‘খোঁড়া বাদশা’র স্ত্রী নুরজাহান চোলাইয়ে ‘দ্বিতীয় দফায়’ ভেজাল মেশানোতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষমদ-কাণ্ড ঘটেছিল বলে দাবি করেছিল সিআইডি। ঘটনা কি তাই? সরাসরি জবাব দিল না সিআইডি-র হাতে ধরা পড়া নুরজাহান। রবিবার ডায়মন্ড হারবার আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে এলাকায় শাকিলা বিবি ওরফে মন্দা হালদার নামেও পরিচিত ওই মহিলার দাবি, “চোলাইয়ের কাজ আমি একা দেখতাম না। আরও অনেকে ছিল।” নুরজাহান এবং ‘বাদশা’র তিন শাগরেদ— শম্ভু পাত্র, ছোট্টু মোদক এবং বক্রেশ্বর মোদক ওরফে বক্করকে শনিবার রাতেই ক্যানিং থানার বিদ্যাধরপুরে শম্ভুর বাড়ি থেকে ধরেছে সিআইডি। তবে ‘খোঁড়া বাদশা’ এখনও ফেরার।
‘বাদশা’ ও তার পরিবারের উপরে এলাকাবাসীর ক্ষোভের কথা মাথায় রেখে এ দিন সকাল থেকেই ডায়মন্ড হারবার আদালতে র্যাফ ও বিরাট পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল। ডায়মন্ড হারবারের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম অলকেশ দাসের এজলাসে এ দিন হাজির করানো হলে ধৃতদের ১৪ দিন পুলিশি-হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কোনও আইনজীবী অভিযুক্তদের পক্ষে দাঁড়াননি। |
গত ১৪ ডিসেম্বর সংগ্রামপুরে বিষাক্ত চোলাই খেয়ে মারা যান ১৭২ জন। প্রাথমিক তদন্তের পরে সিআইডি দাবি করেছিল, লাভের অঙ্ক বাড়াতে চোলাইয়ে বিষাক্ত ভেজাল মেশাত ‘খোঁড়া বাদশা’। কিন্তু ভেজালের মাত্রা কম থাকায় এত দিন গণ্ডগোল ঘটেনি। ১৪ ডিসেম্বর যে চোলাই থেকে ওই বিষক্রিয়া হয়, তাতে প্রথমে ভেজাল মেশায় ‘বাদশা’। পরে নুরজাহান আরও এক বার ভেজাল মেশায় ওই চোলাইতে। তাতেই বিপত্তি ঘটে।
তদন্তের শুরুতেই বাদশার পাশাপাশি নুরজাহানের খোঁজেও মগরাহাটের পশ্চিম বিলন্দপুরে ‘বাদশা’র বাড়িতে হানা দেন সিআইডি অফিসারেরা। কিন্তু তাদের খোঁজ মেলেনি। ঘটনার পরে ১৩ জনকে ধরেছিল জেলা পুলিশ। তাদের মধ্যে ৭ জনকে জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ঘটনার দিনই কয়েকজন ‘ক্যারিয়ারের’ সঙ্গে উধাও হয়ে যায় নুরজাহান। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে নুরজাহান-সহ সন্দেভাজনদের ‘স্কেচ’ও আঁকায় পুলিশ। এর মধ্যেই বিভিন্ন সূত্রে গোয়েন্দাদের কাছে খবর আসে, ক্যানিংয়ে শম্ভুর বাড়িতে রয়েছে নুরজাহান। সেই খবর পেয়ে দিনকয়েক আগে সিআইডি-কর্তারা ছ’জনের একটি দলকে ক্যানিংয়ে পাঠান। গোয়েন্দারা একটি পর্যটন সংস্থার কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে ওই পাড়ায় খোঁজখবর শুরু করেন। ‘নিশ্চিত’ হওয়ার পরে শনিবার রাতে হানা দিয়ে ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের আনা হয় ভবানীভবনে। রাতভর ধৃতদের জেরা করেন তদন্তকারী অফিসারেরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে বক্করের বিরুদ্ধে পাঁচ বছর আগে রায়দিঘিতে একটি ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
সিআইডি সূত্রের খবর, এ দিন নুরজাহান তাদের জানিয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর সে পশ্চিম বিলন্দপুরের বাড়িতেই ছিল। এক গোয়েন্দা-কর্তার দাবি, “ওই মহিলা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে, সে বাদশার চোলাই কারবারে যুক্ত। কিন্তু কী ভাবে ওই চোলাই-বিভ্রাট হল এবং বাদশা কোথায় লুকিয়ে রয়েছেসে ব্যাপারে মুখ খোলেনি। জেরা-পর্ব চলবে। |