নদীর এ পার-ও পার মিলিয়ে, ভারত ও ভুটানের মানস জাতীয় উদ্যানে, অন্তত ১৪টি বাঘ থাকার সচিত্র প্রমাণ মিলল।
আজ মানসে, দুই দেশের বাঘ সুমারি দলের যৌথ বৈঠকে এই সংখ্যাটিকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ফলে, মানসে বাঘ থাকার বিষয়টি এখন আর অনুমান বা দাবি নির্ভর নয়। প্রথমবার সরকারিভাবে ছবি-সহ, মানস জাতীয় উদ্যানে বাঘ থাকার বিষয়টি ‘ঘোষিত ও প্রমাণিত সত্য’। সুমারি সংগঠনগুলি ও বনকর্তাদের দাবি, পুরো মানস জুড়ে ক্যামেরা ট্র্যাপিং চালানো হলে বাঘের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে।
গত বছর, ২০ নভেম্বর থেকে, অসমের মানস জাতীয় উদ্যানের বাঁশবাড়ি ও ভুঁইয়াপাড়া রেঞ্জ এবং মানস নদীর অপর তীরে রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যানে যৌথ উদ্যোগে ক্যামেরা ট্র্যাপিং-এর কাজ শুরু হয়েছিল। অসম ও ভুটান মিলিয়ে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গতিবিধি নিয়ে সমীক্ষা চালাতে এবং বাঘ সুমারির কাজে এই প্রথম একজোট হয় ভারত-ভুটান। ১০৫৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে রয়েছে ভুটানের রয়্যাল মানস অভয়ারণ্য। অসমের দিকে, মানস বায়োস্ফিয়র ও বাঘ সংরক্ষণ অরণ্য তথা বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের পরিমাণ ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। মধ্যবর্তী অংশ দিয়ে বয়ে যাওয় মানস ও বেকি নদীর জলধারা দুই অরণ্যকে আলাদা করেছে। দুই দিক মিলিয়ে প্রথম দফায় ৬৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় সুমারি চলে। সুমারির দায়িত্ব ভারতের দিক থেকে পেয়েছিল, আরণ্যক, ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ও অশোকা ট্রাস্ট ফর রিজার্ভেশন অফ ইকলজি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (আত্রী)। ভুটানের রয়্যাল মানসে, ‘উগেন ওয়াংচু ইনস্টিটিউট অফ কনজারভেশন অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ ক্যামেরা-সহ সুমারি চালায়। ভারতের দিকে ৭০ থেকে ৮০টি ক্যামেরা ও ভুটানের দিকে ৫০টি ক্যামেরা ব্যবহার হয়েছে। |
আজ মানসের সুমারি বৈঠকে মানসের অধিকর্তা অনিন্দ্য স্বরগোয়ারি, ভুটানের রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যানের অধিকর্তা তেনজিং ওয়াংচুকের পাশাপাশি আরণ্যকের তরফে বাঘ বিশেষজ্ঞ ফিরোজ আহামেদ, বিভূতি লহকর, ডব্লিউডব্লিউএফ-এর করফে জিমি বরা, অমিত শর্মা ও আত্রীর তরফে নীরজ কাকতি মানসে হাজির ছিলেন।
বৈঠকে ক্যামেরা ট্র্যাপিং থেকে পাওয়া ছবি ও তথ্য বিচার করে সিদ্ধান্তে আসা হয়, দুই পার মিলিয়ে মোট ১৪টি বাঘের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে ৭টি পুরুষ ও ৬টি স্ত্রী বাঘ। একটি বাঘের লিঙ্গ নির্ধারণ করা যায়নি।
ফিরোজ বলেন, “দুই দেশ মিলিয়ে মাত্র তিনটি রেঞ্জের ফলাফল এসেছে। পুরো মানসে নিশ্চয়ই আরও বেশি বাঘ মিলবে। সুমারির পরবর্তী পর্যায়ের কাজ চলছে।” ভারত ও ভুটান মিলিয়ে মানস জাতীয় উদ্যানের যৌথ সংরক্ষণ ও বাঘের গতিবিধি ‘ট্র্যাক’ করার বিষয়টি নিয়েও চূড়ান্ত সমঝোতায় আসছেন দুই দেশের বনকর্তারা। বাঘ ছাড়াও, হাতি, গন্ডার, ভালুক, পিগমি হগ, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান-সহ অন্তত ২৩টি প্রথম তফসিলভুক্ত প্রাণীর বাস মানসে। সম্ভবত, আগামী বছরের বিশ্ব বাঘ ফোরামের বৈঠকেই এই যৌথ উদ্যোগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। অন্য দিকে, আজ কাজিরাঙার কোহরা রেঞ্জে, একটি বাঘের মৃতদেহ মিলেছে। বাঘের শরীরের ক্ষত দেখে চিকিৎসকদের সন্দেহ, অন্য বাঘের সঙ্গে মারামারিতে বাঘটির মৃত্যু হয়েছে। |