উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদারের কার্যকালের মেয়াদ তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। তার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার হুমকি দেওয়া নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। এক পক্ষ মনে করছে, বামেদের আমলে নিযুক্ত উপাচার্যকে না সরালে তিনি দুর্নীতির অভিযোগ সংক্রান্ত তথ্য লোপাট করে দিতে পারেন। পক্ষান্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পক্ষ মনে করছে, ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অচল না করে তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য সরকারের উপরে চাপ বাড়ানো প্রয়োজন।
কিন্তু নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করা হবে। মঙ্গলবার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবীপ্রসাদ বুট বলেন, “আমরা উপাচার্যের অপসারণ দাবি করেছি। আরও কিছু দাবি রয়েছে। সে জন্য লাগাতার আন্দোলন চলছে। পাশাপাশি, আগামী কাল, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত বিভাগে প্রতীকী কর্মবিরতি ডাক দেওয়া হয়েছে।” দাবি পূরণ না হলে ৯ জানুয়ারি থেকে ২০ জানুয়ারি লাগাতার কর্মবিরতি করার হুমকি দিয়েছেন দেবীপ্রসাদবাবুরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের অনেকেই এই আন্দোলনের ডাকে বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ। অভিভাবকদের অনেকেরই বক্তব্য, উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে সব অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন তুলেছে, তা নিয়ে সরকারি ভাবে কমিটি কিংবা কমিশন গড়ে তদন্ত হতে পারে। কিন্তু রাজ্যের উচ্চ শিক্ষা দফতর বিষয়টি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। অথচ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন ৯ নভেম্বর থেকে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ করছে। উপাচার্যকে তাঁর অফিসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। সে জন্য তাঁদের অনেক জরুরি কাজকর্ম থমকে রয়েছে।
বস্তুত, বাম আমলে মনোনীত উপাচার্য অরুণাভবাবু দায়িত্বভার গ্রহণের বছরখানেকের মাথায় আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করাতেই বিশ্ববিদ্যালয় মহলে বিতর্ক দানা বাঁধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশের ধারনা, প্রায় দেড় কোটি টাকার আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকার-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করার পরেই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। পরে ওই মামলায় প্রাক্তন উপাচার্য পীযূষকান্তি সাহার নামও জড়িয়ে পড়ে। মামলা রুজুর পরে প্রায় দেড় বছর কাটলেও এখনও পুলিশ চার্জশিট পেশ করতে পারেনি। ওই চার্জশিট পেশ করতে অস্বাভাবিক দেরি হলে মামলাটি খারিজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাই ওই মামলার চার্জশিট যাতে পেশ হয়, সে জন্য নানা মহলে চিঠি লিখছেন বর্তমান উপাচার্য অরুণাভবাবু। বাম আমলে তাঁকে যে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, সেই অনুযায়ী আগামী ৩১ ডিসেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের হয়ে যাঁরা সরব হয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অধ্যাপক-অফিসারদের মতে, মেয়াদকাল বাড়ানোর ফলে ওই মামলার চার্জশিট পেশ নিয়ে পুলিশের উপরে চাপ বাড়ানোর সুযোগ পাবেন অরুণাভবাবু। সেই সুযোগ যাতে তিনি কাজে না লাগাতে পারেন, সে জন্য কোনও গোষ্ঠী তৎপর হয়ে উঠেছে কি না তা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে জল্পনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পক্ষ মনে করছেন, নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি কিংবা কোর্ট সদস্য মনোনয়নের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরে নতুন উপাচার্য ঠিক করতে অন্তত তিন মাস লাগবে। সে জন্য অরুণাভবাবুকে কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এনবিইউ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের আশঙ্কা, উপাচার্যের বিরুদ্ধেও যথেচ্ছ খরচের যে যে সব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা হতে পারে। |