খোলামুখ কয়লাখনি গড়তে আসা ‘পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ’ বা পিপিপি সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র সোমবার থেকে আটকে রেখেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বীরভূমের দুবরাজপুরের লোবা পঞ্চায়েত এলাকার ঘটনা। ‘ডিভিসি-এমটা কোল মাইনস লিমিটেড’ নামের ওই পিপিপি সংস্থার বিরুদ্ধে জমি কেনা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী। স্থানীয় কৃষিজমি রক্ষা কমিটির ব্যানারে ওই বাসিন্দারাই লোবা ও পলাশডাঙা গ্রামের মাঝামাঝি একটি জায়গায় সংস্থাটির মাটি কাটার যন্ত্র সোমবার থেকে আটকে রেখেছেন। মঙ্গলবার পর্যন্তও যন্ত্রটিকে ছাড়া হয়নি। মঙ্গলবার রাতে দুবরাজপুরের সিআইয়ের নেতৃত্বে বড় পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায় যন্ত্রটিকে ছাড়াতে। কিন্তু গ্রামবাসীদের বাধা পেয়ে পুলিশ ফিরে যায়। গ্রামবাসীদের হুঁশিয়ারি, একমাত্র তাঁদের দাবিদাওয়া মানলেই যন্ত্রটিকে তাঁরা ছাড়বেন। অন্য দিকে সংস্থা কর্তৃপক্ষের দাবি, দাবিগুলি ‘অন্যায্য’। দুবরাজপুরের বিডিও গোবিন্দ দত্ত এ দিন বলেন, “আমার কাছে দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। সিউড়ির মহকুমাশাসক, পুলিশকে জানিয়েছি।”
লোবা অঞ্চলে কয়লা খনির জন্য মাটি ফেলে হিংলো নদীর গতি আটকে রাস্তা তৈরির অভিযোগও এই সংস্থার বিরুদ্ধে উঠেছিল সম্প্রতি। এলাকা ঘুরে নদীর গতিপথ ‘মুক্ত’ করার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান পরিবেশ-কর্মী সুভাষ দত্ত। আপাতত সেই রাস্তা তৈরির কাজ থমকে আছে।
লোবা পঞ্চায়েতের লোবা-সহ ১০টি মৌজায় প্রায় ৩,৫০০ একর জমিতে ওই খোলামুখ কয়লা খনি গড়ে ওঠার কথা। সে জন্য বেশ কিছু দিন আগে থেকে জমি কেনাও শুরু করেছে ‘ডিভিসি-এমটা’। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির অভিযোগ, যে পরিমাণ জমি ওই সংস্থাটির কেনার কথা ছিল, সেই পরিমাণ জমি সংস্থা কিনছে না। উপরন্তু বিক্ষিপ্ত ভাবে সামান্য দু-একটি মৌজার জমি কিনে ইতিমধ্যেই খনন কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিজমি রক্ষা কমিটির পক্ষে জয়দীপ মজুমদারের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত শিল্পনীতি অনুযায়ী উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন প্যাকেজ দিয়ে জমি কেনা হলে এবং প্রস্তাবিত খনির জন্য একলপ্তে জমি নেওয়া হলে আপত্তি ছিল না। কিন্তু তা না করে কিছু মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বিক্ষিপ্ত ভাবে জমি কিনে কাজ করতে চাইছে ওই সংস্থা। আমাদের আপত্তি সেখানেই।”
জয়দীপবাবুর আরও অভিযোগ, “শুধু তাই নয়, কিছু বড় চাষি বাদ দিলে বর্গাদার, পাট্টাদার, মৎস্যজীবী, খেতমজুরদের সঙ্গে আলোচনা না করে তাঁদের সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে খনন কাজ শুরু করার প্রতিবাদেই ওই মাটি কাটার যন্ত্র আটকানো হয়েছে। এলাকার মানুষই তা আটকেছেন।” এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন স্থানীয় কৃষিজীবী শেখ বাবলু, উদয় ঘোষ বা খেতমজুর দীনবন্ধু বাগদিরা। তাঁরা বলেন, “আটক করা যন্ত্রটির উপরে ১৮ দফা দাবি সংবলিত পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি মানা হলে তবেই যন্ত্রটিকে ছেড়ে দেওয়া হবে। না হলে নয়।” জয়দীপবাবু বলেন, “গ্রামবাসীরা পালা করে যন্ত্রটিকে পাহারা দিচ্ছেন।”
লোবা এলাকায় খোলামুখ খনি নির্মাণকারী ‘ডিভিসি-এমটা’র জয়দেব-খাগড়া প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্মল সরকারের অবশ্য দাবি, কিছু মানুষ তাঁদের ‘অন্যায্য’ দাবি মানানোর জন্যই এ সব করছেন। সংখ্যায় তাঁরা খুবই কম। জন প্রতিনিধি, স্থানীয় মানুষ, রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সঙ্গে হওয়া বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুসারেই সংস্থা ওই এলাকায় জমি কিনেছে। নির্মলবাবুর বক্তব্য, “আমাদের কেনা জমি থেকেই যন্ত্রটিকে নিয়ে গিয়ে জোর করে আটকে রেখেছেন কিছু গ্রামবাসী। ওই যন্ত্রটি রাস্তা তৈরি-সহ বিভিন্ন কাজে মাসখানেক ধরে এলাকায় রয়েছে। আমরা পুলিশ-প্রশাসনকে সব জানিয়েছি। যা করার তারাই করবে।” |