খেলার খবর খেঁটে খেঁটে
‘এক থালা বালি, তুই তো আমার শালী, এক থালা মুসুরি, তুই আমার শাশুড়ি, এক ভাঁড় দই তুই আমার সই, খেঁটে খেঁটে খেলতে গিয়ে কুড়িয়ে পেলাম বেল, বেলের ভিতর লেখা আছে ক্ষুদিরামের জেল।’শ্লীল-অশ্লীল, মানান-বেমানান যাই হোক না কেন ছেলেমেয়েদের মুখে এই ছড়াগুলি শুনতে শুনতে এক সময় অভিভাবকদের কান সহা হয়ে গিয়েছিল। কারণ একটি খেলার সৌজন্যে প্রচলিত ছিল ছড়াগুলি। খেলাটির নাম খেঁটে খেঁটে।
ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে কিম্বা পৃথক ভাবেও ওই খেলায় যোগ দিতে পারে। প্রতিটি দলে ৮-১০ জন করে থাকে। দু’টি দলে খেলাটি হয়। কোন দল আগে ‘দান’ নেবে তা স্থির হয় টসের মধ্যমে। খেলার জন্য মাঠের মাঝে দাগ দিয়ে তৈরি করা হয় একটি বৃত্ত। সেটিকে বলা হয় ‘খেঁটের ঘর’। খেঁটের ঘর থেকে ১৫-২০ ফুট দূরে একটি সরলরেখা টানা হয়। টসে জয়ী দলটি প্রথমে ওই সরলরেখার সামনে দাঁড়ায়। নিজেদের মধ্যে থেকে এক জনকে ‘খেঁটে’ নির্বাচন করে। এর পরে উপরিউক্ত ছড়াগুলি থেকে যে কোনও একটি ডাক ধরে এক নিশ্বাসে ‘খেঁটে’কে নিয়ে তার ঘরে বসিয়ে আসে এক জন। বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা তখন নিরাপদ দূরত্বে খেঁটেকে ঘিরে ছড়িয়ে থাকে।
দান নেওয়া খেলোয়াড়রা পছন্দ সই ছড়ার ডাক ধরে খেঁটেকে ছুঁয়ে বিপক্ষকে তাড়া করে বেড়ায়। যাতে খেঁটে ছুটে গিয়ে সরলরেখায় অবস্থানকারী সঙ্গী খেলোয়াড়দের কাছে পৌঁছে যেতে পারে। বিপক্ষের ছোঁয়া এড়িয়ে সরলরেখায় পৌঁছতে পারলে ‘চিক’ হয়ে যায়। আবার তাড়া করে বিপক্ষের কাউকে ছুঁয়ে পেলতে পারলে সেও ‘মরা’ হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে খেঁটেকে পাহারা দেওয়ার জন্য বিপক্ষ দলের খেলোয়াড় কমে যাওয়ায় চিক দেওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি পায়।
কিন্তু ডাক ধরে বিপক্ষকে তাড়া করার সময়ে যদি দম ফুরিয়ে যায় অর্থাৎ ডাকে ছেদ পড়ে তা হলে ঘটে বিপর্যয়। বিপক্ষ দলের কেউ যদি ওই দম ফুরিয়ে ডাকধারীকে ছুয়ে দিতে পারে তা হলে গোটা দলটাই মরা হয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা ছাড়ও রয়েছে। বিপক্ষকে তাড়া করে ফেরার সময়ে ডাকধারী নিজের সঙ্গীদের কাছে পৌঁছতে না পারে তা হলে সে খেঁটের ঘরে ফিরে ডাক ছাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে সঙ্গীদের এক জন ডাক ধরে তাকে খেঁটের ঘর থেকে নিজেদের অবস্থানে ফিরিয়ে আনার সুযোগ পায়। এই ভাবে এক পক্ষ ‘মরা’র পরে বিপক্ষ দান দেওয়ার সুযোগ পায়। খেলার শেষে যে দল বিপক্ষকে বেশি চিক দিতে পারে সেই দল জয়ী ঘোষিত হয়। চর্চার অভাবে এই খেলাটি বর্তমানে হারিয়ে যেতে বসেছে। এক সময় ওই খেলার জন্য প্রচলিত ছড়ার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে স্থানীয় কোনও ব্যক্তি, সমকালীন ঘটনা কিংবা অন্য বিষয়ের উপরে ছড়া মেলানোর প্রবনতা দেখা যেত। যেমন‘খেঁটে খেঁটে খেলতে গিয়ে কুড়িয়ে পেলাম বেল, গাই-বাছুর জিতে গেল, কেদে (কাস্তে) হাতুড়ি সেল।’ ময়ূরেশ্বরের ঠাকুরানিপুরের সর্বাণীশঙ্কর মণ্ডল, আমোদপুরের রতন দাসরা বলেন, “বৈচিত্রের পাশাপাশি সে সময় ছেলেমেয়েদের মুখে মুখে ফিরত খেঁটে খেঁটে খেলার নানা ছড়া। ওই ছড়ার সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে ছড়া বাঁধানোর চলও ছিল। চর্চার অভাবে খেলার সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে সৃজনশীল প্রতিভা বিকাশের একটি মাধ্যমও।”

(হারিয়ে যাওয়া খেলা পর্ব-৩)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.