রমরমিয়ে চলছে মাদক ব্যবসা। শিকার হচ্ছে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারাও। নেশার প্রাদুর্ভাব বাড়ার পাশাপাশি এলাকায় বাড়ছে চুরি-ছিনতাই। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে লিখিত অভিযোগে এমনটাই জানিয়েছেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নসরৎপুর পঞ্চায়েতের ডাঙাপাড়ার কয়েকশো বাসিন্দা।
সমুদ্রগড় স্টেশন থেকে বেরিয়ে কিছুটা পথ হাঁটলেই পৌঁছনো যায় ডাঙাপাড়া এলাকায়। ঘিঞ্জি এলাকাটিতে প্রায় চার হাজার মানুষের বাস। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বছর দু’য়েক আগে থেকে এলাকায় হেরোইনের ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে রমরমিয়ে। কাটোয়া, খামারগাছি-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে হেরোইনের পুরিয়া কিনে আনে এলাকার জনা তিনেক ব্যবসায়ী। এলাকায় তাদের অনেক ‘এজেন্ট’। এই সমস্ত এজেন্টরাই পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে খরিদ্দার জোগাড় করে। এলাকায় পুরিয়া প্রতি দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকাল থেকেই এলাকার ঝোপ-ঝাড়, স্টেশন চত্বরে বহু মানুষকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখা যায়। বাসিন্দাদের দাবি, বিড়ি-সিগারেটের মাধ্যমে মাদক সেবন করেন ওই সব লোকজন। রাতের দিকে নেশার প্রকোপ বাড়ে।
এলাকায় রেলের একটি পরিত্যক্ত আবাসন রয়েছে। সূর্যাস্তের পর থেকেই সেখানে নেশাগ্রস্তদের আনাগোনা বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
শুধু এলাকার লোকজনই নন, নবদ্বীপ, কালনা ইত্যাদি জায়গা থেকেও অনেক যুবককে সেখানে আসতে দেখা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে এক মাদক বিক্রেতাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন বাসিন্দারা। তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার পরে অনেক মাদক বিক্রেতা গা ঢাকা দিয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহখানেক যেতে না যেতেই ফের রমরমিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে ব্যবসা।
এলাকার বাসিন্দা হাসান শেখ, খোকন শেখরা জানালেন, খুব কম করেও আশপাশের প্রায় আড়াইশো জন যুবক এই নেশার শিকার। দিন দিন সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে। মাদক কেনার টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাড়ির আসবাবপত্র, এমনকী ঘটি-বাটিও বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেকে। এলাকায় বাড়ছে চুরি-ছিনতাই। আনারুল শেখ, গোলাম শেখরা বলেন, “এলাকার হাট-বাজার থেকে দেদার সাইকেল চুরি হচ্ছে ইদানীং। ছিনতাইয়ের ঘটনাও খুবই বেড়ে গিয়েছে।” এর সঙ্গে মাদকাসক্তির যোগ রয়েছে বলে তাঁদের দাবি। তাঁদের কথায়, “মাদক বিক্রি আটকানো না গেলে অপরাধ আরও বাড়বে।”
এলাকার কয়েকশো বাসিন্দা এ নিয়ে কালনার মহকুমাশাসক, পূর্বস্থলী থানা-সহ প্রশাসনের নানা জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছেন। তবে শুধু পূর্বস্থলীর ডাঙাপাড়া নয়, কালনা মহকুমার বিভিন্ন জায়গাতেই হেরোইন ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, হুগলি থেকে কালনা শহরের চড়কতলা, স্টেশন চত্বর, দাঁতনকাঠিতলা-সহ নানা জায়গায় ওই মাদক পৌঁছে যায়।
মাদক নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন নসরৎপুর পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। প্রধান চন্দনা বসাক বলেন, “বাসিন্দাদের অভিযোগপত্রে দু’জন পঞ্চায়েত সদস্যও স্বাক্ষর করেছেন। আমরা গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখছি। প্রয়োজনে পুলিশি তৎপরতা বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হবে।” পূর্বস্থলী থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাদক ব্যবসায়ীদের খোঁজে প্রায় প্রতি দিনই তল্লাশি চালানো হচ্ছে। মহকুমাশাসক ছুটিতে থাকায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। |