নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
রেশন দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরেই নড়েচড়ে বসল বীরভূম জেলা খাদ্য দফতর। বরাদ্দের চেয়ে কম পরিমাণে কেরোসিন তেল গ্রাহকদের বিলি করার অভিযোগে মল্লারপুরের পশ্চিমপাড়ার রেশন ডিলার কণিকা মণ্ডলকে সাসপেন্ড করল খাদ্য দফতর। পাশাপাশি ওই ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করার কথাও ভাবছে খাদ্য দফতর। তবে, তার আগে ওই ডিলারকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য পেশের জন্য কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব সন্তোষজনক না হলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
রেশন বিলি নিয়ে ক্ষোভের জেরে রবিবার বিকেলে ওই রেশন ডিলারের বাড়ির কোলাপ্সিবল গেট ভেঙে বাড়ির একতলায় থাকা রেশন দোকানে আগুন লাগিয়ে দেন কয়েকশো উত্তেজিত গ্রাহক। ঘটনার আগেই বাড়ি ছেড়ে পালান কণিকাদেবী, তাঁর স্বামী অনাথবন্ধু মণ্ডল-সহ পরিবারের সদস্যেরা। দীর্ঘ দিন ধরেই কণিকাদেবী ও তাঁর স্বামীর উপরে ক্ষোভ ছিল রেশন গ্রাহকদের। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার অন্য ডিলারেরা ঠিকঠাক মাল দিলেও এই দম্পতি কম পরিমাণ মাল দেন। বিশেষ করে ২৫০ মিলিলিটার কেরোসিনের জায়গায় ২০০ মিলিলিটার দেওয়া নিয়ে গ্রাহকদের ক্ষোভ ছিল সবচেয়ে বেশি।
সোমবার সকালে এলাকায় যান ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের খাদ্য পরিদর্শক বিমান চট্টোপাধ্যায়। তিনি এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। কেরোসিন তেল পরিমাণে কম দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে সত্যতা পেয়ে বিমানবাবু বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন। এর পরেই ডিলারকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিমানবাবু বলেন, “এ সপ্তাহের জন্য বরাদ্দকৃত গ্রাহক পিছু ২৫০ মিলিলিটার করে কেরোসিন তেল ওই ডিলার দিয়েছেন কি না, তা এ দিন এলাকায় গিয়ে তদন্ত করে দেখেছি। ওই ডিলার যে ২০০ মিলিলিটার করে তেল দেন, সে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গিয়েছে। আরও খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এলাকার অন্য রেশন ডিলারেরা ২৫০ মিলিলিটার করেই গ্রাহকদের তেল দিয়েছেন।”
কম কেরোসিন দেওয়ার জন্যই যে পশ্চিমপাড়ার গ্রাহকদের মধ্যে মূলত ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তা-ও এ দিন মেনে নিয়েছেন ব্লক খাদ্য পরিদর্শক। তাঁর কথায়, “এর পাশাপাশি ওই ডিলার যে বিকল্প রেশন কার্ড তৈরির আবেদনের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সঙ্গে সহযোগিতা করতেন না, তার প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। সমস্ত কিছুই আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করেছি।”
রামপুরহাট মহকুমা খাদ্য নিয়ামক তপন ধীবরের বক্তব্য, “ওই রেশন ডিলার সম্পর্কে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা না পড়লেও গ্রাহকেরা দীর্ঘদিন যাবত মৌখিক অভিযোগ করেছেন। আমরা তাঁকে সতর্কও করেছিলাম। তবু এ সপ্তাহে গ্রাহকদের বরাদ্দ কেরোসিনের চেয়ে উনি কম দিয়েছেন। আমরা জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।”
অন্য দিকে, এ দিনও কণিকাদেবী বা তাঁর স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁরা বাড়িও ফেরেননি। তবে রেশন দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনার জেরে রবিবার রাতে পুলিশ এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালায়। ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারহাত আব্বাস। আইন হাতে তুলে নিয়ে দোকানে আগুন দেওয়া, জাতীয় সড়ক অবরোধ এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা রুজু হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ জানান, ঘটনার পরেই এলাকাটি কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে রয়েছে। সে জন্য এখনও পর্যন্ত অবশ্য কাউকে পুলিশ গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি। |