হুকিং-ব্যাধিতে আক্রান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও!
হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরির ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠা তালিকায় গত কয়েক মাসে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট, হুগলির আরামবাগ কিংবা মুর্শিদাবাদের কান্দির নাম উঠে এসেছে বার বার। হুকিং রুখতে সরকারের ‘কঠোর নীতি’ আরামবাগে থমকে গিয়েছিল স্থানীয় গ্রামবাসীদের প্রতিরোধে। কান্দিতেও বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের সঙ্গে ‘লুকোচুরি’ খেলা সমানে চলেছে। তবে, দিন কয়েক আগে মগরাহাটে হুকিংয়ের লাইন কাটতে গিয়ে ঘটনা গড়িয়েছিল পুলিশের গুলি চালনায়। দুই মহিলার গুলিতে মৃত্যুর পাল্টা জনতার শাসনে গুরুতর জখম এক পুলিশ কর্মীও হাসাপাতালে ভর্তি থাকার পরে মঙ্গলবার মারা গিয়েছেন।
গন্ডগোল না হলেও এ বার সেই তালিকায় ঢুকে পড়ল মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর কলেজের নাম। হুকিং করা বিদ্যুতে সটান নেমে এসেছে কলেজ বাড়িতে। সোমবার দুপুরে এ ছবি তোলার পরেই মঙ্গলবার ওই কলেজে যোগাযোগ করা হলে অধ্যক্ষ পাল্টা জানতে চান, ‘প্রমাণ কোথায়?’ ছবি দেখাতে তিনি বলে ওঠান, “আমি বিশ্বাসই করি না।” কিন্তু এ ছবি তো জঙ্গিপুর কলেজেরই? |
কলেজের অধ্যক্ষ আবু এল শুকরানার জবাব, “আমার ছবি দেখার দরকার নেই। এই ধরণের কোনও ঘটনাই আমার কলেজে ঘটেনি।” তবে ওই ঘটনা ‘ভাল চোখে’ দেখছে না বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর। ওই দফতরের সহকারী বাস্তুকার রোহিত রঞ্জন বলেন, “এতো অনলাইন বিদ্যুৎ চুরি! কলেজে এ ভাবে বিদ্যুৎ চুরির কথা তো কল্পনাও করা যায় না। এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। আমরা কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” কলেজে এ ভাবে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনায় হতবাক জঙ্গিপুর কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য থেকে ছাত্র সংসদ নেতৃত্ব। প্রাক্তন কলেজ সভাপতি ও সিপিএমের জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, “লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নূন্যতম সম্মানও আর রইল না। ছাত্রছাত্রীরা এর থেকে কী শিখবে?” কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য ও কংগ্রেস নেতা বিকাশ নন্দ বলেন, “হুকিং করে বিদ্যুৎ টানার স্পষ্ট ছবি রয়েছে। আমরাও তা দেখেছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করতে পারেন না।” জঙ্গিপুরের পুরপ্রধান ও কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “চুরি চুরিই, সে যে ই করুক। কড়া হাতে তার মোকাবিলা করা দরকার। এ নিয়ে অবশ্যই পরিচালন সমিতিতে আলোচনা করা হবে।”
কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক এসএফআই-এর দেবাশিস রায় বলেন, “কলেজে চুরি করে আলো জ্বালানোর ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক।” ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সম্পাদক পলাশ সাহা বলেন, “জঙ্গিপুর কলেজের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। এই বিদ্যুৎ চুরি সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।” কিন্তু দেখেও আপনারা কোনও ব্যবস্থা নেননি কেন? সে উত্তর অবশ্য মেলেনি। |