আগামী রেল বাজেটের আগেই রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ইন্টারসিটি ট্রেন চালুর দাবিতে আন্দোলনে নামল উত্তর দিনাজপুর রেলযাত্রী ও রায়গঞ্জ নাগরিক সমিতির সদস্যরা। সোমবার সন্ধ্যায় ওই সমিতির শতাধিক সদস্য রায়গঞ্জ স্টেশনে বিক্ষোভ দেখান। স্টেশন মাস্টারের কাছে স্মারকলিপিও জমা দেওয়া হয়। পরে রেল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সমিতির সম্পাদক তপন চৌধুরী বলেন, “রাধিকাপুর-নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর দাবিতে একাধিকবার রেল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়। ট্রেন চালুর ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হননি। সেই জন্যই আন্দোলনে নামতে বাধ্য হলাম। অবিলম্বে দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রায়গঞ্জ স্টেশনের প্রশাসনিক কাজকর্ম অচল করে দেওয়া হবে।”
আগামী আর্থিক বছরের রেল বাজেট ঘোষণা হতে আর আড়াই মাসও বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে বিগত রেল বাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষিত ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর ব্যাপারে রেল কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী নন বলে অভিযোগ ওঠায় উত্তর দিনাজপুরের বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ওই ট্রেন চালু করার দাবিতে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার দরবার করেও লাভ না হওয়ায় আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ব্যবসায়ী সংগঠন, জেলা রেলযাত্রী ও রায়গঞ্জ নাগরিক সমিতি এবং উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের জোনাল রেলওয়ে ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটি। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম ভূষণ পটেল বলেন, “রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর জন্য সমস্ত পরিকাঠামোই তৈরি রয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন সংগঠনের তরফে দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে ওই ট্রেন চালুর দাবি জানানো হচ্ছে। উর্ধ্বতন কর্তারা অনুমতি দিলেই ট্রেনটি দ্রুত চালু করা হবে।” জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অসীম ঘোষও বলেন, “প্রশাসনিক জটিলতায় রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালু হচ্ছে না বলে খবর পেয়েছি। দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ওই ট্রেন চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।” উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সঙ্গে নিউ জলপাইগুড়ি তথা শিলিগুড়ির সরাসরি রেল যোগাযোগ নেই। বাসিন্দাদের বাসে চড়েই যাতায়াত করতে হয়। ৩৪ নম্বর এবং ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের বিস্তীর্ণ অংশ বেহাল হওয়ায় সড়কপথে যাতায়াত করতে গিয়ে বাসিন্দাদের নাজেহাল হতে হয়। বিশেষত রোগী এবং ছাত্রছাত্রীদের কাছে রায়গঞ্জ থেকে শিলিগুড়ি যাত্রা দুঃস্বপ্নের মতো। গত ফ্রেব্রুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় রেলবাজেটে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর কথা ঘোষণা করায় রায়গঞ্জ মহকুমা জুড়ে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়েছিল। তার পরে ট্রেনটি নিয়ে উচ্চবাচ্য না-হওয়ায় বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র চন্দ বলেন, “জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের নেতৃত্বে সম্প্রতি জেলা কংগ্রেসের এক প্রতিনিধি দল কলকাতায় গিয়ে রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর দাবিতে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দেন। আগামী রেল বাজেটের আগে ওই ট্রেন চালু করা না হলে জেলা জুড়ে রেল অবরোধ করতে বাধ্য হব।” উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের জোনাল রেলওয়ে ইউজার্স কনসালটেটিভ কমিটির সদস্য অতনুবন্ধু লাহিড়ী বলেন, “কমিটির বৈঠকে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আগামী রেল বাজেটের আগে রাধিকাপুর নিউ জলপাইগুড়ি ট্রেন চালুর দাবি জানিয়েছি। দাবি পূরন না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেলের বৈঠক বয়কট করা হবে।” |