মাওবাদীর মতো ‘প্যাকেজ’ চাইছে চোলাই কারবারিরাও
৭২ জনের মৃত্যুর পরে ‘কারবার’ ছেড়ে দিতে চাইছেন গোচারণ, জয়নগর স্টেশন, সূর্যপুর এলাকার বেআইনি চোলাই ব্যবসায়ীদের একাংশ।
শর্ত একটাই। চোলাই কারবার ছাড়লে দিতে হবে পুনর্বাসনের জন্য আর্থিক প্যাকেজ।
কেন দেওয়া হবে আর্থিক প্যাকেজ?
চোলাই কারবারিদের যুক্তি, “কেএলও জঙ্গি বা মাওবাদীদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার যদি প্যাকেজ দিতে পারে, তবে আমরাও কেন তা পাব না?”
শুধু মুখে বলাই নয়, এই দাবির সপক্ষে এলাকায় রীতিমতো ছাপানো পোস্টার সেঁটেছেন চোলাই কারবারিরা। সাদা কাগজে নীল কালি দিয়ে ছাপা পোস্টারে লেখা হয়েছে, “মানুষ নিধনকারী কেএলও কিংবা মাওবাদী জঙ্গিরা যদি আর্থিক প্যাকেজ পায়, তা হলে মদ ব্যবসায়ীরা তা পাবে না কেন?”
বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি পোস্টার সাঁটা নয়, চোলাই-মদের কারবারিরা তাঁদের এই দাবি নিয়ে একটি কমিটি-ও গড়ে ফেলেছেন। তার নাম ‘জীবন সংগ্রাম কমিটি।’ পুনর্বাসনের আর্থিক প্যাকেজের পাশপাশি চোলাই মদের কারবারিদের উপর পুলিশের ‘নির্যাতন’ বন্ধেরও দাবি করেছে কমিটি।
ছবি: পিন্টু মণ্ডল
কিন্তু এ ধরনের প্যাকেজের দাবির কথা মাথায় এল কী করে? জবাবে পূর্ব পাঁচগাছিয়ার ভাটি-মালিক বুনো মণ্ডল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মৃতদের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। মাওবাদীদেরও জন্য প্যাকেজ রয়েছে। আমরাও সুস্থ জীবনে ফিরতে চাই। সরকার আমাদের কথা ভাববে না?” একই কথা এলাকার চোলাই কারবারি সিরাজ, বিভাস, সোনা, মন্টু, লক্ষ্মণদেরও।
কিন্তু হঠাৎ এই ‘বোধোদয়’-এর কারণ?
জয়নগরের পূর্ব পাঁচগাছিয়া এলাকায় একাধিক ভাটি মালিক, শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, চোলাইয়ের কারবারে ‘সুখের দিন’ গিয়েছে। কাঁচামালের দাম বেড়েছে। লাভের অঙ্ক কমেছে এক ধাক্কায় অনেকটা। তা ছাড়া, সংগ্রামপুরে বিষমদে ১৭২ জনের মৃত্যুর পরে অনেকেই মনে করছেন, এত জনের মৃত্যুর দায় আখেরে তাঁদের উপরেই বর্তাচ্ছে। যদিও ভাটি মালিকদের দাবি, তাঁদের কাছ থেকে যে ঠেক মালিকেরা চোলাই কিনে নিয়ে যান, তাঁরাই অতিরিক্ত লাভের আশায় চোলাইয়ে বিষাক্ত কীটনাশক ও রাসায়নিক মেশান।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোচরণ, সূর্যপুর, বেলিয়াচণ্ডী, বন মাদুরিয়া, ঘোষের চর, জামতলা প্রভৃতি এলাকায় হাজার পাঁচেক ছোট-বড় চোলাইয়ের ভাটি আছে। হাজার হাজার লিটার চোলাই তৈরি হয় প্রতি দিন। শুধু মাত্র পূর্ব পাঁচগাছিয়া এলাকাতেই শ’পাঁচেক ভাটি আছে। প্রতিটি ভাটিতে জনা কুড়ি শ্রমিক কাজ করেন। সব মিলিয়ে মন্দিরবাজার, মগরাহাট, জয়নগর, বারুইপুর প্রভৃতি এলাকায় ২০-২৫ হাজার মানুষ এই কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। কারও জমি-জমা নেই। দুঃস্থ এলাকায় অন্য জীবিকারও সংস্থান নেই। তা হলে কি এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে নিজেদের সপক্ষে আনার জন্যই ‘জীবনসংগ্রাম কমিটি’ গড়তে এগিয়ে এসেছে কোনও রাজনৈতিক দল? চোলাই কারবারিরা অবশ্য তা মানতে চাননি। তাঁরা জানান, পেটের দায়ে তাঁরা নিজেরাই কমিটি তৈরি করেছেন। এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক দল নেই। এলাকার সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, এসইউসি-র জয়নগরের বিধায়ক তরুণ মণ্ডল এবং বারুইপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নির্মল মণ্ডলতিনজনেই একই সুরে ওই কমিটির পিছনে থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।
চোলাই কারবারিদের দাবি নিয়ে কী বলছেন প্রশাসনের কর্তারা? দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “বিষয়টি আগে জানি। প্রয়োজন হলে এ ব্যাপারে মহাকরণে কথা বলব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.