সাহায্য করার নামে গ্রাহকের এটিএম কার্ড হাতিয়ে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগে এক কলেজ ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে দুর্গাপুরের কোকওভেন থানার পুলিশ রোহিত রজক নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করে। উদ্ধার করা হয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা এবং পাঁচটি এটিএম কার্ড। দুর্গাপুরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, গয়ার বাসিন্দা ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনায় আ কেউ জড়িত কি না তা জানার চেষ্টা চলছে। গয়া থানার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাত ৯টা নাগাদ দুর্গাপুর স্টেশন সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে যান করঙ্গপাড়ার বাসিন্দা, বেসরকারি কারখানার কর্মী মুন্না শ্রীবাস্তব। মুন্নাবাবু জানান, তিনি এটিএম কার্ড ব্যবহারে তত সড়গড় নন। সেই সময়ে কাউন্টারে ঢোকে রোহিত। সে মুন্নাবাবুকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলে সে মুন্নাবাবুর হাতে দেয়। তখনই আসল এটিএম কার্ডটি হাতিয়ে একটি নকল কার্ড ধরিয়ে দেয়। মুন্নাবাবু জানান, তাড়াহুড়োয় তিনি কার্ডটি খেয়াল করেননি। বাড়ি ফেরার সময়ে সন্দেহ হওয়ায় তিনি ফের ওই কাউন্টারে ফিরে যান। তখনই এটিএমে দেখা যায়, সেটি জাল কার্ড। তিনি থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ পেয়ে থানা থেকে টহলদার পুলিশকে সতর্ক করা হয়। স্টেশন এলাকার বিভিন্ন এটিএম কাউন্টারের উপরে নজরদারি শুরু হয়। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএম থেকে এক যুবককে বেরোতে দেখে পুলিশের সন্দেহ হয়। মুন্নাবাবুর বয়ানের সঙ্গে ওই যুবকের চেহারার মিল থাকায় পুলিশ তাকে তল্লাশি শুরু করে। নগদ ৩০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মোট ৫টি এটিএম কার্ড মেলে। তার মধ্যে একটি মুন্নাবাবুর কার্ড। অন্যগুলি জাল। তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় রোহিত জানিয়েছে, সে গয়ার একটি কলেজে স্নাতক স্তরের পড়ুয়া। বাড়িতে অনটনের জন্যই এমন কাজ করেছে। এ দিন সন্ধ্যায় সে গয়া থেকে দুর্গাপুর এসেছিল। সে কোনও চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে কি না, তা জানার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ। |
দুর্গাপুরের বিভিন্ন এটিএম থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটছে মাঝে-মধ্যেই। স্টেশনের ওই এটিএম-টি থেকেই ২০১০-এর শুরুর দিকেই অন্তত ১০টি এমন ঘটনা ঘটে। এক রেলকর্মীর আমানত থেকে ১৮ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তিনি রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। ওই বছর এপ্রিলে রেল পুলিশ গয়ার বাসিন্দা চন্দন কুমারকে গ্রেফতার করে। উদ্ধার হয় নগদ দশ হাজার টাকা ও বেশ কিছু এটিএম কার্ড। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছিল, আলপিন ও বিশেষ ধরনের আঠা ব্যবহার করে এটিএমে কৃত্রিম যান্ত্রিক ত্রুটি তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নিত সে। পুলিশের ধারনা, এটিএম থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বড় চক্র রয়েছে। দলের কেউ ধরা পড়লেই তারা পদ্ধতি বদলে নেয়। এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পদস্থ আধিকারিক বলেন, “এটিএম কার্ড ব্যবহার করার সময়ে সতর্কতা জরুরি। কাউন্টারে যেন আর কেউ না থাকে সে ব্যাপারে নিশ্চিত থাকা উচিত। একান্ত কারও সাহায্য দরকার হলে আত্মীয়-পরিজনকে সঙ্গে নেওয়া যেতে পারে।” |