জেল থেকে জামিনে মুক্ত গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক বংশীবদন বর্মন এখন কোন শিবিরে তা নিয়ে জেলার রাজনৈতিক মহলে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য থাকাকালীন জেলে যাওয়ার পরে ওই সংগঠন ভেঙে গ্রেটার কোচবিহার ডেমোক্রেটিক পার্টি তৈরি হয়েছে। দাবি একই হলেও দুটি সংগঠনই পৃথক ভাবে আন্দোলন করছে। অন্যদিকে, সম্প্রতি বংশীবদনবাবু জেল থেকে জামিনে মুক্তির দিন তাঁকে স্বাগত জানিয়ে কোচবিহার শহরে শোভাযাত্রা বার করে ডেমোক্রেটিক পার্টি। সেখানে পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের কাউকে দেখতে পাওয়া যায়নি।
বংশীবদনবাবু নিজেই এই ব্যাপারে তৈরি হওয়া ধোঁয়াশা না-কাটানোয় অস্বস্তিতে তাঁর সমর্থকেরাও। মঙ্গলবার এই ব্যাপারে তিনি বলেন, “কোচবিহারের বাসিন্দাদের ভালর জন্যই গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে আন্দোলন করে জেলে যাই। পরে লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হলে ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং এনসিপি আমায় সমর্থন জানায়। আমি এখন কী করব তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। আমার সঙ্গে যাঁরা জেলে গিয়েছিলেন, প্রত্যেকের মুক্তির পরেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’’ বংশীবদনবাবুর এই মন্তব্যে ধোঁয়াশা আরও বেড়ে গিয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি আশুতোষ বর্মন বলেন, “ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসাবে বংশীবদনবাবু ভোটে লড়েছিলেন। পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক হিসাবে অবশ্য উনি জেলে যান। তার পরে ডেমোক্রেটিক পার্টি তৈরি হয়। তবে সদস্যপদ দেওয়া হয়। এখন উনি কয়েকদিন বিশ্রাম নেওয়ার পরে এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।” পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সম্পাদক ললিতা বর্মনের অবশ্য স্পষ্ট মন্তব্য, “বংশীবদনবাবুর সঙ্গে আমাদের সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। ওঁর সঙ্গে আলোচনার কোনও প্রয়োজন বোধ করছি না। জেলে বসে উনি ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আমাদের সংগঠনের আর যাঁরা জেলে রয়েছেন তাঁদের ব্যাপারে কোনও চিন্তাভাবনা এখনও হয়নি।” ললিতা দেবীর এই মন্তব্যকে আমল দিতে চাননি বংশীবদনবাবু। তিনি বলেন, “বাক স্বাধীনতা সবারই রয়েছে। কোচবিহারের বসিন্দাদের জন্য আমি জীবন উৎসর্গ করেছি। বাকি কে, কী বলছে তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি না।” পৃথক রাজ্যের দাবিতে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন আন্দোলনে নামলে ২০০৫ সালে জেলায় সোরগোল পড়ে যায়। পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা পদযাত্রা করে জেলাশাসকের দফতরে অবস্থান করতে গেলে পুলিশ কোচবিহার শহরে ঢুকতে বাধা দেয়। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে এখ আইপিএশ-সহ ৩ পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয়। পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের ২ সদস্যেরও মৃত্যু হয়। পুলিশ বংশীবদনবাবু-সহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ২০০৬ সালের ২৫ মে আত্মসমর্পণ করেন বংশীবদনবাবু। তার পর থেকে জেলেই রয়েছেন। সম্প্রতি নয়া রাজ্য সরকারের উদ্যোগে তিনি জামিনে ছাড়া পান। পরে বংশীবদনবাবুর ১৪ জন সহযোগীর মুক্তি হয়। আরও ২৮ জনের মুক্তির তোড়জোড় চলছে। সোমবার বংশীবদনবাবু আইনজীবী শিবেন রায়ের বাড়িতে গিয়ে এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। বংশীবদনবাবু বলেন, “সহকর্মীরা জেল থেকে বার হলেই পরবর্তী পরিকল্পনা চূড়ান্ত করব।” |