|
|
|
|
‘উল্টো’ রিপোর্টে বিপত্তি |
রাধেশ্যাম যথেষ্টই অসুস্থ, মত নয়া মেডিক্যাল বোর্ডের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
একই হাসপাতাল। রোগীও এক। কিন্তু রিপোর্ট দু’রকম! যার ফলে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন।
রোগী হলেন আমরি-কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত রাধেশ্যাম অগ্রবাল। হাসপাতালটির বোর্ড অফ ডিরেক্টরসের অন্যতম সদস্য। ঘটনার আগে থেকে যিনি আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এবং শনিবার সেখানে যাঁকে দেখে এসে এসএসকেএমের তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড পুলিশকে রিপোর্ট দিয়েছিল।
সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সোমবার কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশ রাধেশ্যামবাবুকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছিল আলিপুর আদালতে। অভিযুক্তকে সম্পূর্ণ সুস্থ বলে দাবি করে তাঁকে সরকারি হাসপাতালে স্থানান্তরের জন্য কোর্টের অনুমতি চেয়েছিল পুলিশ। রাধেশ্যামবাবুকে অবশ্য সোমবার এজলাসে তোলা যায়নি। তিনি অক্সিজেন মাস্ক খুলতে চাননি। বিচারক বেরিয়ে তাঁকে দেখে আসেন। কোর্টের নির্দেশে সোমবার রাতে তাঁকে এসএসকেএমে নিয়ে গিয়ে কার্ডিওলজি জেনারেল ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। তিনি কতটা অসুস্থ, তা যাচাইয়ে আদালতের নির্দেশে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গড়েন এসএসকেএম-কর্তৃপক্ষ। বোর্ড মঙ্গলবার রিপোর্ট দিয়েছে হাসপাতালের সুপারকে। কী আছে তাতে? |
|
বোর্ড সূত্রের খবর: রাধেশ্যামবাবু যথেষ্ট অসুস্থ বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর মাঝেমধ্যে কাঁপুনি হচ্ছে। তিনটি ধমনীতে ‘ব্লক’ রয়েছে, বাইপাস সার্জারির পরেও যা পুরোপুরি দূর করা যায়নি। পাশাপাশি তাঁর হার্টের সমস্যাগুলোর কোনওটাই অবহেলা করার মতো নয় বলে বোর্ডের চিকিৎসকদের অভিমত।
রিপোর্টটি এ দিন কোর্টে পৌঁছাতে সন্ধে হয়ে যায়। ফলে রাধেশ্যামবাবু কোথায় থাকবেন, সে সম্পর্কে এ দিন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি আদালত। এ দিকে এ দিন এসএসকেএমে রাধেশ্যামবাবুর বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তাই এ দিন তাঁকেও আদালতে হাজির করানো হয়নি। শরীরের এই অবস্থায় আদৌ কি তাঁকে কোর্টে তোলা যাবে?
এসএসকেএম-সূত্রের বক্তব্য: এ দিন ওঁর যে সব পরীক্ষা হয়েছে, তার রিপোর্ট না-পেলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দিতে পারবে না মেডিক্যাল বোর্ড। এ জন্য দিন দুয়েক লাগবে বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সোমবার কীসের ভিত্তিতে রাধেশ্যামবাবুকে সুস্থ বলে দাবি করল পুলিশ?
আমরি-কাণ্ডের তদন্তকারী দলের এক অফিসার বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে এসএসকেএমের তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড রাধেশ্যাম অগ্রবালকে পরীক্ষা করে যে রিপোর্ট দিয়েছিল, তার ভিত্তিতেই আমরা ওঁকে সোমবার আদালতে হাজির করিয়েছিলাম।” সেই রিপোর্টে কি ওঁকে সুস্থ বলা হয়েছিল? অফিসারের জবাব, “তা না-হলে আমরা ওঁকে বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তুলে কোর্টে নিয়ে যাবই বা কেন?”
তা হলে একই হাসপাতালের ডাক্তারদের নিয়ে গড়া দুই মেডিক্যাল বোর্ডের দুই রিপোর্টে এমন অসঙ্গতি কেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রিপোর্ট দু’টো ভাল ভাবে খতিয়ে না-দেখে মন্তব্য করব না।” অন্য দিকে এসএসকেএম তথা ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্রের ব্যাখ্যা, “রাধেশ্যাম অগ্রবালের অসুস্থতার কথা কোনও চিকিৎসকই অস্বীকার করেননি। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, ওঁকে সব সময়ে মাস্ক লাগিয়ে স্ট্রেচারে চড়ে ঘুরতে হবে। আগের বোর্ড সেটাই বলতে চেয়েছিল। বর্তমান বোর্ডও অসুস্থতার কথা স্বীকার করে নিয়েছে। দুয়ের মধ্যে কোনও বিরোধ রয়েছে বলে আমি মনে করি না।”
এ নিয়ে আদালত কী মনে করে, আজ বুধবার তা জানা যাবে। |
|
|
|
|
|