|
|
|
|
উল্টো সুর বিধায়কেরও |
উদ্বাস্তুদের জন্য তৈরি ফ্ল্যাটে ‘ব্রাত্য’ তাঁরাই |
পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় |
সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এ বার প্রশ্ন তুললেন সরকার পক্ষেরই এক বিধায়ক।
উদ্বাস্তুদের থাকার জন্য তৈরি সরকারি টেনামেন্টে সরকারের বাছাই করা দুঃস্থ উদ্বাস্তু পরিবারকে থাকতে দেওয়া হবে না বলে ‘ফতোয়া’ জারি করেছেন যোধপুর পার্ক এলাকার পোদ্দার পার্ক সরকারি টেনামেন্টের বাসিন্দারা। সরকারি কাগজ হাতে করে যে পরিবারগুলি সেখানে থাকতে যাচ্ছে, পুলিশের উপস্থিতিতেই তাদের মারধর করে তাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। সরকারের উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতরের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে টেনামেন্টের বাসিন্দাদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, টেনামেন্টের কোনও ঘর খালি হলে তা সেখানকার কোনও বাসিন্দাকেই দিতে হবে। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর ওই ঘর বাইরের কোনও দুঃস্থ উদ্বাস্তু পরিবারকে দিতে পারবে না।
সরকারের লিখিত অনুমোদন ও বৈধ কাগজপত্র নিয়ে সম্প্রতি দু’টি ফ্ল্যাটে থাকতে গিয়েছিলেন দুই নিরাশ্রয় মহিলা। টেনামেন্টের অন্য বাসিন্দারা তাঁদের মেরে টেনেহিঁচড়ে বার করে ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দেন বলে অভিযোগ। কিন্তু এটা তো সরকারি নিয়মের পরিপন্থী। এ রকম কোনও চুক্তিও তো সরকার করেনি। এতে প্রকৃত অর্থে যাঁরা ঘরহারা, তাঁরা বসবাসের অধিকার হারাচ্ছেন। সরকার পক্ষের বিধায়ক হয়ে শোভনদেববাবু কী ভাবে সরকারি নীতির উল্টো কথা বলছেন? |
|
এই আবাসন ঘিরেই চাপান-উতোর। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক |
শোভনদেববাবু বলেন, “উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী পরিস্থিতি অতটা না বুঝে বাইরের উদ্বাস্তুদের থাকতে পাঠাচ্ছেন। চুক্তি-টুক্তি কোনও কথা নয়। চিরকাল সব জায়গায় যাঁরা থাকেন তাঁদেরই অধিকার আগে। আমি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নেব।” তাঁর আরও বক্তব্য, “সব সময়ে সরকারি নীতি মানা যায় না। সরকারকে আগে টেনামেন্ট সংস্কার করতে হবে। সেখানে নতুন কেউ ঢুকবেন না। তার পরে বাকি জমিতে সরকার ফ্ল্যাট তৈরি করে
বিক্রি করুক।”
কিন্তু এক জন বিধায়ক তো সরকারের কোনও দফতরের নীতি নির্ধারণ করতে পারেন না বা নিজের শর্তে দফতর চালনা করতে পারেন না। এ ব্যাপারে শোভনবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর উদ্বাস্তু পুনর্বাসন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর বলেছেন, “সমস্যা একটা হচ্ছে। আমি সব কাগজ চেয়ে পাঠিয়েছি। দেখছি কত তাড়াতাড়ি বিষয়টি মেটানো যায়।” কিন্তু সব জেনেও উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর কেন নিষ্ক্রিয়? খাস কলকাতায় এমন ‘দাদাগিরি’ দেখেও তারা কেন হাত গুটিয়ে রয়েছেন? দফতরের সচিব বীণা ভেঙ্কটরমণের কথায়, “এটা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি রয়েছে। টেনামেন্টের বাসিন্দাদের পিছনে হাত খুব শক্ত। আমরা কিছু করতে পারছি না।”
সাউথ সিটি মলের ঠিক উল্টো দিকে অভিজাত এলাকায় পোদ্দার পার্ক টেনামেন্ট। পঞ্চাশের দশকের শেষে উদ্বাস্তু, গৃহহীন পরিবারগুলিকে আশ্রয় দিতে এটি তৈরি হয়। ১২টি বিল্ডিংয়ের প্রতিটিতে ৩২টি করে ঘর। বর্তমানে ২৬৫টি পরিবার কেউ ১টি ঘর, কেউ ২টি ঘরে ভাড়া থাকে ঘরপ্রতি মাত্র ২২ টাকা ভাড়া দিয়ে। দুই থেকে তিন প্রজন্ম ধরে রয়েছেন তাঁরা। প্রতিষ্ঠিত হয়ে অধিকাংশ আবাসিকই এখন নিজস্ব গাড়ি-বাড়ি করে নিয়েছেন। কিন্তু উদ্বাস্তুদের মাথা গোঁজার জন্য তৈরি ওই আবাসনের ভাড়া ফ্ল্যাট ছাড়েননি। পোদ্দার কোর্ট গভর্নমেন্ট কোয়ার্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব দেবাশিস ধর বলেন, “এত দিন অলিখিত চুক্তিতে এমনই হয়ে এসেছে। এখন নতুন সরকার এসে বাইরের ভাড়াটে ঢোকাতে চাইলে হবে না। মেরে তাড়িয়ে দেব।”
সম্প্রতি সরকারের থেকে অনুমতি পেয়ে একটি ফ্ল্যাটে থাকতে যান ঝুমা ব্রহ্ম নামে বাঘা যতীনের বাসিন্দা এক দুঃস্থ মহিলা। গিয়ে দেখেন, দরজায় তালা মেরে সিল করে দিয়েছেন আবাসনের অন্য বাসিন্দারা। প্রতিবাদ করলে তাঁকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। উদ্বাস্তু পুনর্বাসন দফতর থেকে লেক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। সপ্তাহখানেক আগে লেক থানার পুলিশ ঝুমাদেবীকে ফ্ল্যাটে ঢুকিয়ে দিতে গিয়ে প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়ে কার্যত পালিয়ে আসে। পুলিশ অফিসারেরা জানিয়েছেন, জোর করলে বড় গোলমাল ঘটার
আশঙ্কা ছিল বলে তাঁরা ঝুঁকি নিতে পারছেন না। তিন নাবালিকা মেয়েকে নিয়ে ঝুমাদেবী এখন কী করবেন, বুঝতে পারছেন না। |
|
|
|
|
|