একের পর এক কোলিয়ারিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন খনিকর্মীরা। পাম্প না চলায় পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়েছে। অন্ধকারে ডুবে রয়েছে আবাসনগুলি। আতঙ্কে ভুগছেন কয়েক হাজার আবাসিক।
রবিবার দুপুর থেকে ইসিএলের নানা কোলিয়ারিতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করতে শুরু করেছে ডিপিএসসি। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ১২টি কয়লা খনির উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আরও অন্তত ২২টি খনির উৎপাদন মার খাচ্ছে। বিদ্যুতের অভাবে নিষ্প্রদীপ অবস্থায় রয়েছেন কোলিয়ারি সংলগ্ন আবাসনগুলির কয়েক হাজার বাসিন্দা। বেশ কিছু এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় ডিপিএসসি-র বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে পিটিশন দাখিল করেছেন ইসিএল কর্তৃপক্ষ। সমস্যা মেটানোর আবেদন জানিয়ে আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসককে চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা। অতিরিক্ত জেলাশাসক বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “আমি ডিপিএসসি কর্তৃপক্ষকে দ্রুত সমাধানের রাস্তা বের করার জন্য একটি চিঠি লিখেছি।” বিশ্বজিৎবাবু জানান, এই বিষয়টি দুই সংস্থার অভ্যন্তরীণ সমস্যা। দুই সংস্থার কর্তৃপক্ষকে আলোচনায় বসে সমস্যা মেটাতে হবে। |
ইসিএল কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার ফের অভিযোগ তোলেন, পাওনা চাওয়া এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করা, দু’টিই নিয়ম বহিভূর্ত ভাবে করেছে ডিপিএসসি। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “আমরা ডিপিএসসি-র বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছি। আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছি।” তিনি দাবি করেন, ডিপিএসসি তাঁদের কাছে যে পাওনা বাবদ ৬৩ কোটি টাকার ‘ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি’ চেয়েছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি। তিনি আরও জানিয়েছেন, আদালতে যাওয়ার আগে তাঁরা অনেক বার সমস্যা মেটানোর জন্য ডিপিএসসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক ও আলোচনা করেছেন। কিন্তু ডিপিএসসি কোনও কিছুতেই কর্ণপাত না করায় তাঁরা আদালতে যেতে বাধ্য হলেন।
নিজেদের অবস্থানে অনড় ডিপিএসসি কর্তৃপক্ষও। সংস্থার প্রেসিডেন্ট (কর্পোরেট) সোমেশ দাশগুপ্ত বলেন, “বকেয়া টাকা না পেলে কয়লা কিনতে পারব না। কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও না। আমরা সঙ্কটে পড়ব। শ্রমিক-কর্মীরা বেকার হয়ে যাবেন। সুতরাং, বকেয়া টাকা ও কয়লা পাওয়া নিশ্চিত না হলে আমরা সংযোগ দিতে পারব না।” সোমেশবাবু জানিয়েছেন, সমস্যা মেটানোর আবেদন সংক্রান্ত একটি চিঠি তাঁরা আসানসোলের অতিরিক্ত জেলাশাসকের কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা যে নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করেছি, তা অতিরিক্ত জেলাশাসককে লিখে জানাচ্ছি।”
কয়লার দাম বকেয়া থাকার দাবিতে মাসখানেক আগেই ডিপিএসসি-র চিনাকুড়ি কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসিএল। এর জেরে ওই কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ থাকায় আতঙ্কে ভুগছেন শ্রমিক-কর্মীরা। এ বার ইসিএলের খনিতে ডিপিএসসি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করায় আতঙ্কিত খনিকর্মীরা। কুলটির সোদপুর এরিয়ার পাটমোহনা অঞ্চলের বাসিন্দা বিমান সরকার বলেন, “রবিবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎ নেই। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারছে না। পাম্প না চলায় পানীয় জলের অভাব দেখা দিচ্ছে।” অবিলম্বে সমস্যা মিটিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরানো হোক, দাবি শ্রমিক-কর্মীদের। |