‘বিপদে’ স্তালিনই ভরসা সিপিএমের
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের বাহিনীর বিরুদ্ধে কমিউনিস্টরা লড়েছিলেন জোসেফ স্তালিনের নেতৃত্বে। জয়ীও হয়েছিলেন তাঁরা। এখন আবার নতুন করে স্তালিনকে দরকার হচ্ছে সিপিএমের!
রাজ্যে ‘পরিবর্তনের ঝড়ে’র মোকাবিলায় কর্মীদের মধ্যে, বিশেষত দলে নতুন যাঁরা আসছেন, তাঁদের ‘লড়াকু মানসিকতা’ তৈরি করতে স্তালিনীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করার চেষ্টায় নতুন উদ্যমে নামছে সিপিএম।
স্তালিনের ১৩২ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সিপিএম নেতৃত্ব বিভিন্ন সভা-সমাবেশের আয়োজন করছেন। তবে আজ, বুধবার স্তালিনের জন্মদিনে এই কাজের সূচনা করছে সিপিএমের উত্তর কলকাতা জোনাল কমিটি। শোভাবাজারের এক অনুষ্ঠানবাড়ি ভাড়া করে এক সাধারণ সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই সভায় দলের সদস্য ছাড়াও, দলে সদ্য যোগ দেওয়া বা যোগদান করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছেন, এমন সদস্যদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দলের পরিভাষায় যাদের ‘ক্যান্ডিডেট মেম্বার’ ও ‘অগ্জিলিয়ারি মেম্বার’ বলা হয়।
বস্তুত, রাজ্যের বর্তমান ‘প্রতিকূল পরিস্থিতি’র মধ্যে সংগঠনকে মজবুত করার ‘রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত’ করতেই এই সভা ডাকা হয়েছে বলে সিপিএমের এক প্রবীণ নেতার ব্যাখ্যা। তবে উত্তর কলকাতা জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীম ঘোষের বক্তব্য, “আমরা প্রতি বারই স্তালিনের জন্মদিন পালন করি। কলকাতা জেলা কমিটিই কর্মসূচি নেয়। কিন্তু এ বার কলকাতা জেলার সম্মেলনের প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। তাই জেলা কমিটির তরফে সভা হচ্ছে না। আমাদের উত্তরের সম্মেলন শেষ বলে আমরাই করছি।”
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব অবশ্য যা বলছেন, তাতে স্পষ্ট যে, ‘স্তালিনীয় লড়াই’ তাঁরা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চান। রবীনবাবুর কথায়, “১৯৪১ সালের ২২ জুন থেকে স্তালিনের নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা হিটলারের নাৎসি বাহিনী ও মুসোলিনীর ফ্যাসিস্ত শক্তির বিরুদ্ধে লড়েছিলেন। লড়াই শেষ হয়েছিল ১৯৪৫-এর ৯ মে। স্বৈরতন্ত্রী ও ফ্যাসিস্তদের পরাজিত করে পৃথিবীর মানুষের কাছে গণতন্ত্র উপহার দিয়েছিলেন।” বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই ‘যুদ্ধের ইতিহাস’ যে প্রাসঙ্গিক, তা বোঝাতে গিয়েই রবীনবাবু বলেন, “স্তালিনের সেই লড়াইয়ে প্রতি মিনিটে ৯ জন করে কর্মী প্রাণ দিয়েছেন। প্রতি ঘণ্টায় ৫৮৭ জন এবং প্রতি দিন ১৪ হাজার করে স্তালিনের বাহিনীর কর্মীরা প্রাণ দিয়েছিলেন।” আর এই সময়ে? রবীনবাবু জানান, বামফ্রন্ট সরকার যে ‘বিশ্বের কাছে নজির সৃষ্টি করেছে’, তার জন্য ২৯ বছরে ২৮০৩ জন দলীয় কর্মীকে প্রাণ হারাতে হয়েছে। আর ‘পরিবর্তনে’র পরে গত ৬ মাসে বামফ্রন্টের ৫৩ জন কর্মী খুন হয়েছেন। যার ৫০ জনই সিপিএমের। রবীনবাবু বলেন, “স্তালিনের জন্মদিনের অনুষ্ঠান পালনের মধ্যে দিয়ে আমরা দলের কর্মী-সমর্থকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, কমিউনিস্টরা জীবনের বিনিময়ে সারা পৃথিবীতে আদর্শ স্থাপন করেন।”
আজ উত্তর কলকাতায় স্তালিনের জন্মদিন উপলক্ষে সভায় তাঁর কর্মজীবন নিয়ে আলোচনা হবে। দলের এক প্রবীণ নেতার বক্তব্য, “স্তালিন বলতেন, মানুষের মন জয় করতে হবে। নীতি-আদর্শে-স্বচ্ছ জীবনযাত্রায় মানুষের কাছে কমিউনিস্টকে আকর্ষণীয় হতে হবে। ৩৪ বছর শাসনের ফলে যদি কোনও বিচ্যুতি হয়ে থাকে, তা থেকে কী ভাবে বেরোতে হবে এবং আজ বিপদের দিনে দলীয় কর্মীদের করণীয় কী, তা দলের বাগ্মী নেতারা বোঝাবেন। স্তালিনও সে কথা বারবার বলেছেন।” ওই নেতার আরও অভিমত, “দলে এক ধরনের তাত্ত্বিক-বাগ্মী থাকেন, যাঁরা তৃণমূল স্তরের কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ করতে পারেন।”
স্তালিনকে ‘সামনে রেখে’ উত্তর কলকাতার সিপিএম আজ সেই কাজটাই করতে চায়!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.