বয়স্ক ও অসুস্থ জেলা সম্পাদকদের সরিয়ে নতুন মুখ আনার সিদ্ধান্ত একটা নিয়েছিলেন বটে সিপিএম নেতৃত্ব। কিন্তু রাজ্য সম্মেলনের আগে সেই ‘ঝুঁকি বা সাহস’ কোনওটাই দেখাতে পারছে না আলিমুদ্দিন।
দার্জিলিং জেলার সম্পাদক পদে ৮২ বছরের এস পি লেপচাকে রেখে দেওয়ার পরে এ বার নদিয়া জেলার সম্পাদক পদেও রেখে দেওয়া হল আশু ঘোষকে। কেবল তাই নয়, সিপিএমের জন্মলগ্ন ১৯৬৪ সাল থেকে পুরুলিয়ার জেলা সম্পাদক নব্বই ছুঁইছুঁই নকুল মাহাতোকে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব থেকে শেষ পর্যন্ত সরানো যাবে কি না, তা নিয়েও সংশয়ে আলিমুদ্দিন। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক পদ থেকে অমিতাভ বসু দু’বছর আগেই অব্যাহতি চেয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রুখতে তাঁকেই আবার জেলা সম্পাদক পদে রেখে দেওয়ার ভাবনা শুরু হয়েছে সিপিএমের অন্দরে। |
এস পি লেপচাকে জেলা সম্পাদক পদে রেখে দেওয়ার জন্য সিপিএমের ব্যাখ্যা ছিল, পাহাড়ের পৃথক জাতিসত্তার প্রশ্নে যখন দলিল আনা হচ্ছে, তখন লেপচাকে সরালে ‘বিরূপ প্রতিক্রিয়া’ হতে পারে। মঙ্গলবার নদিয়া জেলা সম্মেলনের শেষে পুনরায় আশুবাবুকেই জেলা সম্পাদক করা হল। এই নিয়ে পঞ্চম বার। আশুবাবুর আমলে নদিয়ায় সিপিএমের সংগঠন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। তবু জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি রমা বিশ্বাস, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুমিত দে বা যুবনেতা এসএম সাদির মধ্যে কাউকে জেলা সম্পাদক করার ঝুঁকি নিল না সিপিএম। এ বারের যুক্তি, এঁদের কেউই ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ নন। ফলে ভোটাভুটি করতে হত। কেন ফের আশুবাবুকেই জেলা সম্পাদক করা হল? জবাবে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বলেন, “এ সব নিয়ে পরে পর্যালোচনা করা হবে।” আশুবাবুকে সরাতে না পারলেও ‘বয়সের কারণে’ কিন্তু আট জনকে নদিয়া জেলা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
পুরুলিয়ার নকুলবাবুর বয়স ৮৯ বছর। বিগত দু’টি সম্মেলনেই জেলা সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আসছেন তিনি। কিন্তু মাহাতো বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের কোনও গ্রহণযোগ্য নেতাকে না-পেয়ে নকুলবাবুকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। আগামী ২৯-৩০ ডিসেম্বর জেলা সম্মেলন। বিমানবাবুও থাকবেন সেখানে। জাতিসত্তার প্রশ্নে ৮২ বছরের এস পি লেপচাকে দার্জিলিং জেলার সম্পাদক রেখে দেওয়ার পরে এখনই নকুলবাবুকে সরানো যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, দার্জিলিংয়ের মতোই পুরুলিয়াতেও ‘জাতিসত্তার প্রশ্ন’ সামনে রাখলে আদিবাসী বা মাহাতো সম্প্রদায় থেকেই কাউকে জেলা সম্পাদক করতে হয়। জেলা কমিটিতে একাধিক আদিবাসী বা মাহাতো নেতা থাকলেও নকুলবাবুর বাইরে কোনও ‘সর্বজনগ্রাহ্য’ নেতা মিলছে না!
এ ব্যাপারে পুরুলিয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেবকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলা সম্মেলনে আলোচনা হবে। নানা দিক বিবেচনা করেই জেলা সম্পাদক করা হয়। পুরুলিয়ার মতো জেলায় সম্পাদক নির্বাচনের ক্ষেত্রেও জাতিসত্তার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।” রবীনবাবু আরও বলেন, “আমরা তরুণ নেতৃত্বকে তুলে আনার পক্ষে। কিন্তু বয়স হলেই কাউকে সরিয়ে দিতে হবে, এমন কোনও ধরাবাঁধা নিয়ম নেই।” অসুস্থ ও অশক্ত নকুলবাবুর পরিবর্তে কে জেলা সম্পাদক হবেন, তা নিয়ে পুরুলিয়ার নেতারাও বিভক্ত।
বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হলেও পুরুলিয়া থেকে রাজ্য কমিটিতে আছেন সিপিএমের লোকসভার নেতা বাসুদেব আচারিয়া এবং মণীন্দ্র গোপ। প্রবীণ বাসুদেববাবুকে লোকসভা থেকে সরাতে নারাজ আলিমুদ্দিন। মাওবাদী অধ্যুষিত বলরামপুরের বাসিন্দা মণীন্দ্রবাবু নিজের এলাকায় খুবই কম যেতে পারেন। জেলা কমিটিতেও তাঁর বেশি সমর্থক নেই। অন্য দিকে, প্রাক্তন বিধায়ক নিখিল মুখোপাধ্যায় আলিমুদ্দিনের ‘ঘনিষ্ঠ’ হলেও পুরুলিয়ার মতো জেলায় ব্রাহ্মণ কারওকে সম্পাদক করার ‘ঝুঁকি’ নেবে না সিপিএম। বাকি রইলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা। বিধানসভার ভোটে বিপর্যয়ের পরেও এই নেতা জেলায় সর্বত্র সংগঠনের কাজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু ‘স্পষ্ট বক্তা’ দীননাথবাবু নানা বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের কাজকর্মের সমালোচক। এই পরিস্থিতিতে ফের নকুলবাবুকেই রেখে দিতে চায় দলের একাংশ। |