেনা সম্ভব নয়। তাঁর আশ্বাস, “শীঘ্রই সমবায় সমিতিগুলির মাধ্যমে ধান কেনা শুরু করা হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বন্ধ-অবরোধের বিরোধী হলেও নানুরের তৃণমূল নেতৃত্ব পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে এ দিন স্থানীয় বেলুটি বাসস্টপে অবরোধ করেন। নানুর-বোলপুর রাস্তা সকাল আটটা থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে তাঁদের এই অবরোধ। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে। তৃণমূলের নানুর ব্লক কার্যকরী সভাপতি অশোক ঘোষের অভিযোগ, “বহিরাগত দুষ্কৃতীরা নানুরে ঘাঁটি গেড়েছে। বুধবার রাতে মান্দার গ্রামে আমাদের দলের দুই সমর্থকের বাড়িতে তারা বোমাবাজি করে। পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলেই দুষ্কৃতীরা মাথাচাড়া দিয়েছে।” পুলিশ অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি। পুলিশের দাবি, এলাকায় পুলিশের টহল রয়েছে। দুষ্কৃতীদের ধরতে লাগাতার অভিযান করা হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় অবরোধ হওয়ায় বহু যাত্রী নাকাল হন। ময়ূরেশ্বরের লোকপাড়ার বাসিন্দা নিতাই কোনাই, নানুরের ধাপধারার বিশ্বনাথ মণ্ডলরা সমস্যায় পড়েন। নিতাইবাবু জানান, “ভাড়া গাড়িতে ভাইয়ের পরিবারকে নিয়ে ভাইয়ের কর্মস্থল পুরুলিয়ায় যাচ্ছিলেন। রাতেই বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু জয়দেবমোড়ে তাঁরা অবরোধে আটকে যান।” একই ভাবে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়ার পথে সিয়ানে আটকে পড়েন বিশ্বনাথবাবুরা। তাঁর ক্ষোভ, “চাষিদের যন্ত্রণা আমরা জানি। কিন্তু এ ভাবে রাস্তা অবরোধে রোগীকে নিয়ে দীর্ঘ ক্ষণ আটকে থাকার যন্ত্রণা কী কম?”
|
ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী ও সোমনাথ মুস্তাফি। |