প্রায় দেড় কোটি টাকা নয়ছয়ের মামলা-সহ নানা বিষয়ে উপাচার্য অরুণাভ বসু মজুমদারের সঙ্গে কর্মসমিতির বেশ কয়েক জন সদস্যের মতবিরোধ বাড়তে থাকায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, প্রায় দেড় কোটি টাকা আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দিলীপ সরকারের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে তাঁকে সাসপেন্ড করার পরেই কর্মসমিতির একাংশের সঙ্গে মতবিরোধের সূত্রপাত। এ বার কয়েক জন সদস্যের আনা প্রস্তাব মেনে কয়েকটি বিষয় কর্মসমিতির আলোচ্য সূচিতে উপাচার্য অন্তর্ভুক্ত করতে না-চাওয়ায় বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। বিষয়টি গড়িয়েছে আচার্য তথা রাজ্যপালের অফিস পর্যন্ত। কর্মসমিতির ক্ষুব্ধ সদস্যদের অভিযোগের ব্যাপারে উপাচার্যের দফতর থেকেও ব্যাখ্যা পৌঁছেছে আচার্যের কাছে। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হলে সে-ক্ষেত্রে দায় কোথায় বর্তাবে, কে বা কারা লাভবান হবেন সেই ব্যাপারেও সব মহলকে অবহিত করেছে উপাচার্যের দফতর। এই ব্যাপারে উপাচার্য বলেন, “কর্মসমিতির বৈঠকের আলোচ্য সূচি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমকে আগাম কিছু বলা সম্ভব নয়। এটুকু বলতে পারি, বিধি মেনেই সব কাজ হচ্ছে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ৫টি বিষয় নিয়ে পৃথক ভাবে আলোচনা চেয়েছেন নিখিল গুহ, রূপন সরকার, অজিত রায়, মহেন্দ্র রায়, মলয় করঞ্জাই-সহ ৭ জন। যাঁদের মধ্যে নিখিলবাবু দার্জিলিং জেলা সিপিএমের প্রবীণ নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি দীর্ঘদিন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান ছিলেন। নিখিলবাবু দু’টি বিষয়ে আলোচনা চান। একটি হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র-সহ অন্যান্য গোপনীয় কাজ যে মুদ্রণ সংস্থা করে, ২০০৯ সালে তাঁদের কত টাকা বিল দেওয়া হয়েছে তার আলোচনা। দ্বিতীয় বিষয় হল, ১ এপ্রিল, ২০১০ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মামলা চালাতে কত টাকা খরচ হয়েছে সেই সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা। আর এক সদস্য রূপনবাবু পিএইডি সংক্রান্ত কাজকর্মে দেরির বিষয়ে আলোচনা চেয়ে চিঠি দেন। অজিতবাবু-সহ ৫ জন সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড বিভাগের অফিসার ইন চার্জের ইস্তফা প্রসঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেন। পঞ্চম প্রস্তাবটি শিলিগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ তথা বাম মনোভাবাপন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতা হিসেবে পরিচিত মলয় করঞ্জাই দেন। সেটি হল, কর্মসমিতিতে আমন্ত্রিত সদস্যদের আইনি বৈধতা নিয়ে আলোচনা হোক।
কোনও প্রস্তাবই উপাচার্য আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত করেননি। উপাচার্যের দফতর সূত্রের খবর, বিল সংক্রান্ত বিষয়টি ফিনান্স কমিটির মাধ্যমেই পেশ করা হয়ে থাকে। মামলা চালানোর খরচের ব্যাপারে আলোচনার অনুমতি দেওয়া হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে সমিতি কোনও ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিলে নামী ও অভিজ্ঞ আইনজীবী নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই। পাশাপাশি, কেউ নিজ হাতে ইস্তফা দিলে তা গ্রহণ করে অনুমোদনের ক্ষমতা উপাচার্যের রয়েছে বলেও ওই কয়েক জন অফিসার জানান। তাঁরা জানান, সে ক্ষেত্রে কর্মসমিতিতে ইস্তফাপত্র নিয়ে আলোচনার অনুমতি দেওয়াটা বাধ্যতামূলক নয়। মলয়বাবুর প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন জানান, প্রায় ৮ বছর ধরে একাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে কর্মসমিতিতে থেকেছেন। তা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়নি। এখন আপত্তি তোলায় আমন্ত্রিত সদস্যদের ডাকার রেওয়াজ উপাচার্য তুলে দেওয়ার কথা ভেবেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে।
এই অবস্থায় উপাচার্য বনাম কর্মসমিতির সদস্যদের একাংশের মতবিরোধ আদৌ মিটবে? নাকি দু’টি গোষ্ঠীর মতবিরোধের জেরে উত্তরবঙ্গের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অচলাবস্থা দেখা দেবে? এই দু’টি প্রশ্নেই এখন বিশ্ববিদ্যালয় মহলে চলছে নানা জল্পনা। |