চার বছরে কম করেও ৩০টি বৈঠক করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বা এনএইচএআই। তার পরেও বারাসত থেকে বনগাঁ পর্যন্ত যশোহর রোডের সমান্তরাল চার লেনের নতুন রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি হাতে আসেনি। তাই প্রকল্পের দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে ওই কেন্দ্রীয় সংস্থা। ফলে চার লেনের ওই রাস্তা তৈরির প্রকল্পটিই কার্যত ভেস্তে যেতে বসেছে।
তবে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “ওই রাস্তা নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই কাজে যদি জমি লাগে, সরকারের জমি-নীতি মেনেই তার ব্যবস্থা করা হবে।”
জমির অভাবেই যে সাড়ে ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন চার লেনের প্রস্তাবিত রাস্তাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না, এনএইচএআই-এর প্রকল্প অধিকর্তা অনিল দীক্ষিত বুধবার তা জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, চার লেনের কম কোনও সড়ক তৈরির প্রকল্প হাতে নেয় না এনএইচএআই। জমি না-পাওয়ায় এখানে চার লেনের প্রকল্প রূপায়ণ করা সম্ভব নয়। তাই তাঁরা ওই প্রকল্প ছেড়ে দিচ্ছেন। ওখানে সমীক্ষার কাজ করছিল এনএইচএআই-এর পরামর্শদাতা সংস্থা। সব দিক বিবেচনা করে তারা তাঁদের ওই প্রকল্প থেকে সরে আসার পরামর্শই দিয়েছে বলে জানান অনিলবাবু। সেই অনুসারে শীঘ্রই রাজ্য সরকারকে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেবে এনএইচএআই।
কী বলছে রাজ্য সরকার?
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যে ওই প্রকল্প ছেড়ে যাচ্ছে, তা তিনি শোনেননি বলে এ দিন জানান রাজ্যের পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন। তিনি বলেন, “এনএইচএআই বলেছিল, যতটা জমি লাগবে, তার অন্তত ৮০ শতাংশ না-পেলে ওরা কাজ করতে পারবে না। সরকার ওদের জমি দিতে পারেনি। তাই কাজ না-হওয়ায় ওদের উপরে দোষ চাপানো যাবে না।” পূর্তসচিব জানান, তাঁরা শীঘ্রই এই বিষয়ে আলোচনায় বসবেন। তিনি বলেন, “জমি অধিগ্রহণের কাজ জেলাশাসকদের। শুনেছি, সম্প্রতি কিছু জায়গায় জমি অধিগ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে।”
২০০৫ সালে বামফ্রন্ট সরকার প্রথমে যশোহর রোডকে চওড়া করে চার লেন করার পরিকল্পনা করে। কিন্তু দেখা যায়, তাতে প্রচুর বাড়ি ও দোকানঘর ভাঙা পড়বে। আসে রাজনৈতিক বাধাও। তার পরে সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, বারাসতের কাজিপাড়া থেকে বনগাঁর পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত সাড়ে ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২৭ মিটার চওড়া চার লেনের একেবারে নতুন একটি রাস্তা তৈরি করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার এই খাতে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। ২০০৬-এর ডিসেম্বরে দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থাকে সমীক্ষার ভার দেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু বাধা এল সমীক্ষার কাজ শুরু হতেই। বাধা আসে তৃণমূলের কৃষি জমি রক্ষা কমিটির কাছ থেকে। এমনকী অনেক জায়গায় জমি জরিপের কাজ করতে গিয়ে নিগৃহীত হতে হয় সংস্থার কর্মীদের। তার পরে দফায় দফায় সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে প্রশাসন। তাতেও সমস্যা মেটেনি। রাজ্যে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল জানিয়ে দেয়, কোনও রাস্তা তৈরির জন্যও জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
তার পরে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হয়েছে। ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। কিন্তু ওই প্রকল্প রূপায়ণ তো দূরের কথা, বরাদ্দ টাকা ফেরত যেতে বসেছে। কারণ, রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, কোনও কাজেই জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক জানান, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলেই প্রকল্প থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে ওই প্রকল্প রূপায়ণ করবে রাজ্যের পূর্ত দফতর। যদিও সড়কটি চার লেনের পরিবর্তে হবে দুই লেনের। আর তা করলে কেন্দ্র দেবে ৩০০ কোটি টাকা। |