কারণ নিয়ে দোষারোপ
১০০ দিনে পিছিয়ে জেলা, ঘাটতি মেটাতে পরিকল্পনা
কশো দিনের কাজে পিছিয়ে পড়েছে বর্ধমান জেলা। জেলার প্রায় সমস্ত ব্লকেই গত বছরের তুলনায় এ বার এই প্রকল্পে কম কাজ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক তথা এই প্রকল্পের বর্ধমানের নোডাল অফিসার ওঙ্কার সিংহ মিনা। তিনি বলেন, “জেলায় গড়ে ৩০ দিন করে কাজ দেওয়া গিয়েছে মানুষকে। যা সারা রাজ্যের গড়ের তুলনায় যথেষ্ট কম।” পিছিয়ে পড়া জেলাগুলিকে চিহ্নিত করে ঘাটতি মেটানোর উদ্যোগ হয়েছে বলে জানান জেলাশাসক।
একশো দিনের কাজে জেলার এ ভাবে পিছিয়ে পড়া নিয়ে পরস্পরকে দোষারোপ করেছে রাজনৈতিক দলগুলি। সিপিএমের দাবি, রাজ্যে পালাবদলের পরে তাদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির কাজে বাধা দেওয়ার জন্যই এমন পরিস্থিতি। তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘পরিবর্তনের’ পরে দুর্নীতিগ্রস্ত সিপিএম প্রধানেরা পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রকল্প ব্যাহত হয়েছে। জেলাশাসকের মতে, নির্বাচনের পরে কিছু গোলমাল হলেও, এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। তাই ঘাটতি মিটিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পিছিয়ে পড়া পঞ্চায়েতগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। পিছিয়ে পড়ার কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে। সমস্ত পঞ্চায়েত যাতে এই প্রকল্পের কাজ ঠিক মতো করতে পারে, তার জন্য একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “একশো দিনের কাজের ক্ষেত্র বাড়াতে হবে। শুধু রাস্তা তৈরি বা পুকুর সংস্কার নয়, এখন থেকে নদীবাঁধ, বিশেষত এক্স-জমিদারি বাঁধ, সেচ ক্যানাল ইত্যাদি সংস্কার, মাঠ নালা, রাস্তার ধারের গার্ডওয়াল ইত্যাদি তৈরির কাজও করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়।”
নিজস্ব চিত্র।
জেলা প্রশাসনের ওই প্রতিবেদনে ১২টি ব্লকের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, গত বছরের তুলনায় মোট শ্রম দিবস সৃষ্টি ও মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে ১২টি ব্লকই পিছিয়ে পড়েছে। জানানো হয়েছে, গত বছর নভেম্বরে খণ্ডঘোষ ব্লকে গড় শ্রমদিবস ছিল প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ। এ বার তা দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার লক্ষের কিছু বেশি। মেমারি-২, রায়না-১ ও ২ ব্লকে গত বারের তুলনায় এ বার অর্ধেকেরও অনেক কম শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে। আউশগ্রাম-১ ও ২, জামালপুর, মেমারি-১ ব্লকের ক্ষেত্রেও এই সংখ্যা যথেষ্ট কম।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, খণ্ডঘোষে গত বছর অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রকল্পে ব্যায় হয়েছিল প্রায় ২৪২৬ লক্ষ টাকা টাকা। এ বার অক্টোবরে তা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০০ লক্ষে। মেমারি ২, রায়না ১ ও ২, বর্ধমান ১, সব ব্লকেই অনেক কম টাকা ব্যয় হয়েছে। ১২টি ব্লকের মধ্যে একমাত্র ভাতরে গত বারের তুলনায় অক্টোবর পর্যন্ত ৭৫.০৯ লক্ষ টাকা বেশি খরচ হয়েছে। জেলাশাসক আরও জানান, চলতি আর্থিক বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পে জেলায় মোট ১৫৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ৭৭ লক্ষ শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে।
জেলায় ২৭৭টির মধ্যে ২০২টি পঞ্চায়েত রয়েছে বামফ্রন্টের দখলে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলের দাবি, চলতি আর্থিক বর্ষে যে অর্থ ওই প্রকল্পে খরচ হয়েছে, তার শতকরা ৭০ ভাগই হয়েছিল বিধানসভা ভোটের আগে। তার পরে তৃণমূলের ‘নৈরাজ্যের’ শিকার হয়েছে পঞ্চায়েতগুলি। তাঁর অভিযোগ, “প্রধানদের মারধর করা হচ্ছে। অনেক পঞ্চায়েত সদস্য বা প্রধানকে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ তুলে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় দশ জন প্রধানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তাই একশো দিনের কাজের পরিবেশই নেই।”
ভাতার ব্লকের বড়বেলুন ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “পঞ্চায়েতের এই প্রকল্পে ব্লকের কর্মীদের সক্রিয় সহায়তা মেলেনি। ফলে উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।” তাঁর মতে, “প্রশাসন যতই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই ঘাটতি মেটানোর নির্দেশ দিক, ধানকাটা ফেলে কেউ এখন ১০০ দিনের কাজ করতে আসবেন না।”
ভাতারের বিধায়ক তথা তৃণমূল নেতা বনমালী হাজরা অবশ্য প্রকল্পের এই পরিস্থিতির জন্য তাঁর দলের কর্মীরা দায়ী, এ কথা মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “যে সব সিপিএম প্রধানেরা দুর্নীতি করেছেন, তাঁরাই ভয়ে ভুগছেন। অনেকে মানুষকে একশো দিন প্রকল্পের হিসেব দেওয়ার ভয়ে পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করেছেন। এর পিছনে আমাদের দায় কোথায়?” জেলা কংগ্রেস নেতা কাশীনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “প্রশাসনের আচমকা ঘুম ভেঙেছে। আধিকারিকেরা এখন খেয়াল করছেন, গত বছরের চেয়ে জেলা এ বার পিছিয়ে পড়েছে। তাই এখন তাঁরা তেড়েফুড়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু এই পিছিয়ে পড়াটা যেমন এক দিনে ঘটেনি, তেমনি ঘাটতি মেটানোও সহজ হবে না।”
জেলাশাসক অবশ্য বলেন, “নির্বাচনের পরে কিছুটা গোলমাল হলেও এখন আর পঞ্চায়েত ঘেরাও করে একশো দিনের কাজের হিসেব চাওয়ার ঘটনা ঘটছে না। তাই আমরা বিভিন্ন ব্লকে এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে চাইছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.