রাজ্যের উন্নয়ন পর্ষদগুলিকে ‘বিধিবদ্ধ সংস্থা’ হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে নতুন আন্দোলনের পথে যাচ্ছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদ নিয়েই আন্দোলন শুরু হচ্ছে তাদের। বিধিবদ্ধ সংস্থা হয়ে গেলে ওই পর্ষদগুলির জন্য পৃথক বাজেট করা যাবে এবং উন্নয়নের কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুদান পাওয়ার সংস্থান থাকবে। তাই রাজ্যের স্বার্থেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দাবি মেনে নেওয়া উচিত বলে ফ ব মনে করে।
সিপিএম-সহ সব বাম শরিকই মনে করে, মমতার নেতৃত্বাধীন সরকারের আরও ‘সময়’ প্রাপ্য। সাম্প্রতিক কালে দু’টি বিধানসভা ও একটি লোকসভা কেন্দ্রের উপ নির্বাচনের ফলেও তাঁর প্রতি মানুষের ‘আস্থা’ স্পষ্ট। তাই আদাজল খেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নেমে পড়ার সময় এখনও আসেনি বলে বাম নেতৃত্বের অভিমত। সরকার ‘জনবিরোধী’ কোনও পদক্ষেপ করলে তার প্রতিবাদ করতে হবে এটাই এই মুহূর্তে বিরোধীদের নীতি। বামফ্রন্টের সেই নীতি মেনেই উন্নয়ন পর্ষদ নিয়ে ফ ব-র আন্দোলন সরাসরি মমতার সরকারের বিরুদ্ধে নয়। বরং, এই আন্দোলন নতুন দাবি নিয়ে।
উন্নয়ন পর্ষদগুলি এখন কোনও নির্দিষ্ট রূপরেখা মেনে কাজ করে না। উত্তরবঙ্গ বা পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরগুলিরও পৃথক ভাবে কোনও ‘ক্ষমতা’ নেই। তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সমন্বয় করে উন্নয়নের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। বিধিবদ্ধ করা হলে পর্ষদগুলির জন্য বাজেট তৈরি করে উন্নয়নের কাজ আরও ‘সংহত’ করা যাবে, প্রকল্প ধরে ধরে কেন্দ্রের অনুদানও মিলবে। ফ ব এই দাবিতে আন্দোলনে নামলেই প্রশ্ন উঠতে পারে, এতদিন রাজ্যে সরকারে থেকেও বামফ্রন্ট ওই কাজ করেনি কেন? দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পর্ষদের কার্যনির্বাহী কমিটির একমাত্র বাম সদস্য উদয়ন গুহের ব্যাখ্যা, “বাম জমানায় হয়নি বলেই কখনও করা যাবে না, এমন তো কোনও কথা নেই! বামফ্রন্ট সরকার কি সব কাজ করতে পেরেছিল? নাকি সব কাজ ঠিক করেছিল? বাম জমানাতেই জার্মান সংস্থা ‘মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ পাইকারি ব্যবসার ছাড়পত্র পেয়েছিল। আমরা সরকারের শরিক হলেও তাদের ছাড়পত্র দেওয়ার বিরোধী ছিলাম।”
পর্ষদগুলির মধ্যে প্রথমেই উত্তরবঙ্গকে বেছে নেওয়ার কারণ দু’টি। প্রথমত, ওই চেয়ারপার্সন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। দাবি উঠলে সরাসরি তাঁরই হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, উত্তরবঙ্গে ফ ব সাংগঠনিক ভাবে তুলনায় শক্তিশালী। উত্তরবঙ্গের বাম বিধায়কদের মধ্যেও ফব-ই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই সব সমীকরণ মাথায় রেখেই ফ ব রাজ্য নেতৃত্ব দলে নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত ৭ টি সাংগঠনিক জেলার সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের নিয়ে আগামী ৩১ ডিসেম্বর শিলিগুড়িতে একটি সভা হবে। লক্ষ্য, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন পষর্দকে বিধিবদ্ধ করার দাবিতে ‘বৃহত্তর আন্দোলনে’র প্রস্তুতি। এর পর পশ্চিমাঞ্চলের অন্তর্গত জেলা কমিটিগুলিকেও ‘তৈরি’ থাকতে বলা হয়েছে। সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ নিয়ে অবশ্য এখনও কোনও কর্মসূচি ঠিক করা হয়নি।
বামফ্রন্টের প্রথম সারির শরিক দলগুলির মধ্যে সিপিএম, আরএসপি ও সিপিআই এখন সম্মেলন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ‘ঘর গুছোতে’ ব্যস্ত। ফব সংগঠনকে ঝালিয়ে নিতে চাইছে আন্দোলনের পথেই। তারই অঙ্গ হিসাবে মঙ্গলবার ধান, আলু, পাটের বস্তা নিয়ে প্রতিটি ব্লক অফিসে ঘেরাও-অবস্থান হয়েছে। সার, বীজ, কীটনাশক-সহ কৃষির নানা উপকরণ ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ, রেশনের মাধ্যমে চাল, চিনি, গম, ভোজ্য তেল, নুন এবং কেরোসিন তেল দেওয়া, ৪% সুদে কৃষিঋণ, বন্ধ হয়ে-থাকা বার্ধক্য ভাতা ও কৃষি পেনশন আবার চালু করা, চাকরি ও শিক্ষায় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণের ঘোষিত নীতি চালু করা, সরকারের শূন্য পদে লোক নিয়োগ এমন ১০ দফা দাবিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও প্রাক্তন মন্ত্রী হাফিজ আলম সৈরানির কথায়, “এই দাবি নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলন প্রক্রিয়া চালানো হবে।” সরকার-বিরোধিতার চেয়ে ক্ষমতাচ্যুত দলকে পুনর্গঠন আন্দোলনের প্রধান উদ্দেশ্য। |