সম্পাদকীয় ১...
যুক্তরাষ্ট্রের দুর্ভাগ্য
রাজ্যে রাজ্যে লোকায়ুক্ত কি থাকিতেই হইবে? মন্ত্রী ও অফিসারদের দুর্নীতির উপর নজরদারির জন্য কেন্দ্রীয় তথা জাতীয় স্তরে যেমন লোকপাল, রাজ্য স্তরে তেমনই লোকায়ুক্ত নামক প্রতিষ্ঠানটি গঠনের প্রস্তাব। অনেকগুলি রাজ্যে এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বর্তমান, কিন্তু কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য স্তরের প্রতিষ্ঠানগুলিকে একই আইনি কাঠামোর আওতায় আনিবার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত এবং মঙ্গলবার লোকসভার অনুমোদনপ্রাপ্ত বিলটিতে লোকায়ুক্ত গঠনের কথাও সংযোজন করা হইয়াছে। এই প্রেক্ষিতেই লোকসভার বিতর্কে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডি এম কে’র প্রতিনিধিরা প্রশ্ন তুলিয়াছিলেন, রাজ্যে লোকায়ুক্ত থাকিবে কি না, তাহা রাজ্যের সরকার তথা আইনসভার বিচার্য, কেন্দ্র কেন ইহাতে নাক গলাইবে? শরিকদের আপত্তি মানিয়া লইয়া প্রধান শাসক দল কংগ্রেস বিল সংশোধন করিতে সম্মত হয় এবং সংশোধিত বিলটিই শেষ অবধি লোকসভায় অনুমোদিত হয়। তাহাতে বলা হইয়াছে, কোনও রাজ্যে লোকায়ুক্ত থাকিবে কি থাকিবে না, তাহা হইবে সেই রাজ্যের ইচ্ছাধীন।
লোকপাল সংক্রান্ত বহুবিধ তর্কবিতর্কের ভিড়ে লোকায়ুক্ত সংক্রান্ত এই ঘটনাটি তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব পাইবে বলিয়া মনে হয় না। কিন্তু এই ঘটনার অন্তর্নিহিত বিষয়টির তাৎপর্য বিপুল। সেই বিষয়টির নাম যুক্তরাষ্ট্রীয়তা। লোকায়ুক্তের মতো রাজ্য স্তরের একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যাহা কিছু বিচার বা বিবেচনা করিবার, তাহা রাজ্য স্তরেই সম্পাদন করা উচিত ইহা যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ। রাজ্যের অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাহার উপর লোকায়ুক্ত চাপাইয়া দেওয়া তো অন্যায় হস্তক্ষেপ বটেই, এই বিষয়ে কেন্দ্রের কোনও রূপ ভূমিকাই থাকা উচিত নয়, বিভিন্ন রাজ্য যদি লোকায়ুক্ত নামক প্রতিষ্ঠানটিকে বিভিন্ন ভাবে গঠন করিতে চাহে, বা আদৌ না করিতে চাহে, সেই স্বাধীনতা তাহাদের হাতে সম্পূর্ণ ভাবে ছাড়িয়া দেওয়া জরুরি। ইহা নিছক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশ্ন নয়, ইহা ভারতীয় শাসনতন্ত্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় আদর্শের প্রতি মর্যাদার প্রশ্ন। তাহা হইলে কেন্দ্রীয় সরকার কেন এই বিষয়ে নাক গলাইয়াছে?
ইহার উত্তর নিহিত আছে ভারতীয় শাসনতন্ত্রের ইতিহাসে। সংবিধান প্রণেতারা এই দেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন। বৈচিত্রধর্মী ভারতের পক্ষে অন্য কোনও তন্ত্র উপযুক্ত ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের মূল কাঠামোটিতেই কিছু কিছু এককেন্দ্রিক ঝোঁক ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নেহরুর নেতৃত্বে প্রথম এক দশকে রাজ্যগুলিকে এই শাসনতন্ত্র পরিচালনায় অনেকখানি স্বাধীনতা ও মর্যাদা দেওয়া হইয়াছিল। ইন্দিরা গাঁধীর জমানায় সেই অবকাশ খর্বিত হইতে শুরু করে, রাজ্যের উপর কেন্দ্রের সাংবিধানিক এবং অ-সাংবিধানিক আধিপত্য জোরদার হইতে থাকে। নব্বইয়ের দশক হইতে ভারতীয় রাজনীতির কাঠামো ভাঙিতে শুরু করিলেও, রাজ্য স্তরে কেন্দ্রের শাসক গোষ্ঠীর আধিপত্যের অবসান হইলেও কেন্দ্রের উপর বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যের নির্ভরশীলতা কমে না। তাহার একটি কারণ, রাজ্য স্তরের রাজনীতিকরাও কেন্দ্রীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সরব হন না। তৃণমূল কংগ্রেস লোকায়ুক্তের প্রশ্নে যে প্রতিবাদ জানাইয়াছে, সাম্প্রতিক অতীতে শিক্ষা নীতি সংস্কারের প্রশ্নে তাহা জানায় নাই, কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে শিক্ষার ক্ষেত্রে রাজ্যের উপর কর্তৃত্বের মাত্রা বাড়াইয়াছে, সরকারের শরিক হইয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাহা মানিয়া লইয়াছেন। কেন? অনুমান করা যায়, রাজ্যের স্বাধীন সিদ্ধান্ত লইবার নৈতিক দাবিকে তিনি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন নাই। তিনি একা নহেন, সাধারণ ভাবে ভারতীয় রাজনীতিকরা কেন্দ্রের আধিপত্যকে ‘স্বাভাবিক’ বলিয়া মানিয়া লইতে অভ্যস্ত হইয়াছেন। ইহা ভারতীয় গণতন্ত্রের দুর্ভাগ্য। যুক্তরাষ্ট্রীয়তাই এই দেশের গণতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি শক্তির উৎস হইতে পারে। রাজনীতি যত গভীর হইবে, ততই এ কথা অধিকতর সত্য হইবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.