গত কয়েক সপ্তাহে হু হু করে নেমেছে তাপমাত্রা। ফলে গলসি ১ ও কাঁকসা ব্লক মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা কৃষি দফতরের। চাষিদেরও আশঙ্কা, ঠান্ডায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বোরো ধানের বীজতলা। তবে কৃষি দফতরের দাবি, তাপমাত্রার পারদ হঠাৎ নেমে যাওয়ায় সর্ষে, আলু, গম এবং শীতকালীন মরসুমি সব্জি চাষে চাষিরা বিশেষ উপকার পাবেন।
নিয়ম অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বোরো ধানের বীজতলা তৈরির মরসুম। সেই হিসেবে ওই দুই ব্লকে প্রয়োজনীয় প্রায় ৬০ শতাংশ বীজতলা তৈরির কাজ শেষ করে ফেলেছেন চাষিরা। কিন্তু প্রবল ঠান্ডায় ‘কোল্ড ইনজুরি’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ধানের চারা। ক্রমশ সাদা বা হলদেটে রং ধারণ করছে সেগুলি। কোথাও আবার ঝলসা রোগের আশঙ্কা করছে কৃষি দফতর। এই চারা নষ্ট হয়ে গেলে নতুন করে বীজতলা তৈরি করে বোরো ধানের চাষ করলে উৎপাদন মোটেই আশানুরূপ হবে না। কাজেই ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলা বীজতলার ধানের চারা কী ভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায় চাষিদের সেদিকে জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি দফতর। |
ফেলা হয়েছে ধানের বীজ। পানাগড়ে বিকাশ মশানের তোলা ছবি। |
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সারা রাত শিশির পড়ে জমির জল খুবই ঠান্ডা হয়ে যায়। তাছাড়া শিশির জমে যায় ধান চারার পাতায় পাতায়। এই দুইয়ের হামলায় চারার বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। একই সঙ্গে ব্যাহত হয় গাছের খাবার তৈরির প্রক্রিয়া। ফলে উপযুক্ত পুষ্টি পায় না ধানের চারা। ধীরে ধীরে সবুজ পাতার রং হলদে হয়ে যেতে থাকে। পরে তা সাদা হয়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে, দুর্গাপুর মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ, প্রতি সন্ধ্যায় বীজতলায় জল দিয়ে পরের দিন সকালে সেই জল বের করে দিতে হবে। এতে রাতের ঠান্ডা জলের সংস্পর্ষ থেকে রেহাই পাবে ধানের চারা। এছাড়া প্রতি দিন সকালে বীজতলার ধানচারার উপর দিয়ে দড়ি টেনে দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। এতে সারা রাত ধরে জমে থাকা শিশির ঝরে যাবে। জগন্নাথবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতিতে কোনও ওষুধ দিয়ে কাজ হবে না। বরং টোটকা হিসাবে এই দু’টি পদ্ধতি প্রয়োগ করলে সুফল আসবে।” ঝলসা হলে ছত্রাক-নাশক প্রয়োগ করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, এমন ঠান্ডায় সর্ষের ফলন ভাল হবে বলে জানিয়েছে কৃষি দফতর। গলসি ১ ব্লকের প্রায় আটশো হেক্টর জমিতে সর্ষের চাষ হয়। মানকর এলাকার চাষি বুধন মণ্ডল সর্ষে চাষ করেছেন দু’বিঘা জমিতে। কৃষি দফতরের এমন আশ্বাসে বেজায় খুশি তিনি। অন্য দিকে, দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের ইছাপুর এলাকার চাষি সুজয় মণ্ডলের মাথায় হাত। বোরো ধান চাষ করবেন বলে এ বার তিনি জমিতে সর্ষে চাষ করেননি। কিন্তু এখন আর কোনও উপায় নেই। তাঁর আক্ষেপ, “শুরুতেই এমন বিপত্তি হল। জানি না হয়তো বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।”
কৃষি দফতরের অবশ্য আশ্বাস, ঠান্ডা কমে গেলে ধীরে ধীরে ধানের চারা আবার সবুজ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ধানের ফলন আসতে দিন কুড়ি দেরি হতে পারে। সেই সময় আবহাওয়া অনুকূল থাকাটা জরুরি। যদি না থাকে তবেই বড় ক্ষতির আশঙ্কা থাকবে। |