|
|
|
|
কর্তাদের আমরিতে নিয়ে যেতে চায় পুলিশ,
হাজতবাস বাড়ল আরও ৩ দিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কিছু জরুরি নথি উদ্ধারের জন্য ধৃত ডিরেক্টরদের ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে তদন্ত করতে চায় পুলিশ। আলিপুর আদালতে লালবাজারের গোয়েন্দাদের এই আবেদনেই মঙ্গলবার অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন নাকচ করে দিলেন বিচারক। মঙ্গলবার আমরি-র ডিরেক্টরদের আরও তিন দিনের জন্য পুলিশ-হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ অবশ্য অভিযুক্তদের চার দিন হেফাজতে রাখতে চেয়েছিল। বিচারক তিন দিনের জন্য এই আবেদন মঞ্জুর করেন। আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে এ দিন আমরি-কর্তাদের ঢাকুরিয়ার হাসপাতালটিতে নিয়ে গিয়ে তদন্ত করার কথা বলেন সরকারি আইনজীবীরা। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেছিলেন। তবে ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিম অভিযুক্তদের পুলিশ-হাজতে পাঠানোর রায় দেন।
তবে ধৃত ছয় ডিরেক্টরের মধ্যে রাধেশ্যাম অগ্রবাল এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাই তাঁকে আদালতে হাজির করানো যায়নি। আদালত সূত্রের খবর, রাধেশ্যামের মেডিক্যাল রিপোর্ট সন্ধ্যায় আদালতের কাছে পৌঁছয়। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ওঁর শারীরিক অবস্থা উদ্বেগজনক। আজ, বুধবার ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে শুনানি করবেন বিচারক।
তখন বেলা সওয়া দু’টো। একটি লাল টাটা সুমোয় করে অভিযুক্তদের আদালত-চত্বরে নিয়ে আসে পুলিশ। ‘খুনিদের শাস্তি চাই’ বলে কিছু মানুষ তখন বিক্ষোভও দেখান। শুনানি চলাকালীন সরকার পক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়াটা অত্যন্ত জরুরি। কিছু তথ্যও তাঁদের কাছে জানতে চাইবে পুলিশ। তাই আরও চার দিনের জন্য তাঁদের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হোক।” |
 |
আলিপুর আদালতে আর এস গোয়েন্কা (বাঁ দিকে) এবং এস কে তোদি। ছবি: রাজীব বসু |
আমরি-কাণ্ডে ডিরেক্টরদের ‘দায়’ বোঝাতে কল্যাণবাবু এজলাসে বোঝান, বেসমেন্টে বিপজ্জনক ভাবে যে দাহ্য পদার্থ মজুত রয়েছে, তা আমরি-কর্তাদের অজানা ছিল না। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ তাঁরা দেননি। তিনি এ-ও জানান, হাসপাতালে আগুন লাগলে দমকল বা পুলিশকে খবর দিতে কর্মীদের নিষেধ করেছিলেন আমরি-র ডিরেক্টররা। কয়েক মাস আগে, দমকলে খবর দেওয়ার ‘অপরাধে’ ওই হাসপাতালের এক নিরাপত্তাকর্মীকে বরখাস্তও করা হয়েছিল। কল্যাণবাবুর সঙ্গে ছিলেন হাইকোর্টের মুখ্য সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায় ও আইনজীবী বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়। সরকার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান, কয়েক মাস আগে ওই হাসপাতালে পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশ এবং দমকল আমরি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল, বেসমেন্ট থেকে দাহ্য পদার্থ সরানো না-হলে সেখানে যে কোনও সময় স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি হতে পারে। কিন্তু, এর পরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযুক্তদের আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায়, অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়, অতনু রায়চৌধুরীরা এ সব যুক্তি মানতে চাননি। অশোকবাবু জানান, হাসপাতালের রোজকার কাজের জন্য অফিসার-কর্মীরা নিযুক্ত ছিলেন। আমরি-র ডিরেক্টররা সরাসরি কিছু করতেন না। যাঁদের উপরে হাসপাতালের নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল, তাঁরা ঠিকঠাক কাজ করেননি। অমিতাভবাবু বলেন, “আমরি-র অগ্নিকাণ্ড নিছক দুর্ঘটনা। আগুন নেভানোর জন্য স্মোক অ্যালার্ম, ফায়ার ডিটেক্টর, ওয়াটার স্প্রিংকলার সবই ছিল। কিন্তু আগুন লাগার সময়ে সেগুলি কাজ করেনি। পুলিশের এফআইআর-এও তা লেখা হয়েছে। ডিরেক্টররা তো আগে গিয়ে সেগুলি বন্ধ করে আসেননি!” তিনি জানান, ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ধারায় আমরি-কর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তা একেবারেই সঠিক নয়। দমকল আইনেই শুধু তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হতে পারে।
অভিযুক্ত ডিরেক্টরদের আমরিতে নিয়ে গিয়ে তদন্তের প্রসঙ্গেও অতনুবাবুর প্রশ্ন, এত দিন কেন এই তদন্ত করা হল না? অমিতাভবাবু বলেন, “হাসপাতালের কর্তাদের হয়রান করতেই এ সব করা হচ্ছে। খুন, ডাকাতির মামলায় অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে তদন্ত করা হয়। কোনও দুর্ঘটনার তদন্তে এমন হয় না।” অভিযুক্তদের আইনজীবীদের বক্তব্য, কলকাতায় ওঁদের (আমরি-কর্তা) সম্পত্তি রয়েছে। তা ছেড়ে ওঁরা পালিয়ে যাবেন না। তদন্তের প্রয়োজনে পুলিশ ডাকলেই, ওঁরা হাজির হবেন।”
গোয়েন্দারা ইতিমধ্যে ধৃত ডিরেক্টরদের বিভিন্ন বৈঠকের ‘মিনিট্স’ খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন। বিভিন্ন বৈঠকে হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণ, রোগীদের নিরাপত্তায় টাকা বরাদ্দ হত কি না, বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের কাজের মূল্যায়ন করা হত কি না, তা জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। সেই সঙ্গে দমকল ৯০ দিনের মধ্যে হাসপাতালের বেসমেন্ট থেকে দাহ্য পদার্থ সরাতে বললেও ডিরেক্টরেরা সে-বিষয়ে কতটুকু কী করেছিলেন, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “ডিরেক্টরদের বৈঠকের মিনিট্স ঘেঁটে দেখা হচ্ছে, হাসপাতালে আগুন লাগলে বিপর্যয় মোকাবিলার মহড়া নিয়ে আদৌ কোনও আলোচনা হত কি না। এ বিষয়ে গাফিলতির প্রমাণ মিললে চার্জশিট দাখিল করা সহজ হবে।” |
|
|
 |
|
|