উন্নয়নমূলক কাজে তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ দেখালেন কংগ্রেসের উপপ্রধান। কুলটি পুরসভার ঘটনা। তৃণমূলের পুরপ্রধান অভিযোগ অস্বীকার করলেও ঘটনাকে কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূল জোট পরিচালিত পুরসভায় ব্যাপক জলঘোলা হয় বৃহস্পতিবার। পুরপ্রধান তথা কুলটির বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এ রকম না হলেই ভাল হয়। এতে অস্থিরতা বাড়ে। উন্নয়নের কাজে বাধা আসে। আলোচনার টেবিলেই এ সব মিটিয়ে নেওয়া যেতে পারে।”
উপপ্রধান তথা কংগ্রেস নেতা বাচ্চু রায়ের নেতৃত্বে দলের প্রায় ৫০০ সদস্য ও সমর্থক বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ দেখান পুরসভায়। বাচ্চুবাবুর অভিযোগ, “পুরসভার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না। এখানে রাস্তা, আলো বা পানীয় জল কিছুই নেই। বহু বার চেয়ারম্যানকে বলেছি। কিন্তু ওঁর কোনও হেলদোল নেই।” উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের অবশ্য আশ্বাস, “খুব দ্রুত আমরা এই কাজগুলি করে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” প্রসঙ্গত, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডে যথাক্রমে সিপিএম, নির্দল ও কংগ্রেসের কাউন্সিলর। এছাড়াও কংগ্রেসের হাতে আছে আরও ৫টি ওয়ার্ড। |
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিক্ষোভকারীরা কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে মাইকে স্লোগান দিতে দিতে পুরসভা চত্বরে ঢুকে পড়েন। পুরপ্রধানের উদ্দেশ্যে প্রকাশ্যেই মাইকে নিজেদের বিক্ষোভের কথা জানাতে থাকেন উপপ্রধান। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, “আড়াই বছর হল আমাদের জোট পুরসভার ক্ষমতায়। কিন্তু উল্লেখযোগ্য উন্নয়নমূলক কোনও কাজই হয়নি।” পরে স্মারকলিপিও দেন তাঁরা।
এ দিকে, উপপ্রধানের এ ভাবে প্রকাশ্যে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের মধ্যে শরিকি দ্বন্দ্বের আঁচ পেয়েছেন বিরোধী বাম কাউন্সিলরেরা। পুরসভার বিরোধী নেতা, সিপিএমের প্রিয়ব্রত সরকার বলেন, “মানুষ এ বার বুঝতে পারবেন, কেন কুলটিতে কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না। ওদের নিজেদের মধ্যেই কোনও একতা নেই। শরিকেরা তাই অধিকার চেয়ে প্রকাশ্যে চিৎকার করছেন।” সিপিএমের কুলটি জোনাল কমিটির সম্পাদক সাগর মুখোপাধ্যায় আবার কংগ্রেসের এই আন্দোলনকে লোক দেখানো ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, “জোট পরিচালিত বতর্মান পুরবোর্ড উন্নয়নমূলক কাজ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই ওরা এ সব করছে। প্রতিবাদ করার থাকলে পদ থেকে সরে দাঁড়াক কংগ্রেস।”
এই বিক্ষোভ কর্মসূচি শরিকি সাম্যে ফাটল ধরাবে না তো? বাচ্চুবাবুর সাফ জবাব, “ও সব বুঝি না। নাগরিকেরা সমস্যায় পড়েছেন। অনেক বার আলোচনা হয়েছে। ব্যবস্থা নিতে বলেছি। হেলদোল না দেখে এই আন্দোলন।” তাঁর অভিমত, উপপ্রধান আন্দোলন করতে পারবেন না, এমন বাধ্যবাধকতা কোথাও নেই।
এই ঘটনায় খুবই ক্ষুব্ধ তৃণমূল সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, বাচ্চুবাবু আসলে বেশি গুরুত্ব চাইছেন। তাঁর দুই ভাই পুরসভায় ঠিকাদারির কাজ করেন। তাঁদের বেশি সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্যই লোক-দেখানো আন্দোলন করছে কংগ্রেস। এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুব কংগ্রেসের লোকসভা কমিটির সহ-সভাপতি সনু তুলসিয়ান। তাঁর দাবি, সর্বস্তরের মানুষের স্বার্থেই তাঁদের এই কর্মসূচি। |