শহরের প্রাণকেন্দ্রের ফুসফুস ম্যাকেঞ্জি ময়দানকে বাঁচাতে উদ্যোগী হল জঙ্গিপুর পুরসভা। নিষিদ্ধ করা হল সার্কাস এবং যাত্রা। রাজনৈতিক সভা করার অনুমতি অবশ্য এখনও পাওয়া যাবে। তবে সভামঞ্চ বাঁধতে হবে নির্দিষ্ট স্থানেই। পুরসভা চায়, ওই মাঠ কেবল খেলাধুলোর জন্যই ব্যবহৃত হোক।
জঙ্গিপুরের সাধারণ মানুষও তাই চান। এই শহরের খেলার মাঠ প্রায় নেই বললেই চলে। ম্যাকেঞ্জি ময়দানটিই শহরে খেলার উপযোগী সব থেকে ভাল মাঠ। কিন্তু উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মাঠটি ক্রমশই খেলাধুলোর পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। প্রায় এক বছর ধরে মাঠটি সংস্কারের কাজ চলছে। তা প্রায় ৯০ শতাংশ শেষও হয়ে গিয়েছে। জানুয়ারির মধ্যেই মাঠটি ব্যবহারের উপযুক্ত করে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে পুরসভা। এই মাঠেই হবে কে কে এম ফাইনাল।
গায়ে গায়ে লাগোয়া দু’টি মাঠ মিলে মোট প্রায় ১২০০ বর্গমিটারের এই ম্যাকেঞ্জি ময়দানের মালিক দু’টি হাইস্কুল। বছর দুই আগে ওই দুই হাইস্কুল খেলাধুলোর উন্নতির স্বার্থে সেখানে ক্রীড়াঙ্গণ গড়ে তোলার অনুমতি দেয়। |
তার ভিত্তিতে জঙ্গিপুর পুরসভা দু’টি মাঠকে একসঙ্গে করে সেখানে ছোট একটি স্টেডিয়াম গড়ার লক্ষ্যে ৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ইতিমধ্যেই তার ৮০ লক্ষ টাকার সংস্থান পুরসভা নিজেদের উদ্যোগে করে ফেলতে পেরেছে। সেই টাকা দিয়েই আপাতত মাঠে তৈরি হয়েছে কয়েকটি ইন্ডোর ও আউটডোর খেলার পরিকাঠামো। পুরপ্রধান মোজাহারুল ইসলাম বলেন, “বড় স্টেডিয়াম নয়। আমরা যে ক্রীড়াঙ্গন গড়ছি সেখানে ফুটবল ক্রিকেট ছাড়াও ব্যাডমিন্টন, টেবিলটেনিস খেলার ব্যবস্থা থাকবে। জিমন্যাসিয়াম হবে। অ্যাথলিটদের জন্যও ব্যবস্থা থাকবে।” ফুটবল মাঠের সীমানার বাইরে হবে আলাদা ক্রিকেট মাঠ। ক্রিকেট পিচ তৈরির জন্য আনা হবে বিশেষজ্ঞদের। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মাঠ সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ। বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। করা হচ্ছে পানীয় জলের ব্যবস্থাও।
পুরসভা সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, এই অবস্থায় যাত্রা বা সার্কাসের জন্য কোনও অনুমতি দেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক সভা অবশ্য নিষিদ্ধ করা হয়নি। তবে পুরসভা চায়, মাঠের মধ্যে খেলাধুলোর জন্য নির্দিষ্ট কোনও ঘরে কোনও অন্য সভা বা অনুষ্ঠানও করতে দেওয়া হবে না। পুরপ্রধান জানিয়েছেন, “পুরসভা ওই মাঠ দু’টি মিলিত ভাবে নিয়ন্ত্রণ করলেও শর্ত অনুযায়ী মাঠ দু’টির মালিকানা থাকবে ওই দু’টি স্কুলের হাতেই।” মাঠ সংস্কার কমিটির অন্যতম কর্তা প্রাক্তন ফুটবলার সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “বহু আগে ম্যাকেঞ্জি মাঠ গোটা জেলার সেরা মাঠগুলোর অন্যতম ছিল। কিন্তু গত তিন দশক ধরে মাঠের অপব্যবহার হয়েছে যথেষ্ট। সার্কাস বসেছে, নানা ধরনের মেলা হয়েছে, যাত্রা হয়েছে। মাঠের মধ্যে হেলিকপ্টার নামানোর জন্য মোরাম ও ইট বিছিয়ে রাস্তা বানানো হয়েছে। সে সবের জন্যই মাঠের এই অবস্থা।” তিনি বলেন, “এখন সে সব ফেলে নরম বালি মাটি এনে চাষ করা হয় মাঠে। সেই মাটি মেশানোরই কাজ চলছে এখন। জানুয়ারির মধ্যেই মাঠ তৈরি হয়ে যাবে।” যে গ্যালারি তৈরি হয়েছে, তাতে বসতে পারবেন ২ হাজার লোক। ইন্ডোরে এক সঙ্গে দু’টি ব্যাডমিন্টন কোর্ট রয়েছে। |