গৌতম ভট্টাচার্য • মেলবোর্ন |
শনি এবং রোববার টিমের অনুশীলন। আম্পায়ারদের সঙ্গে বৈঠক। ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা বলা। নানান প্রাণান্তকর ব্যস্ততার মধ্যে সাকুল্যে মিনিটসাতেক সময় বের করেছিলেন। আর তখনই মহেন্দ্র সিংহ ধোনি একান্তে কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। লোকেশন: এমসিজি ড্রেসিংরুমের ঠিক বাইরেটা।
|
প্রশ্ন: চূড়ান্ত সীমান্ত জয়ে ধোনি উদগ্র মনোনিবেশ করছেন এটা লিখতে পারি?
ধোনি: চূড়ান্ত সীমান্তটা আবার কী?
প্র: এই যে ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার। অস্ট্রেলিয়া এসে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। যা আগে কখনও হয়নি।
ধোনি: প্রত্যেকটা সিরিজের আগেই আমি শুনি ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার। কোনওটাই নাকি কখনও হয়নি। আগের বার অস্ট্রেলিয়া এল আমাদের ওখানে। সবাই বলল এত বড় বিতর্কের পর প্রথম সাক্ষাতের সিরিজ জেতাটা সীমান্ত পার করার মতোন। সেটা হল। এ বার ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে আসার পর শুনলাম দেশের মাঠে ওদের বিরুদ্ধে আমরা ক্বচিৎ সিরিজ জিতেছি। যত দুর্বল টিম নিয়েই ওরা আসুক ওদের হারানোটা নাকি বিরাট সীমান্তজয় হবে। তার আগে বিশ্বকাপের সময় শুনেছিদেশের মাঠে বিশ্বকাপ আজ অবধি কেউ কখনও জেতেনি। তা-ও আঠাশ বছর ট্রফিটা অধরা। বিশ্বকাপ জিততে পারাই হবে চূড়ান্ত সীমান্ত অধিকার। এখন আবার আপনি বলছেন, এটাই ফাইনাল ফ্রন্টিয়ার।
জীবনে চূড়ান্ত সীমান্ত কি আর শেষ হবে না (হাসি)?
প্র: কিন্তু ভারতের নয় বারের সফরে এটা তো সত্যি কখনও হয়নি। কোনও ভারতীয় দল অস্ট্রেলিয়া থেকে সিরিজ জিতে ফিরতে পারেনি।
ধোনি: এত দূরের ব্যাপার নিয়ে এখন ভাবছি না।
প্র: তা হলে ভাবনাটা কী? শুধু মেলবোর্ন টেস্ট?
ধোনি: মেলবোর্ন টেস্টের গোটাটা নয়। এক একটা সেশন। লক্ষ্যটা বেশি বিস্তৃত হয়ে গেলে অনর্থক ছড়িয়ে যায়। ম্যানেজ করা যায় না। তার পর বর্তমান থেকে সরে যাওয়ার ভয় থাকে।
তাই আমার বরাবরের নীতি যাএ বারের সিরিজেও তাই। টেস্টকে ছোট ছোট অংশে ভাঙো। আর সেই অংশগুলোতে জেতার চেষ্টা করো। তা হলেই গোটা যুদ্ধ জেতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেল। প্রথম লক্ষ্য, কালকের ফার্স্ট সেশন জেতা। আপনাদের ভাষায় সীমান্তজয় নয় (হাসি)।
প্র: এই যে মাঝে বিশ্রাম পেলেন...
ধোনি: বিশ্রাম আবার কোথায়? ক’টা তো মাত্র দিন।
প্র: বলছিলাম সেই সময়ে নাকি রাঁচির ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আপনাকে ব্রেন ম্যাপিংয়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল?
ধোনি: বাড়িতে চিঠি এসে থাকলে জানি না। আমি তো মাঝখানে আর বাড়িই ফিরতে পারিনি।
প্র: কিন্তু ব্যাপারটা নিশ্চয়ই জানেন যে আপনার ব্রেন ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে ওরা জানতে চায় মস্তিষ্কের কোনও কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনে প্রচণ্ডতম চাপের মধ্যেও ঠিকঠাক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়?
ধোনি: হ্যাঁ শুনেছি। আমার এতে আপত্তি নেই। কিন্তু জানতে ইচ্ছে করছে কী ভাবে পরীক্ষাটা হবে?
প্র: ওয়েবসাইটে যা পড়েছি তত সফল নন এমন একজন ক্রীড়াবিদেরও নাকি আপনারই সঙ্গে ব্রেন ম্যাপিং হবে। দু’টো পাশাপাশি রেখে বোঝার চেষ্টা হবে কেমিক্যাল রিঅ্যাকশনে কী তফাত। মস্তিষ্কের কোষে কী থাকলে একটা লোক ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। অথচ আর একটা লোক ঠিক সমপরিমাণ চাপে ভেঙে পড়ে। মাথায় বিভিন্ন তার-টার বেঁধে চাপ এবং ভয়ের কিছু কাল্পনিক পরিস্থিতি সামনের মেশিনে তুলে আনা হবে। তার পর বিচার করা হবে তুলনামূলক রিআ্যাকশন।
ধোনি: এ সব করতে গিয়ে আমায় ইঞ্জেকশন দেবে কি?
প্র: বলতে পারছি না।
ধোনি: যদি ইঞ্জেকশন দেয় তা হলে আমি ব্রেন ম্যাপিংয়ে নেই। আমার প্রয়োজনও নেই। যদি ওরা বলে, না, গোটা শরীরে সুচ-টুচ না বিঁধিয়েই পরীক্ষাটা করা সম্ভব তা হলে সহযোগিতা করতে রাজি আছি।
প্র: অনেক বিদেশি ব্যাঙ্ক। তা ছাড়া কর্পোরেটদেরও অভিযোগ, কোনও লিডারশিপ সামিটে আপনাকে পাওয়া যায় না। লোভনীয় পেশাদারি শর্তেও আপনি আসতে অনিচ্ছুক থাকেন। অথচ আপনি আধুনিক ভারতে নেতা হিসেবে সফলতম ব্র্যান্ড।
ধোনি: প্রধান সমস্যা সময়। খেলতে খেলতে এত কম সময় হাতে পাই যে সেটা পরিবারের জন্য রাখি। এগুলো করতে হলে সেই পরিবারের থেকে টাইম বার করতে হবে। সেটা চাই না। তা ছাড়া ওই গুছিয়ে বক্তৃতা দেওয়া-টেওয়া আমার ধাতে নেই। আমি বড়জোর ছেলেদের সঙ্গে কথা বলতে পারি।
প্র: তা হলে নতুন প্রজন্ম শিখবে কী করে আপনি যদি ‘শেয়ার’ না করেন?
ধোনি: করব। এখনও তার সময় হয়নি। খেলাটা ছাড়ি। |