সমস্ত দরজাই নাকি কোনও অদৃশ্য চাবিকাঠিতে খুলিয়া যায়। এমনকী, সুখও। বিতর্ক চলিতে পারে, চলুক, কিন্তু আত্মপরিচয়েরও যে দরজা হয়, তাহা ঘটমান বর্তমান নির্মম রূপে শিখাইয়া দিয়াছে। সেই চাবিকাঠির নাম পাসওয়ার্ড। ইমেল হইতে ফেসবুক, বা এ টি এম-এর অর্থ-করী যন্ত্র, সর্বত্রই নিজেকে খুঁজিতে হইলে আত্মসত্তার একটি চাবি খাড়া করিতে হইবে। সেই চাবিটি স্মরণে রাখাও জরুরি। অন্যথায়, বারংবার প্রশ্ন আসিবে, আপনিই কি সেই, আপনিই কি সেই? যদি সঠিক চাবিটি টিপিতে পারেন, তাহা হইলে প্রতিপন্ন হইল, আপনি ‘আত্ম’-জ্ঞানী! নিজেকে চিনিবার বিরল ক্ষমতাটি আপনার আছে। যদি ভুল চাবি আসে, বুঝিতে হইবে, কোথাও কিছু ভুল হইয়াছে। তখন সহস্র বার ‘আমিই সে’ আউড়াইলেও সেই দরজা খুলিবে না। ব্রহ্ম হইতে কীটপরমাণু, সর্বভূতে সেই পাসওয়ার্ড! এ কী করুণা, বুঝা কঠিন। ইহা সেই সঙ্কেত যাহা একান্ত গোপনীয়। শূন্য শূন্য সাত মহাশয়ের ভিনদেশি লব্জে, ‘ফর ইওর আইজ ওনলি’! প্রতিটি মানুষ নিজের গোপন কন্দরে তাহা লুকাইয়া রাখিয়াছে। তিনি জানেন, সেই শব্দ-ব্রহ্ম, এবং ব্রহ্মা হয়তো জানিলেও জানিতে পারেন। অন্য কেহ নহে। এখানে স্মৃতিটিই সুখের। বিস্মৃতি আক্ষরিকই বিষময়।
সমস্যা হইল, সান্তা ক্লজ বৃদ্ধ হইয়াছেন। স্মরণশক্তি ক্রমে দুর্বল। তাঁহার পক্ষে নিজস্ব অভিজ্ঞান ওই রূপে স্মরণে রাখা কঠিন। অথচ, ‘পাসওয়ার্ড’টি যে ঈষৎ সহজিয়া ধাঁচে গড়িবেন, সেই উপায়ও নাই। সম্প্রতি, বিশ্বের পঁচিশটি নিকৃষ্ট পাসওয়ার্ড-এর একটি তালিকা প্রস্তুত হইয়াছে। ধরা যাক, কেহ এক হইতে আট পর্যন্ত সংখ্যাগুলি পরপর লিখিলেন। অথবা, আট হইতে শুরু করিয়া পিছনে এক পর্যন্ত আসিলেন। তালিকা বলিতেছে, চলিবে না। কারণ, কলিকালে অন্য এক ‘অসুর’-এর আবির্ভাব ঘটিয়াছে। তাহার নাম ‘হ্যাকার’! সহজ পাসওয়ার্ড হইলেই সে তৎক্ষণাৎ ধরিয়া ফেলিবে। ‘চিচিং ফাঁক’ করিয়া হাট করিবে আপনার অন্তরের তলদেশ। গোপন কথাটি রবে না গোপনে। সুতরাং, পাসওয়ার্ড হিসাবে এমন কিছু ভাবা জরুরি যাহা অন্য কেহ ধরিতে পারিবে না। যাহা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একান্ত নিজস্ব। সেই অনুভবটি সর্বজনীন হইতে পারে, কিন্তু প্রকাশটি একান্ত, পরিভাষায় ‘ইউনিক’ হওয়া চাই। অর্থাৎ, আপনি ভালবাসিতেই পারেন, ভালবাসার আশ্চর্য শক্তিতে বিশ্বাসী হইতেই পারেন, কিন্তু রোমান হরফে ‘আইলাভইউ’ যদি লিখিয়া বসেন পাসওয়ার্ড হিসাবে, চলিবে না। আবার, জগৎ ও জীবনের গভীর অবিশ্বাসবশত, একই ভাবে রোমান-এ লিখিলেন, ট্রাস্টনোওয়ান, শেষ-এর কথাটি আবার সংখ্যায়, চলিবে না। যাহা দুর্গম, স্মরণে রাখা কঠিন, সার্বজন্য নহে, তাহাই আদর্শ পাসওয়র্ড। নিজের সন্ধানে যাত্রা করিবার পথটিও সেই রূপ, সন্দেহ নাই। সহজে এবং অনায়াসে কে আর কবে নিজের সন্ধান পাইয়াছে? অনেকে বলিয়াছেন, মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ। তাহাতে কী? ‘পাসওয়াডর্র্’-এর সারাৎসারটি সংক্ষিপ্ত। অবিশ্বাস। |