হাওয়া ঘুরতেই গ্রাম ছাড়তে হয়েছিল মঙ্গলকোটে নানা মামলায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতাকে। গত ১৩ মাস ফিরতে পারেননি। সপ্তাহ দেড়েক আগে কাটোয়া শহরে বাবার মুখাগ্নি করেছেন। কিন্তু কাল, বৃহস্পতিবার বাবার শ্রাদ্ধে তিনি গ্রামে আসতে পারবেন কি না, তা অনিশ্চিত।
মঙ্গলকোটে সিপিএমের ভাল্যগ্রাম শাখা সদস্য তথা সিটু-র মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের স্থানীয় শ্যামবাজার শাখা সম্পাদক অশোক ঘোষের বাড়ি খেঁড়ুয়া গ্রামে। গত বছর খেঁড়ুয়ায় তৃণমূল কর্মীর মা পূর্ণিমা মাঝি ও ব্রহ্মপুরে দিলীপ দাস খুনের ঘটনায় তিনি অভিযুক্ত। এ ছাড়াও বিরোধী সমর্থকদের বাড়িতে আগুন লাগানো বা লুঠতরাজের মতো ১৯টি অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। যার মধ্যে ২০০৯-এ সিপিএম নেতা খুনের পরে ধান্যরুখী গ্রামে যাওয়া কংগ্রেস বিধায়কদের তাড়া করার অভিযোগও রয়েছে। যদিও অশোকবাবুর দাবি, “সব অভিযোগ মিথ্যা।” সব মামলায় তিনি জামিনও পেয়ে গিয়েছেন। |
গত অক্টোবরে পূর্ণিমা মাঝি মারা যাওয়ার পরেই অশোকবাবুর মতো বেশ কিছু সিপিএম নেতা-কর্মী গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই থেকে সপরিবার মঙ্গলকোটেরই শ্যামবাজারে ছোট বোনের বাড়িতে রয়েছেন তিনি। ৮ ডিসেম্বর তাঁর বাবা কাঙালিচরণ ঘোষ (৮৯) মারা যান। খেঁড়ুয়ায় শ্মশান না থাকায় তাঁকে কাটোয়া শহরে নিয়ে দাহ করা হয়। বড় ছেলে অশোকবাবুই মুখাগ্নি করেন। কিন্তু তিন দিন পরে গ্রামে ফিরে ফের হামলার মুখে পড়েন বলে অভিযোগ।
অশোকবাবুর কথায়, “মৃত্যুর তিন দিনের মাথায় দুপুরে পুকুরপাড়ে বেনা গাছ পুঁতে জল দেওয়ার পারিবারিক নিয়ম রয়েছে। সে কারণে মঙ্গলকোট থানা ও তৃণমূল নেতা অপূর্ব চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলে গ্রামে গিয়েছিলাম।” তাঁর অভিযোগ, “বাড়িতে ঢুকতেই চারপাশ থেকে বোমাবাজি শুরু হয়। গাছ পুঁতেই গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দেয় তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা।” মঙ্গলকোট থানায় সাত জনের বিরুদ্ধে তিনি আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাড়া করার অভিযোগ করেছেন। কাটোয়া মহকুমাশাসকের কাছেও অভিযোগ জানান তিনি। পারলৌকিক কাজ যাতে করতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার আর্জিও জানিয়েছেন।
ব্লক তৃণমূল নেতা, মঙ্গলকোট বিধানসভা আসনে মাত্র শ’দেড়েক ভোটে হেরে যাওয়া অপূর্ব চৌধুরী অবশ্য হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “থানায় অশোকবাবুর সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমার সঙ্গে কথা বলেই উনি গ্রামে যান। পরে নিজেই ফিরে গিয়েছেন। কেন তিনি এখন হামলার অভিযোগ করছেন, জানি না।” অশোকবাবু গ্রামছাড়া হলেও তাঁর ভাই সনৎবাবু এখনও গ্রামেই আছেন। বাবার মৃত্যুর পরে তাঁর বোনেরাও গ্রামে এসেছেন। কিন্তু তাঁদের কেউ বিরক্ত করেনি। অশোকবাবুর ব্যাখ্যা, “আমার ভাইবোনেরা রাজনীতি করে না। আমার মতো সিপিএম কর্মীদেরই ঘরছাড়া করা হয়েছে।”
ঘরছাড়াদের ফেরানোর দাবিতে ইতিমধ্যেই বারবার প্রশাসনের কাছে দরবার করেছে সিপিএম। শুধু খেঁড়ুয়া গ্রামেরই ৮৫ জন এখনও গ্রামছাড়া। সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল সম্পাদক দুর্যোধন সরের আক্ষেপ, “ওঁদের ফেরানোর ব্যাপারে প্রশাসনের হেলদোল নেই।” কাটোয়া মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম অবশ্য বলেন, “পুলিশকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।” কাটোয়ার ওসি দীপঙ্কর সরকারের আশ্বাস, “বাবার পারলৌকিক কাজে অশোকবাবু যাতে ফিরতে পারেন, তার ব্যবস্থা হবে।” |