নরম রোদ, হিমেল হাওয়া আর উৎসবের রঙিন সাজ— ফাঁক পড়েনি কোনও উপকরণে। শীতের আমেজ সঙ্গে নিয়েই বড়দিনের ছুটি শুরু হয়ে গেল শহরে।
দিনের বেলা চিড়িয়াখানা-মিলেনিয়াম পার্কে ‘পিকনিক’ বা মাল্টিপ্লেক্সে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি দেখার টানে হুল্লোড়ের মেজাজে পথে নেমেছিল কলকাতা। শনিবার ‘ক্রিসমাস ইভ’-এর সন্ধ্যায় গির্জার শান্ত পরিবেশে সেই ভিড়েরই অন্য চেহারা। আবার বড়দিনের প্রাক্-মুহূর্তে সন্ধ্যার আলোকোজ্জ্বল পার্ক স্ট্রিটকেও দেখা গেল স্বমহিমায়।
এই সপ্তাহান্ত থেকেই আগামী বছরের প্রথম দিন অবধি টানা ছুটি! ছুটির শহরে কে হবে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ?
এই লড়াইটায়, বড়দিনের চিরকেলে রিচ প্লাম কেক থাকতেই পারে। কিন্তু রুপোলি পর্দার নয়া অবতারও কম যাবেন না। রাতের শোয়ে শাহরুখ ‘ডন-টু’ খানকে দেখতে দলে-দলে ‘ভক্তে’রা বিকেলেই টিকিটের জন্য হত্যে দিয়েছেন মাল্টিপ্লেক্সে । মালুম হয়েছে, আলিপুর চিড়িয়াখানার নবজাতক জিরাফছানাটিও জনপ্রিয়তায় নেহাত কম যায় না।
|
শহরের এই আমুদে মেজাজের সঙ্গত করতেই যেন লেগে পড়ে কলকাতার আবহাওয়া। কলকাতার ডিসেম্বরের পক্ষে কড়া কিন্তু উপভোগ্য শীতের উপরে ভর করেই এ দিন পথে নামে মহানগর। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের আশ্বাস, “শীতের মেজাজটা সহজে ফিকে হবে বলে মনে হচ্ছে না। কুয়াশার হেরফেরে তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, তবে খানিকটা কড়া শীতের আমেজ এখন থাকবে। শীতের গোড়াতেই কলকাতায় যা বড় একটা দেখা যায় না।”
শুরু হয়ে গিয়েছে বাঙালির কেক-পার্বণও। সাত-সকালে নিউমার্কেটের শতাব্দী-প্রাচীন বেকারি বা পার্ক স্ট্রিটের সাবেক চা-ঘরে পা ফেলার জায়গা নেই। এমনকী, পাড়ার মেজ-সেজ কেকের দোকানেও যেন মণ্ডপে ঠাকুর দেখার লাইন। আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা রোহিত তিওয়ারিও ভিড় দেখে বেশ উৎফুল্ল। তাঁর কথায়, “বছর শেষের পার্বণটা ক্রিসমাস-ইভ থেকেই শুরু হয়ে যায়। তবে এ বার শনিবার পড়ায় ভিড় বেশি।” এ দিন ১৯ হাজার লোক চিড়িয়াখানায় ভিড় করলেও রোহিতবাবুর আশা, বড়দিনে ভিড়টা প্রায় তিন গুণ বাড়বে।
মিলেনিয়াম পার্ক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগান বা সায়েন্স সিটির মতো ছুটি কাটানোর জায়গাগুলিও সকাল থেকেই ভিড়ে-ঠাসা। সন্ধ্যা নামতে ওই তল্লাট থেকে পুলিশের নজরদারি সরে গিয়েছে পার্ক স্ট্রিটে। পার্ক স্ট্রিট ঘিরে একাধিক ‘ওয়াচ-টাওয়ার’-এর মাধ্যমে পাহারা জারি রেখেছে পুলিশ। যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমের দাবি, “যে কোনও আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা ভেবে চটজলদি সাড়া দেওয়ার ‘কুইক রেসপন্স টিম’ প্রস্তুত রয়েছে। বড়দিনের মরশুমে এই ধরনের তৎপরতা আরও জোরদার থাকবে।”
প্রাক-বড়দিন থেকে নতুন বছর পর্যন্ত উৎসবের আমেজে বেপরোয়া হেলমেটবিহীন আরোহীদের কথা ভেবেও কলকাতা পুলিশ এ বছর নতুন পরিকল্পনা কার্যকর করেছে। জনপ্রিয় গান কোলাভেরি ডি-র প্রেরণায় লেখা স্লোগানের হোর্ডিংয়ে দুপুর থেকেই সেজে উঠেছে শহরের কয়েকটি মোড়। উৎসবের সন্ধ্যায় পানশালা ফেরত ‘দুঃসাহসী’ মোটরবাইক বা গাড়ি চালকদের ‘হিরোগিরি’ রুখতে পানশালাগুলির কাছেও লাগানো হচ্ছে এমন হোর্ডিং। |
তবে দুপুর-বিকেলে বিক্ষিপ্ত যানজটে ছুটির ফুরফুরে মেজাজটায় আবশ্য কিছুটা তাল কেটে গিয়েছিল। চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বা ইস্টার্ন বাইপাসে সায়েন্স সিটির কাছে বিকেলে যানজটে আটকে ভুগতে হয়েছে আমজনতাকে। পুলিশের দাবি, মিলনমেলার মাঠে ‘ট্রেড ফেয়ারে’ ঢুকতে না-পারা কিছু গাড়ির ভিড়ে ওই তল্লাটে সমস্যা হয়। বিকেল চারটে থেকে কিছু ক্ষণ ভুগতে হয়েছে। আর উত্তরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের কাছে একটি ধর্মীয় মিছিলের জন্য গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়।
লালবাজারের কর্তাদের দাবি, আজ, বড়দিনে বিকেল থেকেই আইন-শৃঙ্খলা সামলাতে বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা জারি থাকবে। যদিও ছুটির দিনে মেট্রোর সফর শুরু হবে একটু দেরিতে। মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (জেনারেল) প্রত্যুষ ঘোষ জানান, বড়দিন এবং ইংরেজি নববর্ষ, দু’দিনই সকাল ন’টা থেকে মেট্রো চলাচল করবে। |