মেয়ের টোকাটুকি ধরা পড়ায় স্কুলে এসে হুমকি দিলেন তৃণমূল নেতা। যার জেরে বারাসতের গোলাবাড়ি পল্লিমঙ্গল হাইস্কুল মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে যাওয়ায় একাদশ শ্রেণি ছাড়া সব শ্রেণির ক্লাস আপাতত বন্ধই রয়েছে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফর্ম ভর্তি করা চলছিল। তা থমকে গিয়েছে।
পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি নিয়ে গোলমালের জেরে গত শনিবার যাদবপুর বিদ্যাপীঠে শিক্ষকদের মারধর করা হয়েছিল। পরের দিনই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তা থেকে যে সকলে শিক্ষা নেননি, বারাসতের ঘটনায় সেটাই পরিষ্কার।
বারাসতের ওই স্কুলে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২,৫৪৭। শিক্ষক ২৫ জন। গত ২৬ নভেম্বর বার্ষিক পরীক্ষায় টোকাটুকি করার অভিযোগে মর্জিনা খাতুন নামে অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীর খাতা বাতিল করে দেন মৃন্ময় পাল নামে এক শিক্ষক। ২৪ ডিসেম্বর পরীক্ষার ফল প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। গত কয়েক বছর ধরেই ওই স্কুলে টোকাটুকি করে ধরা পড়া ছাত্রছাত্রীদের পাশ করানো হচ্ছে না। মর্জিনার বাবা, স্থানীয় তৃণমূল নেতা রফিকুর রহমান স্কুল পরিচালন কমিটির সহ-সভাপতি। কিন্তু তা সত্ত্বেও স্কুল কর্তৃপক্ষ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটাতে রাজি হননি। তৃণমূল প্রভাবিত স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, “আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অন্য মেয়েদের ক্ষেত্রে যে নিয়ম মানা হচ্ছে, মর্জিনার ব্যাপারেও তা মানা হবে।” কিন্তু মেয়েকে পাশ করানো হবে না বুঝেই রফিকুর দফায় দফায় এলাকার সমাজবিরোধীদের নিয়ে স্কুলে এসে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে মৃন্ময়বাবু ও অন্য শিক্ষকদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। সভাপতির খেদ, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ সমাজবিরোধী নিয়ে হামলা করতে পারে, ভাবা যায় না! আবার তিনিই স্কুল পরিচালন কমিটির কর্তা। আমরা এর বিচার চাই।”
রফিকুরের একটি হাত নষ্ট। বোমা বাঁধতে গিয়ে সেটি উড়ে গিয়েছিল বলে কথিত। পুলিশের খাতাতেও তাঁর নামে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। রফিকুর অবশ্য আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হুমকি দেওয়ার কথা স্বীকার করেননি। তাঁর দাবি, “আমি শুধু আমার মেয়েকে পাশ করানোর কথা বলতে যাইনি। অন্য যারা টোকাটুকি করেছে, তাদেরও পাশ করানোর দাবিতে স্কুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছি।” আগের বছরগুলিতে তো বিক্ষোভ দেখাননি? রফিকুরের দাবি, “আগেও মুখে বলেছি। এ বার বিক্ষোভ দেখালাম।”
এ দিন বারাসতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পরিচালন সমিতির অন্য সদস্যেরা, প্রধান শিক্ষক এবং অন্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীরা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অমর শীলের কাছে অভিযোগ জানান। প্রধান শিক্ষক সফি আলম বলেন, “অনেক শিক্ষক ভয়ে স্কুলে আসতে চাইছেন না। অন্য ক্লাসে বার্ষিক পরীক্ষা হয়ে গেলেও একাদশ শ্রেণির ক্লাস চালু আছে। কিন্তু তাদের উপরেও প্রভাব পড়ছে। নিরাপত্তার কারণেই অনির্দিষ্ট কাল স্কুল বন্ধ রাখতে হয়েছে।” স্কুল পরিদর্শক বলেন, “টোকাটুকি করলে স্কুল কর্তৃপক্ষ পাশ করাবে কি না, সেটা স্কুল সিদ্ধান্ত নেবে। অবিলম্বে পরিদর্শক দলকে ওই স্কুলে তদন্তের জন্য পাঠাচ্ছি।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষও বলেন, “এ সব বরদাস্ত করা হবে না। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিচ্ছি।” |