স্কুলের পরীক্ষা শেষ। রোজ সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। কিন্তু সন্ধ্যা নামতে না নামতেই বইমেলার ভিড় পাতলা হতে শুরু করেছে। গঙ্গার ধারে লোকজন প্রায় নেই। রাস্তাঘাটও রাত বাড়লে সুনসান। রাতের বাস-ট্রেনও এক রকম খালি। রাত ৯টা বাজলেই যেন মধ্য রাত।
শীত গ্রাস করেছে মফস্সলের সন্ধ্যা-রাত। দোসর কুয়াশা। নবদ্বীপ ঘাট থেকে ছেড়ে বেরোনো মায়াপুর আর স্বরূপগঞ্জের দু’টি যাত্রীবোঝাই নৌকা সোমবার সকাল সাড়ে সাতটাতেও গাঢ় কুয়াশায় দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল। সামনে কিছু দেখতে না পেয়ে দু’টি নৌকা মুখোমুখি হয়ে যায়। কোনওক্রমে বিপদ এড়ানো গিয়েছে। জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যত ক্ষণ শীতে কুয়াশা থাকবে, তত ক্ষণ নৌকা ছাড়বে না।
ট্রেনও ওই কুয়াশার জন্যই দেরি করে চলছে। নিত্যযাত্রী রমানাথ চৌধুরী বলেন, “সকাল ৬টা ১৩ মিনিটের লোকাল ধরে অফিস যাই। এখন রোজ ট্রেন দেরি করে আসছে।” তাই আরও আগের ট্রেনটি ধরবেন বলে সাইকেলে করে বাড়ি থেকে স্টেশনে আসার পথে কুয়াশা আর ঠান্ডার কবলে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। হাত অবশ হয়ে গিয়েছিল, সামনে কিছু দেখতেও পাচ্ছিলেন না। পড়ে গিয়ে শয্যাশায়ী। রাতের ট্রেনে যাঁরা শহরে ফিরছেন, তাঁরা আরও নাজেহাল হচ্ছেন। রিকশা পাওয়া যাচ্ছে না। রিকশার ভাড়াও বেড়ে গিয়েছে কোথাও কোথাও।
|
একটু রাত হয়ে গেলেই শহরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন গল্পকথার কোনও মায়াবী জাদুদণ্ড দিয়ে সকলকে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। কোনও কোনও বাজার এলাকায় লোকজন থাকলেও ভিড় যেন শুধু চায়ের দোকানেই। গনগনে উনুনের আশপাশে লোক জমছে।
কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শহরের তাপমাত্রা হু হু করে কমেছে। শনিবার নেমে গিয়েছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। সর্বোচ্চও মাত্র ২২ ডিগ্রি। সোমবার আবার ১০ ডিগ্রির নীচে নেমে যায় পারদ।
এই ঠান্ডায় অবশ্য চাষিরা খুশি। জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ বলেন, “এখন যে ধরনের ঠান্ডা পড়েছে, তা সব ধরনের ফসলের জন্য উপকারী। তবে কুয়াশার কারণে আম ও আলুর ক্ষতি হতে পারে।” বেশি শীতের জন্য সস্তা শাক-সব্জির বাজার। খেজুরের গন্ধে ম ম করছে বাজার। গুড় পাওয়া যাচ্ছে কিছুটা সস্তায়।
অগ্রহায়ণে শীত না পড়ায় বাজার মন্দা ছিল শীত বস্ত্র ব্যবসায়ীদের। তাঁদের খেদও কমেছে। পাইকারি ব্যবসায়ী বাবুলাল সাহা বলেন, “শীতের পোশাক কেনাকেটা শুরু হয় অগ্রহায়ণেই। এ বার তখন তেমন শীত ছিল না। তবে এখন শীতের পোশাক বিক্রি শুরু হয়ে গিয়েছে। হাত মোজা থেকে শুরু করে সোয়েটার, পুলওভার, টুপি, গরম গেঞ্জি, সব কিছুরই ভালই চাহিদা।” |