উঠছে মনোরোগের কথাও
চাষির অপমৃত্যুতে ফের ধান-সঙ্কট আর ঋণের ছায়া
ফের এক চাষির আত্মহত্যার ঘটনায় ধানের দাম না পাওয়া এবং মহাজনি ঋণের অভিযোগ উঠল। বর্ধমানে ইতিমধ্যেই পরপর কয়েকটি এই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ক্ষেত্রে চাষির দীর্ঘ দিনের মানসিক রোগ এবং চিকিৎসার কথাও জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার ভোরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় ভাতারের বেলেন্ডা গ্রামের চাষি বরুণকুমার পালের (৪০)। আগের রাতে তিনি কীটনাশক খেয়েছিলেন বলে পুলিশের অনুমান। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, বরুণবাবু ন’বিঘে জমিতে খরিফ ধান চাষ করেছিলেন। কম-বেশি ১২০ বস্তা ধান পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাজরা পোকার আক্রমণে মাত্র ৪০ বস্তা পান। তা-ও তিনি সরকারি সহায়ক মূল্যে বিক্রি করতে পারেননি।
জেলাশাসকের নির্দেশে এ দিন গ্রামে তদন্তে গিয়েছিলেন ভাতারের বিডিও অমর্ত্য চক্রবর্তী। সরকারি মূল্যে ধান কেনার দাবিতে গ্রামবাসী তাঁকে ঘেরাও করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত মরসুম থেকেই গ্রামের মহাজনদের কাছে বরুণবাবুর দেনা ছিল। এ বার তা আরও বেড়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়ায়। জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “বিডিও জেনেছেন, মৃতের বেসরকারি ঋণ ছিল। তার উপরে মাজরা পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট
নিজস্ব চিত্র।
হওয়ায় ঋণ শোধ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সে কারণেই তিনি আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন।”
ভাতারের তৃণমূল বিধায়ক তথা বিধানসভার কৃষি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বনমালী হাজরা অবশ্য এই ধারণার সঙ্গে সহমত নন। বরুণবাবুর মামা বিনয় পালের মতে, তাঁর ভাগ্নে মোট ন’বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু বনমালীবাবুর বক্তব্য, “খোঁজ নিয়ে দেখেছি, ওই চাষির মাত্র আড়াই-তিন বিঘে জমি ছিল। কিন্তু তাতে চাষ করতে ৫০ হাজার টাকা দেনা হওয়ার কথা নয়। ওই চাষি কেন আত্মঘাতী হয়েছেন, বলতে পারব না। তবে উনি সরকারি দামে ৩০-৩৫ বস্তা ধান বিক্রি করতে পেরেছিলেন।”
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, বছর তিনেক আগে বরুণবাবুর স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে আছে। স্ত্রীর অপমৃত্যুর পরে বেশ কিছু জমিজমা অন্য আত্মীয়দের দিতে হয়েছিল বরুণবাবুকে। এর পর থেকে তিনি মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসাও করাতেন। বনমালীবাবুর দাবি, “এখনও কোনও চাষির অপমৃত্যু ঘটলেই সরকারকে বিপাকে ফেলতে ধান বিক্রি হয়নি বলে অপপ্রচার চলছে।”
বরুণবাবুর প্রতিবেশী শেখ আনোয়ার, শেখ বাবলুরা বলেন, “মাজরা পোকার আক্রমণে এলাকায় ধানের ফলন কমেছে। তার উপরে এলাকার কোন চালকলই সরকারি সহায়ক মূল্যে কিনতে চাইছে না। আমাদের সকলেই আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত।” প্রসঙ্গত, নভেম্বরে শেষে ধানে মাজরা পোকা লাগার খবর কৃষি দফতরকে দিয়েছিলেন বরুণবাবুর দাদা অরুণকুমার পাল। যা পেয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন ভাতারের সহকারী কৃষি আধিকারিক বিপ্লবকুমার কার্ফা। কিন্তু তত ক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে।
স্থানীয় তৃণমূল নেতারা অবশ্য দাবি করেন, বরুণবাবু তাঁদেরই সমর্থক ছিলেন। চালকলগুলিকে সহায়ক মূল্যে সমস্ত চাষির থেকে ধান কিনতে হবে বলেও তাঁরা দাবি তুলেছেন। এ দিন বিডিও গ্রামে গেলে স্থানীয় চাষি দেবপ্রসাদ বৈরাগ্য, কাদের মল্লিক, রবি কার্ফারা তাঁকে ঘিরে ধরে একই দাবি জানান। বিডিও তাঁদের বলেন, “চাষিরা এলেই ধান কেনার জন্য সরকারি টোকেন দিয়েছি। তা সত্ত্বেও চালকলগুলি যদি ধান না কেনে, তদন্ত করতে হবে। আপনারা নির্দিষ্ট অভিযোগ জমা দিন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.