জমি ফেরত চাইল কমিটি
রঘুনাথপুরে বালাজির ইস্পাত প্রকল্প নিয়ে সংশয়
শঙ্কা ছিলই। কাটোয়ায় এনটিপিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরে এ বার নতুন জমি নীতির ‘আঁচ’ পড়ল পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে জয় বালাজি গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পেও।
জয় বালাজির প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৩২৫০ একরের মধ্যে এখনও পর্যন্ত রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে অধিগৃহীত হয়েছে (বাম জমানায়) প্রায় ১৩০০ একর। নতুন সরকারের জমি নীতি অনুযায়ী, বেসরকারি শিল্পসংস্থাকে সরাসরি জমি কিনতে হবে। সরকার মাঝখানে থাকবে না। ফলে, জয় বালাজির প্রস্তাবিত প্রকল্পের বাকি জমি পাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
জমি ফেরানোর দাবিতে মিছিল পুরুলিয়া শহরে। ছবি: সুজিত মাহাতো
রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নতুনডি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ইস্পাত, সিমেন্ট ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ছে জয় বালাজি গোষ্ঠী। ২০০৭-এর নভেম্বরে ওই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এর পর জমি অধিগ্রহণ শুরু করে শিল্পোন্নয়ন নিগম। তবে জয় বালাজি যে জমি পেয়েছে, গত চার বছরে সেখানেও কারখানা গড়ার কাজ কার্যত হয়নি বললেই চলে। সেই নিয়েও এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। অধিগৃহীত জমি ফেরতের দাবি তুলেছে স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। কমিটির কয়েকশো সদস্য বুধবার পুরুলিয়া শহরে মিছিল করে জেলাশাসকের হাতে দাবিপত্র তুলে দেন। কমিটির নেতারা বলেন, “আমরা কখনওই শিল্পায়নের বিরোধিতা করিনি। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে আমরা জমি ফেরত চাইছি।” ঘটনা হল, হস্তান্তরিত ১৩০০ একরের মধ্যে প্রায় ৬০০ একর জমিতে মাটি ফেলে সমান করা এবং ৪-৫ কিলোমিটার পাঁচিল তৈরি ও মোরাম রাস্তা ছাড়া কার্যত আর কোনও কাজই হয়নি।
জেলাশাসক অবনীন্দ্র সিংহ বলেন, “জমিদাতাদের দাবিগুলি নিগম ও রাজ্য সরকারকে জানাব।” জয় বালাজি গোষ্ঠীর তরফে অবশ্য বলা হয়েছে, অধিগৃহীত জমির ‘লিজ চুক্তি’ তারা না পাওয়ায় ঋণ পাওয়া থেকে শুরু করে আরও নানা সমস্যা হচ্ছে। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, ‘লিজ চুক্তি’ সংক্রান্ত সমস্যা শীঘ্রই মিটে যাবে। এই বিলম্বের দায় বাম-সরকারের উপরে চাপিয়ে পার্থবাবুর অভিযোগ, ওই সময় চুক্তি নিয়ে এত জটিলতা ছিল যে তার সমাধান করতেই অনেক সময় পেরিয়েছে। তাঁর দাবি, খুব শীঘ্রই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
বস্তুত, বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার যে নীতি নতুন সরকার নিয়েছে তার ‘বিরূপ’ প্রভাব নতুন বিনিয়োগে পড়ছে বলে শিল্পমহল মনে করছে। একই সঙ্গে মাঝপথে আটকে থাকা প্রকল্পগুলির ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয়ের বাতাবরণ তৈরি হচ্ছিল। জয় বালাজির ঘটনা তা আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে। শুধু জয় বালাজি নয়, রঘুনাথপুরে শ্যাম স্টিল ও আধুনিক গোষ্ঠীর ইস্পাত প্রকল্পও জমি-জটে আটকে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
সরকার জল-জমি-কয়লার বন্দোবস্ত না করে দিলে তারা এ রাজ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়বে না বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে লার্সেন অ্যান্ড টুব্রো। কাটোয়ায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এনটিপিসি-কে সরাসরি জমি কিনতে বলেছে রাজ্য সরকার। জয় বালাজিকে এখনও সরাসরি জমি কিনতে না বলা হলেও বাকি জমি কী ভাবে জোগাড় হবে, তা জানা নেই কোনও মহলের। জেলা প্রশাসনও এ ব্যাপারে উচ্চবাচ্য করছে না। শিল্পোন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা এখনও পর্যন্ত ১৭১৬ একর জমি হাতে পেয়েছি। তার মধ্যে ১৩০০ একর দেওয়া হয়েছে। পূর্বতন রাজ্য সরকারের সময় জমি অধিগ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার যে পদ্ধতি ছিল, তাতে বিশেষ কিছু পরিবর্তন হওয়ার জন্য বাকি জমি জয় বালাজিকে এখনও দিতে পারিনি।”
বাকি জমির কী হবে, সে প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেছেন, “যে জমি ওদের দেওয়া হয়েছে, সেখানে যা করার কথা ছিল, তা আগে করুক।” জয় বালাজির রঘুনাথপুর প্রকল্পের ডেপুটি ম্যানেজার উজ্জ্বল গুরুর দাবি, “লিজ-চুক্তি না হওয়ার পাশাপাশি আরও সমস্যা আছে। যে জমি আমাদের দেওয়া হয়েছে, তার বেশ কিছু অংশে বিতর্ক থাকায় জমি মালিকদের বাধায় কাজ শুরু করা যায়নি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.